এক গবেষণায় দাবি করা হচ্ছে জিঙ্কো বিলোবা নামে একটি গাছের ভেষজ নির্যাস স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীর মস্তিষ্ক আবার কার্যক্ষম করে তুলতে সাহায্য করতে পারে। ব্রিটেনে কোন কোন দোকানে এই ভেষজ ওষুধ পাওয়া যায়। তবে চীনে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং অবসাদের চিকিৎসায় এই ভেষজ ওষুধ ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। চীনে ৩শ’ ৩০ জন স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীর ওপর ছয় মাস ধরে এক পরীক্ষামূলক চিকিৎসা চালিয়ে গবেষকরা দেখেছেন অসুখের পর যাদের এই ওষুধ দেয়া হয়েছে তাদের মস্তিষ্ক ভাল কাজ করতে পারছে। তবে কোন কোন বিশেষজ্ঞ বলছেন ওই রোগীদের মস্তিষ্কের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জিঙ্কো বিলোবা একা দায়ী কী না তা খুব জোর দিয়ে এক্ষুনি বলা সম্ভব নয়।
অনলাইন সাময়িকী স্ট্রোক এ্যান্ড ভাসকুলার নিউরোলজিতে সম্প্রতি গবেষণাটি ছাপা হয়েছে। গবেষণায় অবশ্য বলা হয়েছে, এ বিষয়ে আরও ব্যাপক ও দীর্ঘ সময় নিয়ে পরীক্ষামূলক চিকিৎসা ও গবেষণা চালানো দরকার। চীনের পাঁচটি হাসপাতাল থেকে রোগীদের নিয়ে নানজিং ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল এই গবেষণা চালানো হয়। স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই ওই ৩ শ’ ৩০ জন রোগীকে এই ওষুধ খাওয়ানো হয়। এসব রোগীর গড় বয়স ছিল ৬৪ এর কোঠায়। এদের মধ্যে অর্ধেক রোগীকে এ্যাসপিরিন ট্যাবলেটের পাশাপাশি প্রতিদিন জিঙ্কো বিলোবা দেয়া হয় আর বাকি অর্ধেককে শুধু এ্যাসপিরিন ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। স্ট্রোকের সময় মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোতে রক্তের সরবরাহ ঠিকমত হয় না, যার ফলে স্মৃতি নষ্ট হয় এবং স্ট্রোক থেকে সেরে উঠা রোগীরা সঠিকভাবে সব কাজ করতে পারে না। গবেষকদের উদ্দেশ্য ছিল যে এ্যাসপিরিন বড়ির সঙ্গে জিঙ্কো বিলোবা খাওয়ালে স্ট্রোকে আক্রান্ত মস্তিষ্কের ক্ষতি সামলে ওঠা সম্ভব হয় কী না। এর আগে প্রাণীদের ওপর পরীক্ষায় দেখা গেছে জিঙ্কো বিলোবা মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে স্নায়ু কোষের মৃত্যু ঠেকাতে পারে। যার কারণ সম্ভবত মস্তিষ্কের ধমনীগুলোতে রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে এই জিঙ্কো বিলোবা । গবেষণায় আরও দেখা গেছে, জিঙ্কো বিলোবা খাওয়ার পর রোগী কথা বলার জড়তা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে এবং পেশীর শক্তি অনেক দ্রুত ফিরে পেতে সক্ষম হয়েছে। তবে গবেষকরা স্বীকার করেছেন দীর্ঘ সময় তারা রোগীদের পর্যবেক্ষণ করেননি এবং রোগীরা জানতেন কাকে কোন দলে রেখে পরীক্ষামূলক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে, যা হয়ত ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলে থাকতে পারে। জিঙ্কো বিলোবা এক ধরনের প্রাচীন প্রজাতির গাছ। গবেষকরা বলছেন যে নির্যাস তারা এই গবেষণায় ব্যবহার করেছেন তাতে ক্ষতিকর রাসায়নিকের মাত্রা কম ছিল। পরীক্ষার সময় কম পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। গবেষকরা বলেছেন তারা এই গবেষণায় যে ফল পেয়েছেন তাতে তারা আশাবাদী এবং এ নিয়ে আরও গভীর গবেষণা প্রয়োজন। বিবিসি অবলম্বনে।
