ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অপরমাণু হুমকির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হবে ॥ জাতীয়নিরাপত্তা পরিকল্পনা ঢেলে সাজা হচ্ছে

নয়া মার্কিন পরমাণু অস্ত্র নীতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

নয়া মার্কিন পরমাণু অস্ত্র নীতি

যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের পরিধি বাড়াতে পারে। এটি হবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তা কৌশলের অংশ। তিনি সোমবার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির ভিত্তিতে জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল ঘোষণা করেছেন। গার্ডিয়ান ও সিএনএন। ট্রাম্প তার নির্বাচনে জয়লাভ এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকে আমেরিকার ইতিহাসে নজীরবিহীন বাঁক পরিবর্তনের ঘটনা বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা ফিরছে, আমেরিকা আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরবে। আমরা আমাদের দেশ, নিজেদের আত্মবিশ্বাস এবং বিশ্বে আমাদের অবস্থান নতুনভাবে তৈরি করব। আমরা আমাদের নিজেদের জন্য, নিজেদের দেশের জন্য এমন কিছু করব যা আগে করিনি।’ জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভোট গ্রহণের দিনটিতে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল ঘোষণা করেছেন। এদিন নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রকে একঘরে অবস্থায় দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রসহ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ১৪ টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য ভেটো দিয়ে প্রস্তাব পাস হওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেছেন, এই ভোট গ্রহণ একটি ‘অপমান’ এবং এটি ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না। এ বিষয়ে ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেস লে দ্রিয়ান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখন বিভিন্ন বৈশ্বিক ইস্যুতে একঘরে হয়ে পড়ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এখন নতুন প্রস্তাব না দিয়ে বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করা প্রয়োজন।’ ‘শান্তির মাধ্যমে শক্তি অর্জন’ সেøাগান সামনে রেখে ট্রাম্প বলেন (ভুলক্রমে) রেকর্ড পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে তিনি সামরিক বাহিনী পুনর্গঠিত করেছেন। ২০১৮ সালে প্রতিরক্ষা বাজেট ৭০ হাজার কোটি ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্রাম্প চীন ও রাশিয়াকে ‘প্রতিপক্ষ শক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। যুক্তরাষ্ট্রের ফের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি হয়ে ওঠার ওপর গুরুত্ব আরোপ করলেও তিনি আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেন। তার এই ভাষণে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু নিয়ে কোন কথা ছিল না। পুরো বক্তৃতায় তিনি ক্লাইমেট শব্দটি চারবার উচ্চারণ করলেও এর তিনবারই ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কিত। ট্রাম্প অভিযোগ করেন তার পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টরা কেবল নিজেদের সাফল্যের ঢোল পিটিয়ে গেছেন, দেশের মানুষের কথা ভাবেননি। অভিবাসন, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি ও বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি করে গেছেন যা দেশের স্বার্থ রক্ষা করেনি। জাতীয় নিরাপত্তাকেও তারা হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে গেছেন। ট্র্রাম্পের এই বক্তৃতার বেশির সময়জুড়ে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক প্রসঙ্গ ছিল। ট্রাম্প বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের নেতৃবৃন্দ আমেরিকার মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়েছেন। আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের কথা তারা ভুলে গেছেন। পরিণতিতে জনগণও আত্মবিশ্বাস হারাতে বসেছে। এখন সময় এসেছে আমরা আমাদের হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনব।’ ট্রাম্পের ঘোষিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে অপরমাণু হুমকির ক্ষেত্রেও পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী মার্কিন প্রতিরক্ষা নীতিতে এটি একটি বড় ধরনের পরিবর্তন। যুক্তরাষ্ট্র এতদিন পরমাণু অস্ত্রভা-ার কেবল আত্মরক্ষামূলক ক্ষেত্রে ব্যবহারের নীতি অনুসরণ করে এসেছে। কিন্তু ট্রাম্প বলছেন, ‘পরমাণু আত্মরক্ষামূলক নীতি অনেক ক্ষেত্রেই সংঘাত বন্ধের ক্ষেত্রে কোন কাজে আসেনি।’ এ বছর সেপ্টেম্বরে মার্কিন সহকারী প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী রব সোফার বলেছিলেন, ‘মার্কিন অবকাঠামো লক্ষ্য করে সাইবার হামলা হচ্ছে।’ তিনি এগুলোকে অপরমাণু নয়া ক্যাটাগরি হুমকি হিসেবে অভিহিত করেন। নটরডেম ইউনিভার্সিটির পিস স্টাডিজের প্রফেসর জর্জ লোপেজ বলেন, ট্র্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল ভাষণটি ১৯৮০ এর দশকের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। এতে কেবল অভ্যন্তরীণ ইস্যুর দিকেই মনোনিবেশ করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন বা অন্য কোন বৈশ্বিক ইস্যু এতে স্থান পায়নি।
×