ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইনের প্রয়োগ চাই

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

আইনের প্রয়োগ চাই

চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ এবং চলচ্চিত্রগ্রাহক ও সাংবাদিক মিশুক মুনীর ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের জোঁকা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ক্ষেত্রে অপরাধীর শাস্তি হওয়ার নজির যেমন কম, তেমনি নেই কোন ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা। আইনজীবীরা বলছেন, মোটর ভেহিক্যাল অ্যাক্টে সে রকম ক্ষতিপূরণের কথা বলাও নেই। ফৌজদারি আইনে অপরাধ এবং শাস্তির কথা বলা থাকে কেবল, আর ক্ষতিপূরণ হলো দেওয়ানি বিষয়। চাইলে যে কেউ সেই সুযোগ নিতে পারেন। কিন্তু যে ক্ষতিপূরণের জন্য ২৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে সাংবাদিক মন্টুর পরিবারকে, তেমন দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষতিগ্রস্তরা পড়তে চান না। কে ক্ষতিপূরণ দেবে এবং কাকে দেবে সে সব নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে বলা নেই সড়ক পরিবহন আইন ২০১৫ তেও। যদিও আইনটি এখনও খসড়া অবস্থায় রয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি খসড়ার কাজ সম্পন্ন হলেও এখন পর্যন্ত আইনটি আলোর মুখ দেখেনি। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, প্রাণের কোন ক্ষতিপূরণ হয় না। তার পরও পরিবারের যে আর্থিক ক্ষতি হয়, সেটা পাওয়ার জন্য যে দীর্ঘদিনের লড়াই সেটি আইনীভাবে দ্রুত করার সময় এসেছে। একজন কর্মক্ষম ব্যক্তি সারাজীবনে যে পরিমাণ আয় করতে পারতেন, সেটা বিবেচনায় নিয়ে অপরাধীর কাছ থেকে বিচারিক প্রক্রিয়ার শুরুতেই আর্থিক ক্ষতিপূরণ নেয়ার ব্যবস্থা করা জরুরী। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির ‘বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন-২০১৫’ অনুযায়ী ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় আট হাজার ৬৪২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২১ হাজার ৮৫৫ জন। মোট দুর্ঘটনা হয়েছে ছয় হাজার ৫৮১টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহতের প্রায় ৫২ ভাগই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দেশের ১০টি জাতীয় দৈনিক, ৬টি স্থানীয় সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলসমূহে প্রচারিত সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ নিয়মিত মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন বানানো হয়েছে। এ বছর শুরুতেই ৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের বিভিন্ন মহাসড়কে আলাদা দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত এবং আরও অন্তত ৩৪ জন আহত হয়েছেন। কিছু দিন আগে রাজধানীতেই দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনা ঘটেছে। ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ জাতিসংঘে অঙ্গীকার করেছিল। এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে বাংলাদেশ সইও করেছে। এর পরও যথাযথ উদ্যোগের অভাবে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ২০১৪ এর তুলনায় বেড়েছে। ২০১৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছিল ৫ হাজার ৯২৮টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৮ হাজার ৫৮৯ জন। আর আহত হয়েছিলেন ১৭ হাজার ৫২৪ জন। এত উদ্যোগের পরও বাস্তবায়নের অভাবে সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না উল্লেখ করে এর প্রতিরোধে মন্ত্রণালয়ে আলাদা সেল গঠন ও দুর্ঘটনায় শিকার ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ আদায়সহ যাত্রী বীমা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা)। অশিক্ষিত চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, জনগণের অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত গতি, আইন ও তার যথাযথ প্রয়োগের অভাবই হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ আদায় করলে এবং আইন যথাযথ প্রয়োগ করলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে। গণবিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থেকে
×