ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতকরণ

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতকরণ

প্রতিদিনের সংবাদপত্র খুললে সড়ক দুর্ঘটনার খবর চোখে পড়বেই। তবে সড়ক দুর্ঘনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ লাভ খবরে দেখা যায় না। সড়ক দুর্ঘটনা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, এটাকে জাতীয় একটি সমস্যা বললে অত্যুক্তি করা হবে না। মানুষের জীবনের মূল্য যেন কমে এসেছে। তবে এটাও সত্য মানুষের জীবনের মূল্য অর্থের দন্ডে মূল্যায়ন করা যায় না। দুর্ঘটনা অপ্রত্যাশিত এবং অনিশ্চিত। যে কোন সময়ে দুর্ঘটনার কালো ছোবল মানুষের জীবনে নেমে আসতে পারে। একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না বয়ে আনে। ফলে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন দুর্ঘটনার ফল ভোগ করে থাকে। দুর্ঘটনার নানাবিধ কারণ বিদ্যমান। ব্যক্তির অসচেতনতাকেই দুর্ঘটনার জন্য সাধারণত দায়ী করা হয়। একটি ভুলের কারণে মনুষ্য জীবন চিরতরের জন্য বিপর্যস্ত হতে পারে। বিগত কয়েক বছর যাবত সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু এবং পঙ্গুত্ব বরণ বিপজ্জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১২ হাজার জন মৃত্যুবরণ করে এবং ৩৫ হাজার জন পঙ্গুত্ব বরণ করে। মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের এই পরিসংখ্যান দেশের জন্য এক ভয়াবহ বিষয়। প্রতিটি সড়ক, মহাসড়কের যানবাহন যেন মৃত্যুর হাতছানি দিচ্ছে। মুহূর্তেই একজন জলজ্যান্ত ব্যক্তির স্বপ্ন এবং আশাকে ধ্বংস করে দিতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা। তাই সড়ক দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যুবরণকে বরং হত্যার শামিলই বলা চলে। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ১১ জুলাই চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪ জন স্কুলছাত্রের মৃত্যুবরণ এখনও আমাদের শোকাহত করে। বাংলাদেশের প্রখ্যাত চলচিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনিরসহ আরও ৩ জনের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ আমাদের বাংলাদেশের চলচিত্র অঙ্গনের যে ক্ষতি সাধন করেছে তা এখনও পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও সম্প্রতি বাংলাদেশ হাইকোর্ট তারেক মাসুদের পরিবারকে এই দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে। তবে তা অনেক দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে যায়- পরিবারের একজনের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ কি টাকার অঙ্কের সঙ্গে তুলনা করা যায়? অবশ্যই তা যায় না। তবে পরিবারের উপার্জনশীল ব্যক্তির মৃত্যুবরণে পরিবারের আর্থিক সঙ্কটে ক্ষতিপূরণ প্রদান অবশ্যই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ যদি বাড়িয়ে তা দিতে বাধ্য করা হয় তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও কমানো সম্ভবপর হবে। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত কতশত সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরী। দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেককে নিরাপদ সড়ক বিনির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে। চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ১ ডিসেম্বর ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামক আন্দোলনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার মধ্য দিয়ে মানুষের সড়কপথে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতকরণে কাজ করে যাচ্ছেন। আর এক্ষেত্রে সরকারের যথাযথ সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ পেতে ও সড়ক দুঘটনা হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশ যেভাবে উন্নতির শিখরে অগ্রসরমান সেখানে এ রকম সড়ক দুর্ঘটনাকে বিয়োগান্তক বলার পাশাপাশি তা অগ্রহণীয় হিসেবে বিবেচ্য হতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের নিয়ম চালু হলে সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তি যাতে ক্ষতিপূরণ পেতে ঝামেলার সন্মুখীন না হয় সেদিকে দৃষ্টি দেয়া জরুরী প্রয়োজন। বনানী, ঢাকা থেকে
×