ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আকায়েদ এভাবেই উদ্বুদ্ধ হয়েছে ॥ জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী জুঁই

অনলাইন ওয়েবসাইট এখন জঙ্গী বানানোর কারখানা

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

অনলাইন ওয়েবসাইট এখন জঙ্গী বানানোর কারখানা

শংকর কুমার দে ॥ এখন জঙ্গী তৈরির কারখানার রূপ লাভ করছে অনলাইনভিত্তিক ওয়েবসাইট এসব ওয়েবপোর্টাল জঙ্গীবাদ প্রচারের বই, বয়ান, ভিডিও সামগ্রী বানিয়ে বিনা বাধায় তা ছেড়ে দিচ্ছে। দেশ-বিদেশে অনলাইনভিত্তিক জঙ্গীবাদ প্রচার চালানো অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশী জিহাদী গ্রুপ। মার্কিন অভিবাসী বাংলাদেশী আকায়েদ উল্লাহ অনলাইনভিত্তিক জঙ্গীবাদ প্রচারে উদ্বুদ্ধ হয়েই আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে। জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান কারাবন্দী জসিমউদ্দিন রাহমানীর অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া বই, বয়ান পড়ে এখনও নিজে থেকে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে অনেকেই। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী বাংলাদেশী আকায়েদ উল্লাহও জসিমউদ্দিন রাহমানীর অনলাইনভিত্তিক বই, ভিডিও, বয়ান পড়ে নিজে থেকে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে। ঢাকায় অবস্থানকারী আকায়েদ উল্লাহর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জুঁইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ধরনের তথ্য পেয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে আত্মঘাতী হামলার সময়ে আকায়েদ উল্লাহ আহত অবস্থায় ধরা পড়ার পর রাজধানীতে অবস্থানরত তার স্ত্রী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যানুযায়ী জানা গেছে, নিউ ইয়র্কে আকায়েদ উল্লাহ জসিমউদ্দিন রাহমানীর বিভিন্ন বয়ান পড়েছে। সে তার স্ত্রীকে এসব পড়ার জন্য নিয়মিত লিঙ্ক পাঠাত বলে জিজ্ঞাসাবাদে তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জুঁই জানিয়েছে। শুধু আকায়েদ উল্লাহই নয়, আরও অনেকে এখনও কারাবন্দী জসিমউদ্দিন রাহমানীর বই, বয়ান অনলাইনের ওয়েবসাইটে, ভিডিওতে অনুসরণ করেই নিজে থেকে জঙ্গীবাদে জড়াচ্ছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশী জিহাদী গ্রুপ একটার পর একটা অনলাইনভিত্তিক ওয়েবসাইট খুলে জঙ্গীবাদের প্রচার চালাচ্ছে। পুলিশ একটা বন্ধ করলে আবার অন্য নামে আরেকটা খুলে জঙ্গীবাদ প্রচার চালাচ্ছে। একের পর এক জঙ্গীবিরোধী অভিযানে জঙ্গীরা নিহত, গ্রেফতার ও পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ অনলাইনভিত্তিক জঙ্গীবাদ প্রচার অব্যাহত থাকায় জঙ্গী তৈরির কারখানা বন্ধ করা যাচ্ছে না। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট কর্মকর্তা বলেছেন, ম্যানহাটনে আত্মঘাতী হামলাকারী বাংলাদেশী আকায়েদ উল্লাহ গ্রেফতার হওয়ার পর জানা গেছে, নিজে নিজেই জঙ্গী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে সে। আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রচারে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আগে সে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান কারাবন্দী জসিমউদ্দিন রাহমানীর বয়ান শুনত এবং তার স্ত্রী জুঁইকেও এই বয়ান শোনার জন্য অনলাইনে লিঙ্ক পাঠাত। নিজে থেকেই জঙ্গীবাদে উদ্ধুদ্ধ হয়ে হামলার পরিকল্পনা করার পর আত্মঘাতী হয়ে ম্যানহাটনে বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করে আকায়েদ উল্লাহ। এমনকি হামলায় ব্যবহৃত পাইপ বোমাও তৈরি করেছে নিজে নিজেই। বাংলাদেশে জঙ্গীগুরু জসিমউদ্দিন রাহমানীর লেখালেখি অনলাইনে আকায়েদ উল্লাহ নিয়মিত অনুসরণ করত বলে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের দাবি। আকায়েদ উল্লাহর আত্মঘাতী হয়ে ওঠার ঘটনার পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে জঙ্গী কার্যক্রম সমর্থনকারীরা কিভাবে সেলফ র‌্যাডিক্যালাইজড (নিজে নিজেই জঙ্গীবাদে উদ্ধুদ্ধ) হয়ে উঠছে? আর সেলফ র‌্যাডিক্যালাইজড হওয়ার প্রবণতা কেন আরও আতঙ্কের? কিংবা জসিমউদ্দিন রাহমানী নামে যে জঙ্গীগুরু জসিমউদ্দিন রাহমানীর কথা বলা হচ্ছে, অনলাইন থেকে তার জঙ্গীবাদ বিষয়ক প্রচার বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন? জঙ্গীবাদে সেলফ র‌্যাডিক্যালাইজড হওয়ার প্রবণতাকে লোন উলফ বা লোন এ্যাক্টর এ্যাটাক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এ ধরনের প্রবণতা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ও আতঙ্কের। কারণ আগে থেকে এই সেলফ র‌্যাডিক্যালাইজড জঙ্গীদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায় না। তাই তাদের আক্রমণ আগে থেকে প্রতিরোধ করা বেশ কঠিন বলে সিটিটিসি ইউনিট কর্মকর্তাদের দাবি। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জঙ্গীবাদের জড়ানোর উপায় সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনলাইন হচ্ছে এর অন্যতম মাধ্যম। দুনিয়াজুড়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রমের প্রচার ছড়িয়ে পড়ছে এভাবেই। কথিত জিহাদের পক্ষে ডাক বা কোরান-হাদিসের খন্ডিত যুক্তি দিয়ে জঙ্গীবাদের পক্ষে নিয়মিত প্রচার চালানো হচ্ছে। অনলাইনে এসব দেখে জঙ্গীবাদ সমর্থন করে এমন তরুণদের প্রাথমিক পর্যায়ে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে। বাংলাদেশী জিহাদী গ্রুপ নামে একটি জঙ্গীগোষ্ঠীর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, এতে অন্তত ২৪ ইসলামিক বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ দেয়া হয়েছে। যেগুলোর প্রতিটিতে কথিত জিহাদ সম্পর্কে করণীয় ও কোরান-হাদিসের খ-িত ব্যাখ্যা রয়েছে। বাংলাদেশের জঙ্গীগুরু জসিমউদ্দিন রাহমানীর একাধিক বইয়ের পিডিএফ সংস্করণে জঙ্গীবাদ কার্যক্রম ও কথিত জিহাদে উস্কানির কথা রয়েছে। নিউইয়র্কে আকায়েদ উল্লাহর জঙ্গী হামলার পর তদন্তে দেখা যায় সে জসিমউদ্দিন রাহমানীর বিভিন্ন বয়ান পড়েছে। এমনকি এসব পড়ার জন্য তার স্ত্রী জুঁইকেও নিয়মিত লিঙ্ক পাঠাত।
×