ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙালী উপাধিতে ভূষিত করেন শেখ হাসিনা

বঙ্গবন্ধুর গান গেয়েই যার জীবন পার

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

বঙ্গবন্ধুর গান গেয়েই যার জীবন পার

নিজস্ব সংবাদদাতা, মীরসরাই, চট্টগ্রাম, ১৯ ডিসেম্বর ॥ ধানের গানের লক্ষ প্রাণের ভালোবাসায় সিক্ত এদেশ আমার সোনার বাংলা, বাংলাদেশ। এদেশের মানুষের স্বভাব বাউলের হৃদয়ে সঙ্গীতের মূর্ছনা বয় সারা বেলা, সারাক্ষণ। এদেশের মাটিতে যুগে যুগে জন্ম নিয়েছে জানা অজানা মানবপ্রেমিক দেশপ্রেমিক শিল্পী। এদের অনেকেই স্ব-স্ব এলাকার মানুষদের মুগ্ধ করে চলে গেছেন লোকান্তরে, কেউবা রয়ে গেছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। আপন হৃদয়ের আকুলতায় রচিত আনন্দ ধামে বসত তাদের। এদের কারও কারও সঙ্গীত শুনতে পাওয়া এক বিরল সৌভাগ্যের বিষয়। তেমনি একজন মীরসরাইয়ের মানবপ্রেমিক দেশপ্রেমিক চারণশিল্পী সিরাজ বাঙালী। বাঙালীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অমিত দুঃসাহসের গৌরবগাথা ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি তার মানসপটে ভেসে থাকে সারা বেলা। আপন মনে গানে গানে রচনা করেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, যুদ্ধকালীন সময়ের বীরত্বগাথা, বাঙালীর সাহসের বিক্রমের রোমাঞ্চকর কাহিনী। তার চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ, হৃদয়ে বাংলাদেশ জেগে রয় সবসময়। নিজের লেখা ও সুরে তার অবিস্মরণীয় মুক্তিযুদ্ধের গান শোনেন সকলে। ১৯৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা লোকশিল্পী সিরাজ বাঙালীর অন্তর জুড়ে বিরাজমান হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার পরিজনদের নৃশংস হত্যাকা-ের স্মৃতি তাকে ব্যাকুল করে। স্বরচিত গানে তিনি প্রকাশ করেন সেই দুঃসহ বেদনার নির্মম স্মৃতি। মুজিবপ্রেমিক চারণশিল্পী সিরাজ বাঙালী মঞ্চে মঞ্চে গেয়ে যান সেই বেদনার কাব্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ইতিহাস বলে/ ওরে যেইনা রবি অস্ত গেলোরে/ আঁধার হলো সোনার বাংলারে/ আর তো না উঠিল রবি বাংলা মায়ের পরে/ ওরে ২১ বছর কাটাইলো বাঙালী অমানিশার অন্ধকারে/ বঙ্গবন্ধু মুজিব নাই বাংলায়...। অপর একটি গানে তিনি গেয়েছেন- পদ্মা মেঘনা যমুনায়/বাঙালীদের বুকের রক্তের বন্যা বয়ে যায়/ ১৯৭১ সনে, ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে/ ঘোষণা দিলেন বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানে/ হয়তা আমি থাকবো না, নির্দেশ দিতে পারবোনা/ স্বাধীনতা আনবে তোমরা করিয়া লড়াই। আজীবন রাজনীতির মাঠে গান গেয়েই স্বনামধন্য হয়েছেন সিরাজ বাঙালী। তিনি শুধু নামে বাঙালী নন, গত ৫০ বছর ধরে গান গেয়ে কাজেই বাঙালীর পরিচয় দিয়ে চলেছেন। চিরায়ত বাংলার ঐশ্বর্য্যময় ঐতিহ্য লোকসংগীতশিল্পী সিরাজ বাঙালীর প্রাণের স্পন্দন। বাংলার হাট-মাঠ-ঘাট, ফুল-পাখি-নদীর গান তার কণ্ঠের আবেগময়তা, আকুলতায় ভিন্ন মাত্রায় ফুটে উঠে। গণমানুষের গণসঙ্গীত নিয়ে চারণশিল্পী সিরাজ বাঙালী হয়ে ওঠেন ব্যতিক্রমী ভিন্নতায় অদ্বিতীয় উপমা। সিরাজ বাঙালীর প্রকৃত নাম সিরাজুল ইসলাম। ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম লালদিঘীর ময়দানে অসহযোগ আন্দোলনের মঞ্চে সিরাজের গান শুনে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বাঙালী উপাধিতে ভূষিত করেন। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের নিজামপুর এলাকার ওয়াহেদপুর গ্রামে। বাঙালী জাতির ঐতিহ্য স্মরণে তিনি রচনা করেছেন প্রায় নয় শতাধিক গান। এর মধ্যে প্রায় দু’শতাধিক গানই বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে। স্ত্রী, ৫ ছেলে ও ৬ মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার গড়েছেন জোরারগঞ্জের মস্তাননগর এলাকার দক্ষিণ সোনাপাহাড় গ্রামে। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের ১নং সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন। তাই এ প্রতিভাবান মডেলকে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও অনেকে চেনেন।
×