ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে পাঁচ গুণ রোগী হাসপাতালে

বাড়ছে শীতজনিত রোগ

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

বাড়ছে শীতজনিত রোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ১৯ ডিসেম্বর ॥ কিছুটা দেরিতে হলেও উত্তরাঞ্চল জুড়েই এখন শীতের দাপট চলছে। তীব্র শীতে ঠাকুরগাঁওয়ে নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়ায়সহ শীতজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গত ছয় দিনে এ জেলায় তিন শতাধিক শিশু ও বৃদ্ধ ঠান্ডা-জনিত রোগে হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছে। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগে প্রতিদিন ধারণক্ষমতার পাঁচ গুণের বেশি শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। শয্যা কম থাকায় হাসপাতালের ওয়ার্ডের মেঝেতে রেখে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, ১৮ শয্যার শিশু ও নবজাতক ওয়ার্ডে সোমবার রাত পর্যন্ত ১৪০ শিশু ভর্তি ছিল। এসব শিশুর বেশির ভাগই ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত। মঙ্গলবার দুপুরে ৭০ টি শিশুকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরই মধ্যে আরও ৪২টি নতুন শিশু ভর্তি হয়। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডে ১২১ শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এর মধ্যে ৮৫ শিশু ডায়রিয়া ও ৩৬ শিশু শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত। শয্যা সঙ্কটের কারণে বেশির ভাগ শিশুকে ওয়ার্ডের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বারান্দায় বিছানা পেতে শিশুর চিকিৎসা করাচ্ছেন অনেক অভিভাবক। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় বিছানা পেতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আট মাসের শিশু নাহিনের চিকিৎসা করাচ্ছিলেন সদর উপজেলার নারগুন গ্রামের আলেফা বেগম। তিনি বলেন, ‘গত শুক্রবার আমার নাতনির বমি শুরু হয়। অবস্থার অবনতি হলে শনিবার সকালে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে এসে দেখি, বেড নাই। শেষে উপায় না দেখে মেঝেতে কম্বল পেতে চিকিৎসা নিচ্ছি। কিন্তু নাহিনের অবস্থার খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না।’ দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বাহাদুর বাজার গ্রামে থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে চিকিৎসা নিতে আসা ধনীচরণ রায় বলেন, তিনি শনিবার সন্ধ্যায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আট মাসের ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। ‘দুই দিন ধরে হাসপাতালের বারান্দায় থেকে ছেলের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। রাতে ঠা-া বাতাস বারান্দার রোগীদের কাবু করে দেয়। তখন বাড়তি কম্বল দিয়ে ছেলের শরীর ঢেকে দিই। তবু ঠা-া লাগে।’ সদর উপজেলার রুহিয়া এলাকা থেকে আসা ছালেহা খাতুন বলেন, শিশুটিকে ভর্তি করার পর থেকে দেখি একটা বেডে ৩/৪ জন করে, আর মেঝেতেও কোন জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। নবজাতক ও শিশু বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ শাহজাহান নেওয়াজ বলেন, ‘শয্যা না থাকায় কনকনে শীতের মধ্যেই ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের রোগে আক্রান্ত শিশুদের ওয়ার্ডের মেঝেতে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দিতে বাধ্য হচ্ছি।’ সিভিল সার্জন ডাঃ খায়রুল কবির বলেন, ‘শুধু শিশু ওয়ার্ডে নয়, সব ওয়ার্ডেই প্রতিদিন ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি রোগী ভর্তি হয়। এই স্বল্প জনবল দিয়ে আমরা সকল রোগী ও শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।’
×