ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চুক্তি মেনেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ চলছে

এবার প্রস্তুতি চলছে ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট সইয়ের

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

এবার প্রস্তুতি চলছে ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট সইয়ের

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এবার ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট (বাস্তব ব্যবস্থা) সইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী ২৩ জানুয়ারির আগেই উভয়পক্ষ এটি সই করবে। এদিকে বুধবার মিয়ানমার সরকার জানিয়েছে, রাখাইনের বাস্তুচ্যুতদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তির নীতি মেনেই যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মঙ্গলবার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়েছে। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ দুই দেশের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে সব ধরনের উদ্যোগ নেবে। গত ২৩ নবেম্বর নেপিডোয় উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আলোকে এই ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পরবর্তী ধাপে উভয় দেশ ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট সইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর আগামী ২৩ জানুয়ারির মধ্যেই এই চুক্তি সই হবে। বাংলাদেশ ২৩ জানুয়ারির মধ্যেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আগ্রহী। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার মঙ্গলবার যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে, তার জন্য পৃথক একটি দলিলে সই করেছে উভয়পক্ষ। সাধারণত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের লক্ষ্যে এই ধরনের দলিলে সইয়ের প্রয়োজন হয় না। তবুও বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে উভয়পক্ষই এই দলিলে সই করেছে। এখন যৌথ কমিটি দ্রুত কাজ শুরু করবে। এখন মাঠ পর্যায়ে যাবতীয় বিষয় তদারকি ও ব্যবস্থা নেয়ার লক্ষ্যে উভয়পক্ষ একটি ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্টে সই করবে। এর পরই রোহিঙ্গাদের ফেরত প্রক্রিয়া শুরু হবে। সূত্র জানায়, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ রোহিঙ্গাদের যাচাইবাছাই, সময় নির্ধারণ, পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নেয়া, যোগাযোগ করা ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করবে। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে বাস্তব অবস্থা যাচাই করে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট করবে। এটাই হবে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর পরবর্তী পদক্ষেপ। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের আওতায় এই ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট সই হবে। এছাড়া যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রয়োজনে একাধিক কমিটি গঠন করতে পারবে। বিশেষ করে কয়েকটি সাবকমিটি গঠন করবে ওয়ার্কিং গ্রুপ। এদিকে বুধবার মিয়ানমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাখাইনের বাস্তুচ্যুতদের ফেরাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়েছে। গত ২৩ নবেম্বর নেপিডোয় দুই দেশের মধ্যে চুক্তির নীতি মেনেই এই যৌথ গ্রুপ গঠিত হয়। যৌথ গ্রুপ বাস্তুচ্যুতদের ফিরিয়ে নিতে কার্যক্রম শুরু করবে। এতে বলা হয়, চার মাস আগে রাখাইন থেকে যাওয়া মানুষদের ফেরাতে উভয় দেশই সম্মত হয়েছে। রাখাইনের এসব লোক বাংলাদেশের অস্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ইউ মিন্ট থোয়ে ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের নেতৃত্বে মঙ্গলবার এক বৈঠকে এই যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে নেপিডোয় গত ২৩ নবেম্বর দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিতে বলা হয়েছে, দুই মাসের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের ফেরানোর কাজ শুরু করা হবে। সে অনুযায়ী আগামী ২৩ জানুয়ারির মধ্যেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা। বাংলাদেশ সেই অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারির মধ্যেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে আগ্রহী। সব কিছু ঠিক থাকলে এই সময়ের মধ্যেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করাও সম্ভব। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার ঢাকায় এক বৈঠকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। এই যৌথ গ্রুপ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন শুরু করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেবে। দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে ১৫ জন করে সদস্য নিয়ে মোট ৩০ সদস্যের এই গ্রুপ গঠন করা হয়। রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে নিপীড়নের মুখে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। সেনাবাহিনী অভিযান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে শরণার্থীদের ফেরত নিতে সম্মত হয় মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরার পথ তৈরি করতে গত ২৩ নবেম্বর নেপিডোয় দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উল্লেখ্য, গত বছরের ৯ অক্টোবর সেনা অভিযানের মুখে ৮৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর চলতি বছর ২৫ আগস্টের পর নতুন করে বাংলাদেশে আসে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে জাতিগত দমন-পীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে শরণার্থী জীবন কাটাচ্ছে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম। বাংলাদেশের আহ্বানে ১৯৯২ সালে দ্বিপক্ষীয় একটি চুক্তির আওতায় মিয়ানমার কিছু রোহিঙ্গাকে ফেরত নিলেও পরে আর সেই প্রক্রিয়া এগোয়নি। এখন গত ২৩ নবেম্বর রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে নতুন করে চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়েছে। এবার উভয়পক্ষ একটি ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট সইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
×