ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যুক্তিতর্কে চীফ প্রসিকিউটর

সরকার ও প্রশাসনের কেউই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেননি

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

সরকার ও প্রশাসনের কেউই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেননি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্পর্শকাতর ও বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলার ২৩তম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান রাষ্ট্র্রপক্ষের সাক্ষীর জবানবন্দী তুলে ধরে যুক্তি দেখিয়ে বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে সমরাস্ত্র আর্জেস গ্রেনেড দিয়ে হামলার পর তৎকালীন সরকার ও প্রশাসনের উর্ধতন কেউই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেননি। ঘটনাস্থল থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দূরত্ব মাত্র তিন শ’ গজের মতো, পুলিশ সদর দফতরের দূরত্ব সাত শ’ গজের মতো। তা সত্ত্বেও উর্ধতন কেউই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেনি। বিশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী ভাড়াটে দল দিয়ে যতেœর সঙ্গে ২১ আগস্ট সমাবেশকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করা হয়েছে। ওই সময় সমাবেশস্থলে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফজলুল কবিরকে তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম আমিনের নির্দেশে পরিবর্তন করা হয়। মামলার অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক আগামী মঙ্গলবার ২৬ ডিসেম্বর ও বুধবার ২৭ ডিসেম্বর আবার অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। চীফ প্রসিকিউটরকে যুক্তিতর্কে সহায়তা করেন এ্যাডভোকেট আকরাম উদ্দিন শ্যামল, এ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা। এ ছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষে স্পেশাল পিপি মোঃ আবু আব্দুল্লাহ্ ভুঞা, এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, এ্যাডভোকেট মোঃ আমিনুর রহমান, এ্যাডভোকেট আবুল হাসনাত, এ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, এ্যাডভোকেট কাজী ইলিয়াসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী আব্দুল সোবহান তরফদারসহ অন্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গত ২৩ অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে। চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তিতে বলেন, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত ওই হামলার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে কোন উর্ধতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেননি। যুক্তিতর্কে বুধবার রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থাপিত সাক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা আমির হোসেন আমু, ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর এবং পুলিশের ডিআইজি মোঃ নওশের আলীর জবানবন্দী। রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্কে সাক্ষী আমির হোসেন আমুর জবানবন্দী উল্লেখ করে জানায়, এ সাক্ষী ২১ আগস্ট আগস্ট হামলায় আক্রান্তদের একজন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা শেষ করার পর পর সাংবাদিকরা তাঁর ছবি তুলতে অনুরোধ জানায়। ছবি তুলতে সম্মতি দিয়ে নেত্রী দাঁড়ান। ঠিক তখনি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। এ সাক্ষী তখন অস্থায়ী মঞ্চে শুয়ে পড়েন। তখন তিনি দেখতে পান, নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ নেতৃবৃন্দ নেত্রীকে মানবঢাল বেষ্টিত অবস্থায় নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। মুহূর্তেই সমাবেশ স্থলে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে এ সাক্ষীও দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নেন। আমু তার জবাবনন্দীতে উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ধারাবাহিকতারই অংশ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীরের জবানবন্দী তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ য্ুিক্ততর্কে বলে, এ সাক্ষী সেদিনের ঘটনায় আহত হন। তিনি জবানবন্দীতে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দূরত্ব মাত্র তিন শ’ গজের মতো, পুলিশ সদর দফতরের দূরত্ব সাত শ’ গজের মতো। তা সত্ত্বেও উর্ধতন কেউই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেনি। বিশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী ভাড়াটে দল দিয়ে যত্নে র সঙ্গে ২১ আগস্ট সমাবেশকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করা হয়েছে। সাক্ষী নওশের আলীর জবানবন্দী উল্লেখ করে রাষ্ট্রপক্ষ য্ুিক্ততর্কে জানায়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফজলুল কবিরকে তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম আমিনের নির্দেশে পরিবর্তন করা হয়। আলোচিত এ মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আর এ মামলায় ২০ জনের সাফাই সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ওই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিলুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। ২০০৮ সালের ১১ জুন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। মামলা তদন্তের ভার পান সিআইডির পুলিশ সুপার আব্দুল কাহ্হার আখন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। মামলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নান ও জেএমবি সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের নাম বাদ দেয়ায় এখন আসামির সংখ্যা ৪৯। এর মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জন পালাতক রয়েছেন। এ ছাড়া জামিনে আট এবং কারাগারে রয়েছেন ২৩ জন।
×