ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিন সালমান কি মধ্যপ্রাচ্যের পুতিন হতে চান -আতাউর রহমান রাইহান

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

বিন সালমান কি মধ্যপ্রাচ্যের পুতিন হতে চান   -আতাউর রহমান রাইহান

সৌদি আরব একটি রাজতন্ত্র শাসিত দেশ। দেশটি কখনই গণতান্ত্রিক কিংবা প্রজাতান্ত্রিক হওয়ার ভান ধরে না। বিশাল ভূমি ও তেল উৎপাদনের দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় দেশটির পুরো সাম্রাজ্যের বাদশা হলেন সালমান বিন আবদুুল আজিজ। সৌদি আরবকে বলা হয় মধ্যপ্রাচ্যের নেতা। দেশটি ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), আরব লীগ ও উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদসহ (জিসিসি) বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। বিভিন্ন আঞ্চলিক ও পশ্চিমা দেশের সঙ্গে সৌদি রাজ্য জোট গঠন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র ও সমর্থনের বিনিময়ে তারা তেল বিক্রি করে। ২০১৫ সালে জানুয়ারিতে ৭৯ বছর বয়সী সালমান বাদশা হওয়ার পর নিজের সন্তান মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সিংহাসনের উপ-উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচিত করেন। সৌদি স্বার্থ রক্ষায় তরুণ রাজপুত্র একটুও সময় অপচয় করেননি। একই বছরের মার্চে ইরান-সমর্থিত হুতি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ১০টি মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকান দেশের সঙ্গে জোট গঠন করেন। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা, তুর্কী, চীন ও জার্মানি তাকে অস্ত্র ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে সহায়তা করে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিন সালমান ৩৪টি আরব দেশ নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী জোট গঠন করেন। দুই মাস পরেই ১৯টি মুসলিম দেশসহ সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়ার আয়োজন করে। নর্থ থান্ডার নামের ওই মহড়া দিয়ে তারা আরবদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধে ইরানকে পরিষ্কার বার্তা পাঠাতে চেয়েছে। বড় কিছু ঘটনা সৌদি-ইরানের ভাঙ্গন আরও চওড়া করে দিয়েছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রখ্যাত এক শিয়া নেতাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে হত্যা করে সৌদি। এরপর সন্ত্রাসবাদ ও ইরানকে সমর্থনের দায়ে কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করে। চলতি বছরের ৪ নভেম্বর লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি রিয়াদে গেলে তাকে সেখানে বসে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। অভ্যন্তরীণভাবে প্রিন্স মোহাম্মদ দেশটির তেলনির্ভর অর্থনীতি আরও জোরদার কারতে চাচ্ছেন। তেলের মূল্য পড়ে যাওয়ার কারণে দেশটির অর্থনীতির এখন ত্রাহী দশা। তিনি অর্থনৈতিক সংস্কারের কথাও বলেন। এ বছরের জুনে বিন সালমানকে সৌদি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন বাদশা। এরপর থেকেই প্রিন্স নিজের ক্ষমতা সুসংহত করতে উঠেপড়ে লাগেন। তিনি দুর্নীতির অভিযোগে প্রিন্স, মন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী ও সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামেন। সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি রাজ্যের লৌহকঠিন শাসক হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন। বিভিন্ন দিক থেকে তিনি এখন বাদশার মতোই সবকিছু করে যাচ্ছেন। কিছু কিছু গণমাধ্যম তাকে মধ্যপ্রাচ্যের ভ্লাদিমির পুতিন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
×