ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেয়ারবাজারের টাকায় শিল্পায়নে ঝুঁকি কম

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

শেয়ারবাজারের টাকায় শিল্পায়নে ঝুঁকি কম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংক থেকে ঋণের মাধ্যমে শিল্পায়ন করা হলে ঝুঁকি বাড়ে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। তবে শেয়ারবাজার থেকে অর্থায়নের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কমে। বুধবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে ‘দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নে পুঁজিবাজারের ভূমিকা : বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) এই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএমবিএর সভাপতি মোঃ ছায়েদুর রহমান। শিল্পমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে শিল্পায়ন এখনও ব্যাংকনির্ভর। ফলে ব্যাংকে ঝুঁকি বাড়ছে। তবে এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শেয়ারবাজার থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে শিল্পায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, ২০১০ সালে শেয়ারবাজার অস্থিতিশীল হয়। পৃথিবীর সবদেশেই কম-বেশি এমন কারসাজি হয়। তবে বর্তমান বিএসইসি তা কাটিয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে টেকসই শেয়ারবাজার গঠন করেছে। এছাড়া শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে স্টক এক্সচেঞ্জে মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণ (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) আইন, পাবলিক ইস্যু রুলস, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইনসহ বিভিন্ন সংস্কার করা হয়েছে। সরকারী বিভিন্ন কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনয়নে এরই মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেছেন, শেয়ারবাজারে আসতে ইচ্ছুক কোম্পানিগুলোর যোগ্যতা অনুযায়ী দর পাওয়ার লক্ষ্যে পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধন করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই রুলসে প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর জন্য বুক বিল্ডিং সিস্টেমস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির অপব্যবহার হচ্ছে। বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, বুক বিল্ডিং নিয়ে অপব্যবহার রোধে বিএসইসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে ৭টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়াকে বিবেচনায় নিয়ে সমালোচনা করা ভুল হবে। এক্ষেত্রে বন্ড ও রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে টাকা উত্তোলনকেও বিবেচনায় নিতে হবে। এ সময় আইপিও বেশি অনুমোদন দিলে মার্কেট মেকার থেকে শুরু করে অনেকে তারল্য সঙ্কট হয় বলে সমালোচনা করেন জানান তিনি। এছাড়া ভাল কোম্পানি কম হয় বলেও সমালোচনা করা হয়। তাই সবকিছু বিবেচনা করেই আইপিও অনুমোদন দিতে হয় বলে যোগ করেন তিনি। খায়রুল হোসেন বলেন, ইস্যু ম্যানেজারদের উচিত শেয়ারবাজারে ফান্ডামেন্টাল কোম্পানিকে আনার জন্য উৎসাহিত করা। একইভাবে দুর্বল কোম্পানিকে নিরুৎসাহিত করা। যাতে শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তিনি বলেন, অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের উন্নয়ন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন বিনির্মাণে শেয়ারবাজার ভূমিকা রাখছে। এছাড়া শেয়ারবাজারের মাধ্যমে শিল্পায়ন সুবিধাজনক। যাতে ব্যাংক ঋণের ন্যায় মাসিক হারে কিস্তি প্রদানের চাপ থাকে না। সভাপতির বক্তব্যে ছায়েদুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকা দরকার। যাতে ভবিষ্যতে একক সিদ্ধান্তে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের সনদ বাতিল ও তিতাস গ্যাসের ট্যারিফ কমানোর মতো ঘটনা না ঘটে। তিনি আরও বলেন, বুক বিল্ডিংয়ে কোম্পানির প্রিমিয়াম নির্ধারণে সবাইকে সঠিক আচরণ করতে হবে। এ সময় তিনি শেয়ারবাজারের উন্নয়নে কিছু সুপারিশ করেন। সেমিনারে অসুস্থতার কারণে প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উপস্থিত হতে পারেননি। এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী। এছাড়া সেমিনারে শিল্পোদ্যোক্তা, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধি, দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ ও শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
×