ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মেজবানে পদপিষ্টে হতাহতের ঘটনায় দুই তদন্ত কমিটি

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

মেজবানে পদপিষ্টে হতাহতের  ঘটনায় দুই  তদন্ত কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির মেজবানে ১০ জন নিহত হওয়ার ঘটনার নেপথ্যে নানা গুজব ডালপালা মেললেও ঘটনাটিকে এ পর্যন্ত নিছক দুর্ঘটনা হিসাবেই দেখছে সংশ্লিষ্ট সকল মহল। নানামুখী আলোচনা থাকলেও এখনও পর্যন্ত কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত অভিযোগ মেলেনি। মর্মন্তুদ এ ঘটনার জন্য প্রধানত রিমা কমিউনিটি সেন্টারের ঢালু প্রবেশ পথ এবং শত শত মানুষের হুড়োহুড়ি করে প্রবেশ করাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। তবে এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসন ও নগর পুলিশের পক্ষ থেকে যে দুটি কমিটি করা হয়েছে সেগুলো কাজ শুরু করেছে। এরপরই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। অপরদিকে, প্রয়াত মহিউদ্দিনের পরিবার এবং রিমা কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপনায় জড়িত ও সোমবার মেজবান অনুষ্ঠান চলাকালে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের পক্ষ থেকেও এ পর্যন্ত এ ঘটনাটি দুর্ঘটনা হিসেবেই ধারণা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন মহলে এ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে যত কথাই বলা হোক না কেন প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুযায়ী যে তথ্য গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে সেটি হচ্ছে সড়ক থেকে হলের ঠিক প্রবেশ মুখের ঢালুতে কোন একজনের পড়ে যাওয়া একটি মোবাইল ফোনসেট তুলতে গিয়ে তিনি পড়ে যান। এরপর ভিড়ের ঠেলায় ওই ব্যক্তির ওপর একের পর এক আরও অনেকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান। প্রবেশ পথটি বেশ ঢালুতে থাকায় প্রবেশকারীরা নিজেদের ধরে রাখতে পারেননি। যার কারণে পদপিষ্ট হয়ে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা সোমবার পর্যন্ত আর না বাড়লেও এখনও পর্যন্ত ৪ জন রয়েছেন আইসিইউতে, একজন লাইফ সাপোর্টে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, এদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। অন্যদের উন্নতি ঘটছে। এদিকে, মর্মান্তিক এ ঘটনায় সকলেরই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। স্বজনদের ইচ্ছানুযায়ী জেলা প্রশাসনের অনুমতিক্রমে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের সৎকার সম্পন্ন হয়। মর্মান্তিক এ ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত জেলা প্রশাসন ও পুলিশের দুটি কমিটি কাজ শুরু করে দিয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত রিমা কমিউনিটি সেন্টারের সকল কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। চট্টগ্রামের জনপ্রিয় নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির মেজবানে দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানান ধরনের বিশ্লেষণের চেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। গুজবের ডালপালা এতটা বিস্তৃত হওয়ার কারণ মূলত নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ধারা-উপধারা। অনেকে বলার চেষ্টা করছেন যে, পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত তদন্তে যেটুকু বেরিয়ে এসেছে তাতে বিষয়টি কেবলই দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এমনকি দলের নেতারাও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছেন না। তবে কোন ধরনের অব্যবস্থাপনা বা অসাবধানতা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তে আপত্তি ছিল স্বজনদের। এ অবস্থায় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তাদের মরদেহের সৎকার হয়েছে। এরমধ্যে সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ভলুয়ারদীঘির মহাশ্মশানে সৎকার হয়েছে ৩ জনের। চট্টগ্রামের বাঁশখালী, কাট্টলী, সীতাকুন্ড, আনোয়ারা, কক্সবাজারের চকরিয়া, রাঙ্গামাটি এবং রংপুরের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বাকিদের। সেখানে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে স্বজনরা তাদের সৎকার কাজ শেষ করে। ভলুয়ারদীঘি মহাশ্মশানে সোমবার রাতে সৎকারকালে সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এদিকে, এ ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাশহুদুল কবিরের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ হুমায়ুন কবির, নগর পুলিশের চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা, গণপূর্ত উপ বিভাগের প্রকৌশলী এসএম শাহরিয়ার নেওয়াজ এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান। এ কমিটিকে সুষ্ঠু তদন্ত শেষে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা রিমা কমিউনিটি সেন্টারের প্রবেশ পথ এবং দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। তদন্তের স্বার্থে ওই কমিউনিটি সেন্টারটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশে। এছাড়া সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাইন হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি তিন কর্ম দিবসের মধ্যে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা জমা দেবে। পুলিশ প্রশাসনের গঠন করা এই কমিটিও তদন্ত কাজ শুরু করে দিয়েছে। সিএমপির কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের জানান, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত রিমা কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ থাকবে। আলামত নষ্ট যেন না হয় সেজন্যই এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। তদন্তের সুবিধার্থে কমিউনিটি সেন্টারের প্রবেশ পথ ও দুর্ঘটনার স্থলটি চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। পুলিশ জানায়, কমিউনিটি সেন্টার এবং আশপাশের ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ধারণ করা চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে আগে এবং পরে সেখানে সন্দেহজনক কারও আনাগোনা ছিল কিনা তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত রিমা কমিউনিটি সেন্টারের মালিকের নাম শাহ মুরাদ। তবে সেন্টারটি ভাড়ায় পরিচালনা করে আসছিল চট্টগ্রামের শাহাবউদ্দিন ডেকোরেটর্স। বন্ধ ঘোষণার পর ওই কমিউনিটি সেন্টারের এ সপ্তাহের সকল বুকিং বাতিল করা হয়েছে এবং নতুন করে বুকিং নেয়া হচ্ছে না। এদিকে, নগরীর আসকারদীঘির পাড় এলাকার এ কমিউনিটি সেন্টারে মর্মান্তিক ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে চক বাজার থানায়। সোমবার রাতে মামলাটি দায়ের করেন নিহত ঝন্টু দাশের ভাই অরুন দাশ। পুলিশ এ ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত সোমবার রিমা কমিউনিটি সেন্টারে ঘটে যাওয়া এ দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবার আশ্বাস দিয়েছে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবার। মহিউদ্দিনপুত্র আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জানিয়েছেন, এ ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়া এবং কর্মসংস্থানের দায়িত্ব নেবে তার পরিবার। একইসঙ্গে আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য সকল ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছে।
×