ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যতদিন প্রয়োজন রোহিঙ্গাদের সাহায্য সহযোগিতা দেবে তুরস্ক

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

যতদিন প্রয়োজন রোহিঙ্গাদের সাহায্য  সহযোগিতা দেবে তুরস্ক

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের হত্যা করে যে গণকবর দেয়া হয়েছে এমন একটি গণকবর গত মঙ্গলবার চিহ্নিত হওয়ার পর বুধবার সেখান থেকে ১০ জনের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে রাখাইনে আরও একটি গণকবর থেকে হিন্দু রোহিঙ্গাদের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। এছাড়া একটি ভরাট হয়ে যাওয়া ছোট আকৃতির নদী থেকেও রোহিঙ্গাদের অসংখ্য লাশ পাওয়া গিয়েছিল। এদিকে, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বুধবার সকালে উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নির্যাতনকে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছেন। অপরদিকে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রশ্নে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠিত হওয়ার পর উখিয়া টেকনাফের স্থায়ী বাসিন্দারা খুশি হলেও রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এর মূল কারণ, আদৌ যদি প্রত্যাবাসন শুরু হয় তাহলে সেখানে পুনরায় ফিরে গিয়ে তাদের ভবিষ্যত জীবন বরাবরই শঙ্কায় নিমজ্জিত থাকবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গারা যাতে তাদের পক্ষে প্রদত্ত শর্ত পূরণ হওয়া ছাড়া যাতে ফিরে যেতে রাজি না হয় সে ব্যাপারে রোহিঙ্গা নেতারা তৎপরতা শুরু করেছে। বর্তমানে উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরের বারো ব্লকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে ত্রাণ সহায়তা পেয়ে শঙ্কামুক্ত দিনাতিপাত করছে। তুর্কী প্রধানমন্ত্রীর সফর ॥ তুর্কী প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বুধবার দুপুর বারোটার আগে আকাশপথে কক্সবাজার পৌঁছেন। কক্সবাজার থেকে তিনি সরাসরি যান উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এছাড়া ছিলেন বাংলাদেশে অবস্থিত তুর্কী দূতাবাসের কয়েক কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলা ও পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ। বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে তিনি সেখানে তুরস্কের অর্থায়নে পরিচালিত মেডিক্যাল ক্যাম্পের উদ্বোধন এবং দুটি এ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। তুর্কী প্রধানমন্ত্রী ক্যাম্প পরিদর্শনকালে বেশ কিছু রোহিঙ্গা নর-নারীর সঙ্গে কথা বলেন। রাখাইন রাজ্যে তাদের ওপর যে বর্বরতা চলেছে তার বর্ণনা নিজ কানে শোনেন। এরপর তিনি সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় ইলদিরিম বলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনা জাতিগত নিধন। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো এবং নিরাপদে বসবাসের জন্য আন্তর্জাতিক সকল মহলের একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা অসহায়। বাংলাদেশ এদেরকে আশ্রয় দিয়ে সাধুবাদ কুড়িয়েছে। যে কারণে মানবিকতায় বাংলাদেশ বিশ্বে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যতদিন রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসিত হবে না ততদিন পর্যন্ত সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এ সঙ্কট সমাধানে তুরস্ক সরকার বাংলাদেশের পাশেই থাকবে। গণকবর থেকে ১০ কঙ্কাল উদ্ধার ॥ গত ২৫ আগস্টের পর থেকে রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর গণহারে রোহিঙ্গাদের হত্যা করার ঘটনা ঘটে। এ সময় নিহতদের গণহারে কবরও দেয়া হয়। এসব গণকবরের অস্তিত্ব মিশিয়ে দিতে বুলডোজার দিয়ে মাটিচাপাও দেয়া হয়েছিল। এরপরও একটি গণকবর ঘটনার কিছুদিন পর আবিষ্কৃত হয়। উদ্ধার হয় পচা ও গলিত লাশ। এরপর সারি সারি মৃতদেহ পড়ে থাকা একটি ভরাট নদীও খুঁজে পাওয়া যায়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার যে গণকবরটি আবিষ্কৃত হয়েছে সেটি উত্তর রাখাইন অঞ্চলে। বুধবার সেখান থেকে রোহিঙ্গাদের ১০টি কঙ্কাল উদ্ধার হয়। মিয়ানমার সরকারের পক্ষ এ গণকবর আবিষ্কৃত হওয়ার ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাংয়ের ফেসবুক পেজে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধারকৃত কঙ্কালগুলোর ছবিও ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছে। এদিকে, গণকবরের সন্ধান লাভের ঘটনায় রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে স্বজন হারানোর বেদনা নতুন করে বেদনাহত করেছে রোহিঙ্গাদের। কারণ বাংলাদেশে যারা পালিয়ে এসেছে তারা প্রাণে বাঁচলেও তাদের হাজার হাজার স্বজনের কোন খবর এখনও মেলেনি। তারা নিশ্চিত, যারা নিখোঁজ রয়েছে তারা আর বেঁচে নেই। সেখানে পরিচালিত সেনা অভিযান ও উগ্র মগ সন্ত্রাসীদের আক্রমণের শিকার হয়ে ওদের মৃত্যু হয়েছে। এদের অনেককে গণহারে কবর দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় বুধবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কয়েক রোহিঙ্গা তাদেরকে জোর করে প্রত্যাবাসন করা হলে আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছে বলে জানা গেছে।
×