ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সঙ্কট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের পাশে;###;থাকুন ॥ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী

রোহিঙ্গা ফেরাতে বাংলাদেশ তুরস্ক একযোগে কাজ করবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা ফেরাতে বাংলাদেশ তুরস্ক একযোগে কাজ করবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও তুরস্ক একযোগে কাজ করে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিমের সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলেন। এদিকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যান্সার ইউনিট উদ্বোধন করেছেন বিনালি ইলদিরিম। আজ বুধবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাচ্ছেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী। তিনদিনের সরকারী সফরে সোমবার রাতে ঢাকা পৌঁছান তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল হলে একান্ত বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিনালি ইলদিরিম। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে স্ব স্ব দেশের প্রতিনিধিরা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। এই বৈঠকেরও নেতৃত্ব দেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে করবী হলে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে দু’টি সমঝোতা স্মারক সই হয়। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী তার বিবৃতিতে বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের প্রতি তুরস্কের অব্যাহত সহযোগিতার জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানকে ধন্যবাদ জানান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কটসহ দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করতে এবং পরস্পরকে সহযোগিতা চালিয়ে যেতে আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, পর্যটন, যোগাযোগসহ প্রধান প্রধান খাতে নিজেদের সহযোগিতা জোরদারের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। দু’দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও পারস্পরিক স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে বাংলাদেশ ও তুরস্ক একমত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আশা করি, আমাদের উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে তুরস্ক। শেখ হাসিনার পর বিবৃতি দেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, রোহিঙ্গা সঙ্কটসহ দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতি তুরস্কের সহযোগিতা থাকবে। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ইলদিরিম মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করেন। হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন বিনালি ইলদিরিম। এছাড়া সন্ধ্যায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করেন। দুটি সমঝোতা স্মারক সই ॥ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন এবং পণ্যের মাণ নিয়ন্ত্রণে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সহযোগিতা বাড়াতে তুরস্কের সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার বিকেলে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে দুই দেশের প্রতিনিধিরা এসব সমঝোতায় সই করেন। এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক হয়েছে বাংলাদেশের এসএমই ফাউন্ডেশন এবং তুরস্কের এসএমই ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের মধ্যে। অন্যটি হয়েছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এবং টার্কিশ স্ট্যান্ডার্ডস ইনস্টিটিউশনের মধ্যে। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একান্ত বৈঠক করেন। পরে তাদের নেতৃত্বেই দুই দেশের প্রতিনিধি দলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ॥ তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মঙ্গলবার সকাল দশটার দিকে তিনি স্মৃতিসৌধে পৌঁছালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, গণর্পূত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান তাকে স্বাগত জানান। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধে প্রায় ২৩ মিনিট অবস্থান করেন। তিনি শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় সশস্ত্রবাহিনীর একটি চৌকস দল সশস্ত্র সালাম জানায়। পরে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইতে সই করেন এবং একটি ‘পারিজাত’ গাছের চারা রোপণ করেন। এছাড়া তিনি ধানম-িতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি এ সময় জাদুঘরের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন এবং পরিদর্শক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী শের-ই-বাংলা নগরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যান্সার ইউনিট উদ্বোধন করেন। তুর্কী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক ॥ তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়ালদিরিমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুইদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও রোহিঙ্গা ইস্যু ও বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকারের ভূমিকা জানতে চেয়েছেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়াও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের রাজনীতি চলছে এবং আগামী নির্বাচনের অবস্থা কি দাঁড়াবে, সেই নির্বাচনে আমাদের কি ভূমিকা থাকবে, সরকারের ভূমিকা কেমন আছে, দেশ কেমন চলছে, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার কি ভূমিকা পালন করছে এসব বিষয় জানতে চেয়েছে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়ালদিরিম। আামরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি আর তিনি তার মতামত দিয়েছেন। বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে পারস্পরিক আলোচনা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছেন মূলত রোহিঙ্গা সমস্যা সরেজমিনে দেখার জন্য। এই রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিরাপত্তা সহকারে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায় এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলতে তিনি এদেশে এসেছেন। আপনারা জানেন প্রথম থেকেই তুরস্ক সরকার এবং জনগণ এ ব্যাপারে সহানুভূতিশীল ছিল। রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে ফেরত যেতে পারে এ জন্য প্রথম থেকেই কাজ করছে তুরস্ক। তাদের ফার্স্ট লেডি প্রথমেই এখানে এসেছিলেন। তারপরই বিষয়টা গোটা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। বৈঠকে বিএনপির কি বক্তব্য ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, আমরা আমাদের বক্তব্য বলেছি। তারা মনে করেন, রোহিঙ্গাদের সসম্মানে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। স্থায়ী সমাধান করতে হবে। পুরোপুরি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। তারজন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। আর জেরুজালেম ও ইসরাইল ইস্যুতে তুরস্ক ফিলিস্তিনিদের পক্ষে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী। খালেদা জিয়ার সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান বৈঠক হয়নি বলেও তিনি জানান। সন্ধ্যা সোয়া ৬টা থেকে বৈঠক শুরু হয়ে চলে প্রায় ৪৫ মিনিট। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী প্রমুখ।
×