ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেড় বছর ধরে পাথর আমদানি বন্ধ

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

দেড় বছর ধরে পাথর আমদানি বন্ধ

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের এক শ্রেণীর বন কর্মকর্তা ও তথাকথিত পরিবেশবাদীদের আদালতে মামলা দায়েরের কারণে রাজ্য সরকার পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়ায় জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জের কামালপুর ল্যান্ড কাস্টমস-এলসি স্টেশন দিয়ে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে প্রায় দেড় বছর ধরে। ফলে একদিকে বেকার হয়ে পড়েছে কামালপুরের ৫ হাজার শ্রমিক, অন্যদিকে বাংলাদেশের পাথর ব্যবসায়ীদের এলসি করা প্রায় ১০ কোটি টাকা আটকা পড়ে আছে ভারতীয় রফতানিকারকদের হাতে। এই টাকা কবে উদ্ধার হবে তা কেউ বলতে পারছে না। পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এ মামলা দায়েরের নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নেড়েছে ভারতের একটি রফতানিকারক সিন্ডিকেট। পাথর ব্যবসায়ীরা জানান, কামালপুর স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক পাথর আমদানি হতো মেঘালয় রাজ্য থেকে। দেশের সিংহভাগ পাথরের চাহিদা পূরণ হতো এ বন্দরে আমদানি করা পাথর দিয়েই। এ পাথর দিয়েই বঙ্গবন্ধু সেতুসহ এ অঞ্চলের ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা-ঘাট এবং বড় বড় বিল্ডিং নির্মাণ হয়েছে। এই পথে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় ভারতের বিহার রাজ্যের পাকুর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ স্থলবন্দর এবং রংপুরের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে কালো বোল্ডার পাথর আমদানি করতে হচ্ছে। ঘুরপথে আমদানি করার কারণে তাদের প্রতি ট্রাকে বাড়তি খরচ হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা। এতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ঠিকাদারদের লোকসান গুনতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কামালপুর দিয়ে এক ট্রাক পাথর জামালপুর আনতে ট্রাক ভাড়াসহ খরচ হতো ৬৫ হাজার টাকা। সোনা মসজিদ ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আনতে খরচ পড়ছে ৯৫ হাজার টাকা। নির্ভরযোগ্য সূত্রটি জানায়, ভারতের দিল্লী, মুম্বাই এবং চেন্নাইয়ের রফতানিকারক একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে মেঘালয়ের বোল্ডার পাথর উত্তোলন করে তা বাংলাদেশে রফতানি করত। মেঘালয়ের সিংগিমারী, রাজাবল্লা, ফুলবাড়ী এবং তুরা থেকে ডিনামাইড ফাটিয়ে এই পাথর উত্তোলন করা হতো। এই পাথর শুধু কামালপুর এলসি স্টেশনই নয়, পাথর আসত শেরপুর জেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর এবং সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে। এই সিন্ডিকেটের একচেটিয়া ব্যবসার সূত্র ধরে স্থানীয়রা ৮/১০ জন ব্যবসায়ী একত্র হয়ে এলসির মাধ্যমে পাথর রফতানি শুরু করে। অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে তারা রফতানি করতে থাকে। এতে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাত গুটিয়ে নিতে হয়। কিন্তু সিন্ডিকেটটি বসে থাকেনি। মেঘালয় রাজ্যের নাগরিকদের বসবাসযোগ্য স্থানের আশপাশ থেকে পাথর উত্তোলনের কারণে তাদের আবাদি জমি নষ্ট, বালিভরাট ও পাহাড় ধসে ঘরবাড়ি ও প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে এই অজুহাতে বনবিভাগ ও পরিবেশবাদীদের প্রভাবিত করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করায়। মামলার কারণে মেঘালয় রাজ্য সরকার ওই সকল স্থান থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। বন্দরের পাথর ব্যবসায়ীরাসহ এর সঙ্গে জড়িতরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বন্দরটিতে। এছাড়া বন্দরের প্রায় ১৬০ জন পাথর আমদানিকারকের এলসি করা প্রায় ১০ কোটি টাকা আটকে পড়ে আছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে। ফলে বসে বসে ব্যাংক ঋণের বোঝা টানছেন এ বন্দরের ব্যবসায়ীরা। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। বন্দরের শ্রমিক নুর ইসলাম মিয়া, আলেহা ভানু, নিরঞ্জন, সখিনা বেওয়া ও ইসমাইল হোসেন জানান, বন্দরে কোন কাজ না থাকায় কষ্টে দিন কাটছে তাদের। ধারদেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে তাদের। আমদানি ও রফতানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান জুবায়ের হিটলার জানান, কতিপয় লাইসেন্সবিহীন নামধারী অব্যবসায়ীদের কারণে পাথর আমদানির ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বন্দরে পাথর আমদানি শুরু হবে। সচল হয়ে উঠবে আবার কামালপুর স্থলবন্দর। কামালপুর এলসি স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ২০১৬ সালের ২১ জুন থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। তাতে এই দেড় বছরে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ১০ কোটি টাকা। তিনি মেঘালয় রাজ্যের বন বিভাগ ও পরিবেশবাদীদের মামলার কারণে পাথর রফতানি বন্ধের সত্যতা স্বীকার করেছেন। বকশিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসান সিদ্দিক জানান, বিষয়টির সমাধানের জন্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চলছে। অচিরেই তা ফল পাওয়া যাবে।
×