ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক;###;শুনানি বুধবার

জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তিই চায় রাষ্ট্রপক্ষ। ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মোঃ আখতারুজ্জামানের আদালতে বুধবার এ মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি হবে। দুইপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলেই দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নয় বছর আগে দুদকের দায়ের করা এ মামলা রায়ের পর্যায়ে আসবে। মামলার প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মঙ্গলবার বেলা ১১টার পর রাজধানীর বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের মাঠে বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে পৌঁছান। এর পরপরই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘বিদেশী অনুদানের অর্থ এতিমদের কল্যাণে খরচ না করে আসামিরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে হস্তান্তর, রূপান্তর করেছেন। বছরের পর বছর তারা ওই অর্থ পাচার করেছেন।’ তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে যে অর্থ প্রাইম ব্যাংকে আসে, এ অর্থ দুই ভাগে ভাগ হয়। পরে আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ও তারেক রহমানের যৌথ এ্যাকাউন্ট থেকে এ অর্থ উত্তোলন করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বগুড়া ও বাগেরহাটে এতিমখানা নির্মাণের জন্য আদালতে যে অর্থের তথ্য দেয়া হয়েছে, তার কোন ভিত্তি নেই। সাক্ষীদের সাক্ষ্য অনুযায়ী যে টাকা দেশে এসেছে, সে টাকা রাষ্ট্রের। এ টাকা আত্মসাতের দায় আসামিদের নিতে হবে।’ আসামি পক্ষের আইনজীবীদের ইঙ্গিত করে মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, ‘এ টাকা কোথায় ব্যয় হলো বা কোথায় গেলোÑ এই ব্যখ্যা তারা দিয়ে যাবেন।’ তিনি বলেন, ‘ভুয়া সম্পত্তি কিনে এবং একটি সিভিল মামলা দায়ের করে টাকা আত্মসাতের নাটক সাজিয়েছিলেন আসামিরা। ৩২ সাক্ষীর জবানবন্দী উপস্থাপন করে আমি আদালতে যে বিবরণ দিয়েছি, এর মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি বলে মনে করি। আর তাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০৯ ও ৪০৯ দ-বিধিতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছি।’ এদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতে দুইটি আবেদন জমা দেন। একটি হলো জামিন স্থায়ী করার, অন্যটি সময়ের। সময়ের আবেদনে আসামি পক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘বুধবার আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য করা হয়েছে। এতে আসামি পক্ষ জেরার জন্য যথেষ্ট সময় পাবে না। কিন্তু এর জন্য সময় প্রয়োজন।’ আদালত জামিন স্থায়ী করার আবেদন স্থায়ী করলেও সময়ের আবেদন না মঞ্জুর করে দেন এবং নির্ধারিত তারিখে জেরা হবে বলে জানান। এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে মোট সাতদিন বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। গত ৫ ডিসেম্বর তার সেই বক্তব্য শেষ হলে বিচারক মোঃ আখতারুজ্জামান যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য ১৯, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দিন রাখেন। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন আর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। খালেদা জিয়া, সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ এ মামলায় জামিনে আছেন। খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান গত নয় বছর ধরে দেশের বাইরে, তার বিরুদ্ধে এ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এছাড়া কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। মামলার বিচার শুরুর প্রথম থেকেই বার বার শুনানিতে অনুপস্থিত থেকেছেন খালেদা জিয়া। অনুপস্থিতির কারণে একাধিকবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছেন আদালত। নানা অজুহাতে অসংখ্যবার উচ্চ আদালতেও গিয়েছেন। তার এসব কর্মকা-কে বিচার বিলম্বিত করার অপচেষ্টা বলেই মনে করেন অনেকে।
×