স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ কর্ণফুলী নদীর পাড় ঘেঁষে বন্দরনগরীর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই পর্যন্ত সড়ক কাম বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ জানুয়ারি মাসেই শুরু হবে। প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ৮০ ফুট প্রস্থ চার লেনের এ সড়কের উচ্চতা হবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪ ফুট উঁচু। জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি সামুদ্রিক জোয়ারের পানি ঠেকানো এই সড়ক নির্মাণের উদ্দেশ্য।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় এর মধ্যেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে পেশ করা হয়েছে এসেসমেন্ট। শীগ্রই অনুমোদিত হয়ে যাবে বলে আশাবাদ এই সংস্থার। আর অনুমোদন হয়ে গেলে জানুয়ারি মাসেই নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা এই প্রকল্পের কাজ আগামী বর্ষা মওসুমের আগেই দৃশ্যমান হতে শুরু করবে। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা।
চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এই প্রসঙ্গে জানান, একনেকে চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল এই আউটার রিং রোড প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়, যা ২০২০ সালের জুনের মধ্যে শেষ করা হবে। এ কাজ শুরু করতে এখন আর কোন বাধা নেই। চার লেনের এই সড়ক নির্মিত হলে নগরীর পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি বৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতা নিরসন এবং জোয়ারের পানি প্রবেশ বন্ধ হবে। বিশেষভাবে উপকৃত হবে নগরীর বৃহত্তর বাকলিয়া, চান্দগাঁও, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, বক্সিরহাট এবং কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকা। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে বন্দরনগরীর যোগাযোগ সুগম হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাড়ে ৮ কিলোমিটার সড়কের জন্য ১২টি খালের ওপর সেতু তৈরি হবে। প্রতিটি খালের মুখে থাকবে রেগুলেটর ও পাম্প। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে জোয়ার-ভাটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ফলে চট্টগ্রাম নগরীর দীর্ঘদিনের সমস্যা অনেকটাই দূর হবে। চওড়া এ সড়ক চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযাগকে অনেক সহজ করে দেবে। কমে যাবে সড়কে যানজট। শুধু দক্ষিণ চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ উন্নয়নই নয়, এর প্রভাব পড়বে বন্দরনগরীর অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও।
চউক সূত্র জানায়, সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আগামী বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের মধ্যেই কাজ শুরু করা হবে। সুপরিকল্পিতভাবে এ কাজ এগিয়ে নেয়া হবে। আগামী বর্ষা মওসুমের আগে যেটুকু কাজ হবে তারও কিছু সুফল পাবে নগরবাসী।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে বর্ষা মওসুমে নাকাল অবস্থায় পড়েন নগরবাসী। শুধু তাই নয়, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা এবং ছোটপুলসহ কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে বৃষ্টিরও প্রয়োজন হয় না। জোয়ারের পানিতেই তলিয়ে যায় সড়কগুলো। অনেক বাড়ির নিচতলা প্লাবিত হয়। ফলে বিরাট আবাসিক এলাকার অনেকগুলো বাড়িই বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর এভাবে চলতে থাকায় অনেক এলাকা রীতিমতো পরিত্যক্ত হওয়ার উপক্রম। সার্বিক বিবেচনায় চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। খাল সংস্কার, বেহাত হয়ে যাওয়া খাল উদ্ধার, নতুন খাল খনন, সাগরের তীর ঘেঁষে স্লুইসগেট সংবলিত সড়ক নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের নির্দেশনা রয়েছে।