ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাত পোহালেই ভোট উৎসব বহিরাগতদের এলাকা ত্যাগের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

রাত পোহালেই ভোট উৎসব বহিরাগতদের এলাকা ত্যাগের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার/নিজস্ব সংবাদদাতা রংপুর ॥ রাত পোহালে ভোট উৎসব রংপুর সিটিতে। প্রচারাভিযানও শেষ হয়েছে। অপেক্ষা এখন শুধু ভোটের জন্য। জয়পরাজয়ের হিসাব কষছেন প্রার্থীরা। নগরবাসী চাতক পাখির মতো চেয়ে আছেন কে আসছেন রংপুরের নগরপিতা হয়ে। বৃহস্পতিবার ভোটেই তা ফয়সালা হয়ে যাবে। প্রচার কাজ বন্ধ হওয়ার আগে মঙ্গলবার শেষ দিনে প্রার্থীরা ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কমিশনের পক্ষ থেকে বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়েছে নির্বাচনী এলাকা। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ইতোমধ্যে নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছেন নির্বাচন কমিশন। রাত পোহালে সকাল ৮টা থেকেই ভোট গ্রহণ শুরু হবে। আজকের রাতের মধ্যেই ব্যালট পেপারসহ সব ধরনের ভোটার সরঞ্জাম পৌঁছে যাবে ভোট কেন্দ্রে। কেন্দ্রে নিরাপত্তার পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায় নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। টহল শুরু করেছে র‌্যাব পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকে কাজ করছেন বিপুলসংখ্যক গোয়েন্দা। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযানের পাশাপাশি বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা। আরোপ করা হয়েছে। নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৫ হাজার ৫০০ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ৩৩টি গ্রুপে ২ হাজার ২৩১ জন পুলিশ এবং ৫১৫ জন আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য এবং ৩৬টি গ্রুপে বিভক্ত ১৮ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকবে। ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রসিকের নির্বাচনী মাঠের কাজে মনিটরিং করছেন। নির্বাচনে ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৩৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত, ১১ জন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১১টি সামারী আদালত এবং র‌্যাব, বিজিবির আলাদা টিম কাজ করবে নির্বাচনী মাঠে। রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, ইতোমধ্যে ব্যলট পেপার রংপুরে এসে পৌঁছেছে। বুধবার দুপুর থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম স্ব স্ব কেন্দ্রে পাঠানো হবে। নগরীর সবগুলো আবাসিক ও অনাবাসিক হোটেল থেকে বহিরাগতদের চলে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোনো বহিরাগতদের কেউই যাতে হোটেলে না থাকতে পারে সেজন্য কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছে পুলিশ প্রশাসন। রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, রংপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় কমিশন। এজন্য কমিশনের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে যা প্রয়োজন তার সকল ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি রংপুরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়া সম্ভব হবে। রংপুর সিটি নির্বাচনে একজন মেয়র ২৭ জন কাউন্সিলর এবং ৬ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর নির্বাচিত করতে ভোট দেবে এলাকাবাসী। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির প্রার্থীসহ ৭ জন প্রার্থী মেয়র পদে এবং কাউন্সিলর পদে ২১১ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৫ জনসহ মোট ২৮৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের মোট ১৯৩টি ভোট কেন্দ্রের ১ হাজার ১৭৭টি গোপন কক্ষে ভোট প্রদান করবেন ভোটাররা। মেয়র পদে দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হবে। কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে নির্দলীয় ভিত্তিতে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে তিন লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ পুরুষ এবং ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন নারী। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্র ১৯৩টি, ভোটকক্ষ ১ হাজার ১১১২টি। ৩ হাজার ৬৫২ জন নির্বাচন কর্মকর্তা এ নির্বাচনে কাজ করবে। পাঁচ বছর আগে রংপুর সিটির ভোটার ছিল ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২। এদিকে মঙ্গলবার নির্বাচনের আগে শেষবারের মতো ভোটাদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করেছেন প্রার্থীরা। সারাদিনই তারা গণসংযোগে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় প্রার্থীরা ভোটারদের রংপুরের উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করছেন। মঙ্গলবার সকালে নগরীর ১নং ওয়ার্ডের রণচ-ি এলাকায় প্রচারণা শুরু করেছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এদিন সরকারদলীয় প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু নগরীর পায়রা চত্বর এলাকায় প্রচারণা চালান। বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা প্রচার শুরু করেন নগরীর তপোধনসহ আরও বেশ কয়েকটি নির্বাচনী এলাকায়। অন্য প্রার্থীরাও সারাদিন ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন। ২ কাউন্সিলর প্রার্থীর মাঝে হাতাহতি ॥ রসিক নির্বাচনে ২০ নং ওয়ার্ডের ২ কাউন্সিলর প্রার্থীর মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সোমবার রাত ১০টার দিকে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের পশ্চিম গুরাতিপাড়া এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থী বহুলুল ইসলাম জেপলিন এবং অপর কাউন্সিলর প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলামের নির্বাচনী প্রচারণাকালে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে তৌহিদুল সমর্থকরা তৌহিদুলের নেতৃত্বতে কাউন্সিলর প্রার্থী জেপলিন ও তার সমর্থকদের নামে মামলা দায়ের করার জন্য কোতয়ালী থানা ঘেরাও করে। ফলে ২০ নং ওয়ার্ড জুড়ে আতঙ্ক ও উদ্বেগ উৎকণ্ঠা শুরু হয়েছে এলাকাবাসীর মাঝে। একটি কেন্দ্রে ইভিএম ও তিনটি কেন্দ্রে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন ॥ সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪১ নম্বর কেন্দ্রের (সরকারী বেগম রোকেয়া কলেজ) ছয়টি ভোটকক্ষে নতুন ইভিএমের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হবে। নির্বাচনে রংপুর সিটির নিউ শালবন ও শালবন এলাকার দুই হাজার ৫৯ ভোটারের জন্য ১৪১ নম্বর কেন্দ্রটিতে এই ইভিএম ব্যবহার হবে। বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্রের মোট ২০৫৯ জন ভোটারের মধ্যে নিউ শালবন এলাকার ১৬১৫ জন ও শালবন এলাকার ৪৪৪ জন ভোটার রয়েছেন। এদিকে ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন।
×