ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৫৫ জনের মধ্যে ফিরে এসেছেন ৯ জন ॥ কেউ মুখ খুলছেন না

সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফসহ নিখোঁজদের রহস্যের জট খোলেনি

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফসহ নিখোঁজদের রহস্যের  জট খোলেনি

শংকর কুমার দে ॥ সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান, সাংবাদিক উৎপল দাস, ব্যবসায়ী সৈয়দ সাদাত আহমেদ, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইশরাক আহম্মেদ নিখোঁজ রহস্যের জট এখনও খোলেনি। চলতি বছর সারাদেশে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ৫৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন। যারা গুমের শিকার বলেও মনে করা হয়। কেবলমাত্র চলতি বছরের গত ৪ মাসে নিখোঁজ হয়েছেন ১২ জন। নিখোঁজের তালিকায় যারা ছিলেন তাদের মধ্যে ফিরে এসেছেন ৯ জন। দুই জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। তিন জনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যারা ফিরে এসেছেন তারা এত দিন কোথায় কার কাছে কিভাবে ছিলেন সেই বিষয়ে ফিরে আসা ব্যক্তিসহ তার পরিবারের লোকজন মুখ খুলছেন না। হঠাৎ নিখোঁজ বা গুম হওয়া মানুষগুলোর মধ্যে যারা ফিরে এসেছেন, তাদের কাছ থেকেও কোন তথ্য আদায় করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা কোথা থেকে ফিরেছেন, কে বা কারা তাদের ধরে নিয়েছিল, কোথায় রাখা হয়েছিল, সে বিষয়ে কিছুই আর জানা যাচ্ছে না। এ রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশেরও খুব একটা আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় না। এ ধরনের নিখোঁজ ঘটনার ক্ষেত্রে সন্দেহের তীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকে। চলতি বছরের গত ৪ মাসে যে ১২ জন নিখোঁজ হয়েছিলেন তার মধ্যে যে ৬ জন ফিরে এসেছেন তার মধ্যে সর্বশেষ ফিরেছেন ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়। দীর্ঘ ৮১ দিন পর ফিরে আসার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন পর্যায়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অনিরুদ্ধ রায়ের ফিরে আসার ঘটনাটি অনেক নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছে, যা একে একে রহস্যেঘেরা ‘গুম, নিখোঁজ’ ব্যক্তিরা ফিরে আসার পথ সুগম করে। আরএমএম লেদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় ফিরে আসার পর দীর্ঘ ১৯ দিন গোপন রাখা হয়। ফিরে আসার বিষয়টি গোপন রেখে তার ফিরে আসার ঘোষণা দেয়া হয় পারিবারিকভাবে। অনিরুদ্ধ রায় গুলশানের বাসায় ফিরে আসেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তার স্ত্রী শাশ্বতী রায়। আরএমএম লেদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় বেলারুশের অনারারি কনসাল ছিলেন। কানাডার নাগরিক অনিরুদ্ধ টরন্টো-ঢাকা মিলিয়েই থাকেন। তিনি দীর্ঘ ৮১ দিন পর ফিরে আসার কথা ১৯ দিন পর পারিবারিকভাবে জানানো হলেও প্রকৃতপক্ষে ফিরে আসেন গত ৩০ অক্টোবর। ৩০ অক্টোবর ফিরে আসার পর চিকিৎসার উদ্দেশে ভারত যান গত ৩ নবেম্বর। গত ৩ নবেম্বর থেকে ১৭ নবেম্বর পর্যন্ত ফিরে আসার খবরটি জানানো হয়নি। এতেই রহস্যের সৃষ্টি হয়। গত ২৭ আগস্ট বিকেলে ঢাকার কূটনীতিক পাড়া গুলশানের ১ নম্বর সেকশনের ইউনিয়ন ব্যাংকের সামনে থেকে একটি মাইক্রোবাসে অনিরুদ্ধকে তুলে নেয়া হয়েছিল বলে তার গাড়িচালক জানান। গাড়িচালক বলেছিলেন, অনিরুদ্ধ রায় নিজের গাড়িতে ওঠার সময় দুই লোক এসে তার সঙ্গে কথা বলেন। তারপর পাশে ডেকে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেন। অনিরুদ্ধকে তুলে নেয়ার পর উদ্বেগ জানিয়ে তাকে উদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছিল হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ। অনিরুদ্ধের পর সাংবাদিক উৎপল দাস, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজারসহ কয়েকজন নিখোঁজ হন। এসব ঘটনায় সরকারী সংস্থাগুলোর সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ প্রধান ওই অভিযোগ অস্বীকার করে গত সপ্তাহেই বলেছিলেন, নিখোঁজদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা চলছে। তারা আশাবাদী, অচিরেই নিখোঁজদের ফিরে পাওয়া যাবে। অনিরুদ্ধ রায় ফিরে আসার আগে যারা ফিরে এসেছেন তাদের মধ্যে ১৭ দিন নিখোঁজ থাকার পর ফিরে আসেন বাংলাদেশ জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি মিঠুন চৌধুরী ও দলের কেন্দ্রীয় নেতা আসিত ঘোষ অসিত। তাদের গ্রেফতার দেখিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর মধ্যে মিঠুনের বিরুদ্ধে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। আর তার সঙ্গে ষড়যন্ত্রে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় অসিতকে। গত সোমবার পল্টন এলাকা থেকে মিঠুন চৌধুরী ও মঙ্গলবার সেগুনবাগিচা থেকে অসিত চৌধুরীকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ ছাড়াও ফিরে এসেছেন দক্ষিণ বনশ্রী থেকে নিখোঁজ নকিয়া-সিমেন্সের সাবেক প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান আসাদ, এভেনটিস-স্যানোফির ফার্মাসিস্ট জামাল রহমান ও শাজাহানপুর থেকে ফল ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন। এছাড়াও ফিরে এসেছেন বিজেপির দুই নেতা মিঠুন চৌধুরী ও আসিত ঘোষ। কদমতলী থানায় দায়ের করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেফতার চৌধুরী আবদুল্লাহ আল ফারুক কিছুদিন আগে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। এতে তিনি সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে মিঠুন চৌধুরী ও আসিতের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করেন। ছয় জন ফিরে আসার ঘটনায় তাদের পরিবারে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফিরে এসেছে। গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা গত ৪ মাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে রহস্যজনক ‘নিখোঁজ’ ১২ জনের মধ্যে এ নিয়ে ৬ জন ফিরে আসার ঘটনা নিশ্চিত করে বলেছেন, বাকি ৬ জনকেও সন্ধান করা হচ্ছে। যে ৬ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে তারা হচ্ছেন, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. মুবাশ্বার হাসান সিজার, করিম ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি পুস্তক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী তানভীর ইয়াসিন করিম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ সাদাত আহমেদ, কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আমিনুর রহমান, কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইশরাক ও সাংবাদিক উৎপল দাস। নিখোঁজদের খুঁজে বের করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি সর্বাত্মক চেষ্টা করার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি। ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায় ফিরে আসার পর গণমাধ্যমে যা বলেছেন তাতে নিখোঁজের ঘটনাটির সন্দেহের তীর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকেই। ঘটনার দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে অনিরুদ্ধ বলেন, ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে বের হন তিনি। তখন সামনে থেকে এসে একটা লোক তাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি কি অনিরুদ্ধ রায়? আপনি কি বেলারুশের অনারারি কনসাল?’ এ কথা-সে কথা বলতে বলতে যখন আগাচ্ছি, তখন হঠাৎ আরেক লোক এসে ধাক্কা দিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে ফেলল। তারপর বলল নিচ দিকে তাকিয়ে থাক। ওরা আমারে এমনভাবে বসিয়ে রাখল যে কোন সিগন্যালে ট্রাফিক পুলিশ দাঁড় করালেও যেন বুঝতে পারে, একটা নরমাল লোক বসে আছে। তাদের নির্দেশনা ছিল আপনি আমাদের দিকে তাকাবেন না, ওপরের দিকে তাকাবেন না। তাকালে আপনার জীবন শেষ হয়ে যাবে। এমন হুমকির নির্দেশে তিনি নার্ভাস হয়ে যান। মুহূর্তের মধ্যে ঘটে গেল ঘটনাটা। আমি যে কিছু একটা আন্দাজ করব, সেই সময়ও পাইনি। আমার ড্রাইভারও কোন চিৎকার দেয়নি। অনিরুদ্ধ রায় গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঘটনার দিন বেলা সাড়ে চারটায় গাড়িতে তোলার পর বেশ অনেকক্ষণ গাড়িটি তাকে নিয়ে ঘুরেছে। যখন গাড়ি থেকে নামানো হয় তখন অন্ধকার। দুই দিক থেকে দুজন তার দুই কাঁধ ধরে হাঁটতে বলে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় বুঝতে পারেন, একটি দোতলা ঘর হবে। যে কক্ষে তাকে নিয়ে যায়, সেটা সাধারণ একটা এ্যাপার্টমেন্টের কক্ষের মতো। একটি নির্জন কক্ষে দীর্ঘ ৮১ দিন আটক ছিলেন ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়। সেই কক্ষে জিনিসপত্র বলতে শুধু একটি খাট ও বিছানাপত্র ছিল মাত্র। কক্ষের লাগোয়া ছিল একটি টয়লেট। কক্ষটিতে কোন জানালা ছিল না। বাইরের আলো ঢোকার কোন পথও ছিল না। শুধু টয়লেটের ওপরে ছিল ভেন্টিলেশনের একটা ছোট্ট পথ। সেখান দিয়েও অবশ্য বাইরে আলো আছে কি নেই, সেটা বোঝা যেত না। কক্ষটিতে ছিল একটি সিঙ্গেল খাট, খাটটি কাঠের। সাধারণ যে বাড়ির খাট, ওরকম। জাজিম-টাজিম যা যা দরকার তার সবই ছিল। সবকিছু গোছানো ছিল। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। খাবারের সময় খাবার দিয়ে যেত। দরজা বাইরের দিক থেকে ছিটকিনি লাগানো। ট্রেতে করে খাবার নিয়ে আসত। মাঝে মাঝে ব্যক্তির বদল হতো। জিজ্ঞেস করত, আপনি চিন্তা কী করলেন? ট্রের মধ্যে শুধু খাবার থাকত। খাবার ভাল ছিল। ভাত, তরকারি, মাছ, মাংস ভাজি, ডাল এসবই দিত। সকালে নাশতা, পরোটা ভাজি। মাঝে মাঝে খিচুড়িও দিত। অনিরুদ্ধ রায় যেদিন মুক্ত হন সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার রাত, ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। শেষ রাতের দিকে তাকে ডেকে তোলা হয়। ওরা বলল, ‘চলেন, আপনাকে বাড়িতে দিয়ে আসি। এসব ব্যাপারে কোন কিছু ঘাঁটাঘাঁটি কইরেন না। এরপর একটি মাইক্রোবাসে করে তাকে তার বাসার কাছের চার রাস্তার মোড়ে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় তারা। তিনি সেখান থেকে হেঁটে বাসায় ঢোকেন। তখন রাত সাড়ে চারটা থেকে পাঁচটা বাজে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে আসেন। তারপর ডাক্তারের পরামর্শ ছিল তাকে বিশ্রামে থাকতে হবে। অনিরুদ্ধ রায় গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা খোলাসা করে না বললেও ইঙ্গিতটা ছিল এমন যে, যারা তাকে অপহরণ করেছে তারা পেশাদার। নতুবা এত নিখুঁত পরিকল্পনায় অপহরণ করে এতদিন একটি কক্ষে রাখা সম্ভবপর ছিল না। দীর্ঘ ৮১ দিনই ছিলেন একটি কক্ষে। বাইরে বের হতে দেয়নি। খাবার সময় খাবার দিয়ে যেত। ট্রেতে করে খাবার নিয়ে আসত। দরজা বাইরের দিক থেকে ছিটকিনি লাগানো ছিল। তবে অনিরুদ্ধ রায় এসব কথা বললেও ফিরে আসার পর গণমাধ্যমে পাঠানো একটি চিঠিতে ব্যবসায়িক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন। পুরো ঘটনার জন্য তিনি তার ব্যবসায়িক অংশীদারকে দায়ী করেন। গণমাধ্যমে পাঠানো চিঠিতে অনিরুদ্ধ রায় বলেছেন, ‘আমি অনিরুদ্ধ কুমার রায়, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), আরএমএম গ্রুপ। আমি ব্যবসায়িক প্রতিহিংসার শিকার। আমার ব্যবসায়িক অংশীদার মহিউদ্দীন আহমেদ মাহিন গং আমার প্রতিষ্ঠিত তিনটি প্রতিষ্ঠান আরএমএম লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আরএমএম নিট ক্লথিং লিমিটেড ও আরএমএম সোয়েটার লিমিটেড (যার সম্পদের মূল্য ১৫০ কোটি টাকার অধিক) হস্তগত করার জন্য হেন কোন কাজ নেই, যা করেননি। ২৭ আগস্ট গুলশান ১-এর ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে মিটিং শেষে ফেরার পথে বিকেল সাড়ে চারটায় ওই বিল্ডিংয়ের নিচ থেকে আমাকে অপহরণ করা হয়। সম্ভবত ব্যবসায়িক প্রতিহিংসার কারণে এমনটা হয়েছে বলে আমি আশঙ্কা প্রকাশ করি। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক তখন এই বিষয়ে বলেন, ‘চিঠিটি গণমাধ্যমে দেখলাম। তবে তিনি পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ করেননি, এমনকি ওই চিঠির কপিও পুলিশকে দেননি। এমনকি গত তিন দিনে তার সঙ্গে তখন কথাও বলতে পারেনি পুলিশ। সম্প্রতি নিখোঁজ থাকার পর ফিরে আসা আরেক ব্যক্তি হিসেবে প্রাবন্ধিক, লেখক ফরহাদ মজহার যিনি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন। অপহরণ এবং উদ্ধার হওয়ার ৫ মাসের মাথায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেছেন, উদ্ধার হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। ফরহাদ মজহার এমন এক সময়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন যখন তার অপহরণের কাহিনী সাজানো বলে বর্ণনা করে পুলিশ মামলা করতে যাচ্ছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, ফরহাদ মজহারের অপহরণ রহস্যজনক। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত র‌্যালি শেষে সংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, তার কথাবার্তা, আচার আচরণ রহস্যজনক। তিনি ৫ মাস পর এসে হঠাৎ সংবাদ সম্মেলন ডেকে নিজের অবস্থান কেন জানান দিচ্ছেন? তিনি আরও বলেন, যারা গুম কিংবা নিখোঁজ হচ্ছেন, পুলিশের দায়িত্ব তাদের ফিরিয়ে আনা। তারা একা ফিরে এলে পুলিশ তদন্ত করবে। অপহরণ হলেও তদন্ত করবে। তবে পুলিশের দায়িত্ব বেশি। কাজী রিয়াজুল হক আরও বলেন, তিনি (ফরহাদ মজহার) যদি অপহৃতই হয়ে থাকবেন তবে তা তিনি আদালতে স্পষ্ট করে বলেননি কেন ? আর উদ্ধারের পর তিনি সে রকম অসুস্থ ছিলেন না। তিনি চাইলে তখনই ঘটনা স্পষ্ট করতে পারতেন। তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে- এমন কথাবার্তা ওঠায় তিনি সংবাদ সম্মেলন ডেকে কথা বলছেন। এটা আরও রহস্যের জন্ম দিয়েছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ফিরে আসার পরও লোকগুলো নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারেন না। তাই তারা চুপ থাকেন। আর এভাবে ধরে বা তুলে নিয়ে যাওয়ার সংস্কৃতির কারণে মানুষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আস্থা হারাচ্ছে। দেশে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আবার অপরাধীদের জন্যও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে এ ধরনের অপরাধ-অপকর্ম করা সহজ হয়ে উঠছে।
×