ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রণ শাহরিয়ার অভিনয়ে পথচলা ভালবেসে -আকিল জামান ইনু

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

রণ শাহরিয়ার অভিনয়ে পথচলা ভালবেসে  -আকিল জামান ইনু

রণ শাহরিয়ার। তরুণ প্রজন্মের উদীয়মান, প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেতা। জন্ম ৭ নবেম্বর, ১৯৮১, ঢাকা। প্রকৌশলী পিতার বদলির চাকরির সুবাদে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশময়। পরিচিত হয়েছেন বিভিন্ন জনপদের মানুষের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত থিতু ঢাকায়। আইইউবি থেকে বিবিএ শেষে সিঙ্গাপুর থেকে নিয়েছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা। রণ’র অভিনয়ের প্রেমে পড়া পিতার সিনেমা প্রেম থেকে। অফিস ফেরত পিতা প্রতিদিন নিয়ম করে বসে যেতেন সিনেমা দেখতে। সঙ্গী রণ। সেই থেকে প্রেমে পড়া দিলীপ কুমার আর অমিতাভের অভিনয়ের, সময়ের সঙ্গে বেড়েছে সে প্রেম। তালিকায় যোগ হয়েছে আল প্যাচিনো, এডি মরফি, মর্গাট ফ্রিম্যান, হিথ লিজার, খ্রিশ্চিয়ান বেইলের মতো অভিনেতাদের নাম। অভিনয়ের পথ চলাটা রণের জন্য খুব সহজ ছিল না। আপত্তি ছিল পারিবারে । তাই কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ ছিল অভিনয় জীবন। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে ২০০৫-এ পুরনো ভালবাসার টানে যোগ দেন আসিফ মুনীরের ‘বঙ্গরঙ্গ’-এ। প্রথমেই তাদের প্রযোজনায় মঞ্চে ‘মেয়ে’ নাটকে অভিনয় এক সঙ্গে ৪টি চরিত্রে। জীবিকার তাগিদ আবার যতি টানে অভিনয় জীবনে। ২০০৬-এ যোগ দেন ‘রবি’তে। কর্মব্যস্ততা ঠেলে দেয় অভিনয় থেকে দূরে। ২০১৩তে তিনি তখন হেড অব ডিস্ট্রিবিউশিন এ্যান্ড লজিস্টিক। কর্মক্ষেত্রে সাফল্য হাতের নাগালে। তবু যেন প্রাণের সাড়া পাচ্ছিলেন না। বুকের গভীরে কুড়ে খাচ্ছিল অভিনয় থেকে দূরে থাকার বেদনা। অতঃপর নিশ্চিত ভবিষ্যত উপেক্ষা করে চাকরি ছেড়ে দেয়া। ততদিনে অভিনয়কে মেনেছেন জীবনের ধ্রুবতারা। ২০১৫তে যোগ দেন গাজী রাকায়েতের ‘চারুনীড়ম’-এ। নতুন করে অভিনয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু। রাকায়েতের পরামর্শে অংশ নেন বাংলাদেশ সিনেমা এ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট আয়োজিত অভিনয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায়। ছোট পর্দায় অভিনয় নিয়ে রণ জানালেন শুরুতেই এক মজার অভিজ্ঞতার কথা। তার প্রথম অভিনয় ডিবি সিরিয়ালে সংলাপবিহীন এক পাসিং শট। ভোর ৬টা থেকে বসেছিলেন রাত ১টা পর্যন্ত। রণ দমে যাননি। এরপর ডিবি সিরিয়ালেই ছোটখাটো দুয়েকটা চরিত্রে অভিনয়। রণ তার অভিনয় জীবনের আজকের অবস্থানের জন্য দু’জন মানুষের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। একজন গাজী রাকায়েত ও অপরজন গোলাম সোহরাব দোদুল। তার অকপট স্বীকারোক্তি যা শিখেছেন তা এ দু’জনের কাছেই। দোদুলের সঙ্গে তার প্রথম কাজ ‘সংসার’ নাটকে চার পর্বে। তারপর একে একে আরও ৮টি নাটক, ধারাবাহিক ও টেলিফিল্মে কাজ করেছেন দোদুলের সঙ্গে। এর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত টেলিফিল্ম ‘ছিন্ন প্রেম’। রণ’র ভাষায় সেটিই বড় পরিসরে তার প্রথম কাজ। কাজ করেছেন জামান মল্লিকের রাইটার ও চুপ কথা নাটকে। আরটিভিতে প্রচারের অপেক্ষায় নতুন প্রজন্মের অন্যতম মেধাবী নির্মাতা সেলিম রেজার পরিচালনায় রণ অভিনীত নাটক ‘নীল কাদা আবরণ।’ সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন দুটি বাংলা চলচ্চিত্রে। অভিনয় নিয়ে নিজের ভাবনা বিষয়ে রণ খুব সহজেই বললেন, ভালবাসা। অর্থাৎ অভিনয়ের প্রতি নিখাঁদ ভালবাসাই পারে একজন অভিনেতাকে পূর্ণতা দিতে। পাশাপাশি একজন ভাল অভিনেতা সব সময়ই শিখবেন। নিজেকে ভেঙ্গে নতুন করে গড়বেন চরিত্রের প্রয়োজনে। আত্মোন্নতির জন্য পড়াশোনার কোন বিকল্প নেই বলেই রণ’র ধারণা। কেবল অভিনয় সম্পর্কিত নয়, একজন ভাল অভিনেতার শিল্প, সাহিত্য, দর্শন সব বিষয়েই ধারণা থাকতে হবে। আর কবিতা পাঠের নেই কোন বিকল্প। প্রচুর পড়েন রণ, যদিও নির্দিষ্ট করে প্রিয় লেখকের নাম বলতে বেজায় আপত্তি। বাংলাদেশে রণ অভিনয়ে আদর্শ মানেন প্রয়াত নায়করাজ রাজ্জাক আর হুমায়ুন ফরিদী। তার ধারণা বাংলাদেশে অভিনয় শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন হুমায়ুন ফরিদী। অনেক বেশি মেধা আর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা হুমায়ুন ফরিদীকে যথাযথ ব্যবহার করতে পারিনি। এই অপারগতা তাকে কষ্ট দেয়। রণ নিজেকে একজন অভিনেতা ভাবতেই পছন্দ করেণ। চরিত্রের দৈর্ঘ্য নয় বরং চরিত্রটিকে যথাযথ রূপায়নেই একজন অভিনেতার সার্থকতা বলে তার বিশ্বাস। অভিনয় ভালবেসে রণ’র পথচলা সার্থক হোক।
×