ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অঞ্জলি লহ সঙ্গীতে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

অঞ্জলি লহ সঙ্গীতে

সঙ্গীত পরিশুদ্ধ করে হৃদয়। আর মনকে টেনে নিয়ে যায় অনন্তের আবাহনে। গানের ভেতর দিয়ে ভুবনখানি দেখতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রসঙ্গীত হৃদয়ের একূল-দুকূল ছাপিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে শ্রোতার মননে। বাঙালীর জীবনে রবীন্দ্রসঙ্গীত নানাভাবে জড়িয়ে আছে। আন্দোলন-সংগ্রামে, যুদ্ধে-শান্তিতে, অবসরে আনন্দ-বেদনায়, সুখে-দুঃখে মন খারাপের লগনে রবীন্দ্রনাথ স্পর্শ রেখে যান তারই সৃষ্ট গানে। যে গান প্রেরণা যোগায়, মনকে উদাস করে। সঙ্গীতের মাধুর্যে সিক্ত হয় শ্রোতার অন্তরাত্মা। ‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’ বলে নৃত্যরতা যখন গেয়ে ওঠেন, তখন স্বর্গীয় এক আবহ এসে ধরা দেয়। সুরের মূর্ছনায় কেঁপে ওঠে হৃদয় মন শ্রোতার। এটা তো সর্বজনবিদিত যে, বাংলা সঙ্গীতের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রসঙ্গীত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় ধারা। রবীন্দ্রসঙ্গীত চিরজাগরূক হয়ে রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদাকে ধারণ করে। রবীন্দ্রসঙ্গীত মানবতাকে পরিশুদ্ধ করে বলেই বোদ্ধাজন তার গানের প্রতি নিবেদিত। ক্রমশ এই গান সাধারণের মধ্যেও ঠাঁই খুঁজে পেয়েছে। সঙ্গীতের মাঝে এমন সুর ও বাণীর সমন্বয় তিনি ঘটিয়েছেন, যা অতি আবেগী মানুষের হৃদয় প্রবলভাবে ছুঁয়ে যায়। তার গান একটা জীবনদর্শনও বটে। কিন্তু এই বাংলাদেশে রবীন্দ্রসঙ্গীত সাধনা সহজতর ছিল না। পাকিস্তান পর্বে সামরিক জান্তা শাসকরা পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করেছিল। প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছিল এ দেশ। রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রচার নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে শামিল হয়েছিলেন বাঙালী কবি, শিল্পী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক। পৌষের এই শীতের দিনে তিন দিনব্যাপী জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব শুরু হচ্ছে ২০ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার আয়োজনে ঊনত্রিশতম এ উৎসবের প্রতিপাদ্য হচ্ছে কবিরই গানের বাণী ‘তোমার গানের পদ্মবনে আবার ডাকো নিমন্ত্রণে/তারি রেণুর তিলক লেখা আমায় কর দান।’ সবার জন্য উন্মুক্ত এই অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে ১১০ জন শিল্পীর একক পরিবেশনা ছাড়াও থাকছে দুটি নৃত্যনাট্য। কলকাতার শিল্পীরাও গাইবেন। পৌষের শীতার্ত রাতে আয়োজন করা হয়েছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব। আবাহনী মাঠে ২৬ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয়ে শেষ হবে ভোর পাঁচটায়। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন প্রতিবারের মতো এবারও এর আয়োজক। এই উৎসবের কারণে দেশে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শ্রোতা ও সমঝদার ক্রমশ তৈরি হয়েছে বলা যায়। ২০১২ সাল থেকে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব বেশ সাড়া ফেলেছে। বিশ্বের প্রথিতযশা শিল্পী ও প-িতরা এতে অংশ নিচ্ছেন। সঙ্গীত প্রতিভা অন্বেষণ, মৌলিক জ্ঞান ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে দক্ষ শিক্ষার্থী গড়ে তোলার লক্ষ্যে আয়োজিত এই উদ্যোগ এদেশে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রসারে অতুলনীয় অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়। পৌষের হিমের রাতে সঙ্গীতলহরী প্রাণে প্রাণে তুলুক তুফান; মানবাতাকে করুক পরিশুদ্ধ। এসব অনুষ্ঠান সার্থক ও সুন্দর হোক এই কামনা।
×