ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুই পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে ওয়ার্কিং কমিটি কাজ করবে ॥ যৌথ গ্রুপ গঠন

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

দুই পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে ওয়ার্কিং কমিটি কাজ করবে ॥  যৌথ গ্রুপ গঠন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ নিপীড়ন ও নিধনযজ্ঞের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে দুই দেশের একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। এই যৌথ গ্রুপ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন শুরু করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেবে। মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের জানান, দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে ১৫ জন করে কর্মকর্তা নিয়ে মোট ৩০ সদস্যের এই গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। তবে এই গ্রুপ কবে থেকে কাজ শুরু করবে, সে বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছু বলেননি। শুধু ইঙ্গিত দেন শীঘ্রই প্রত্যাবাসন শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আমরা আশাবাদী। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে এ পর্যন্ত যা যা করা হয়েছে এতে তিনি সন্তুষ্ট কি-না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি সন্তুষ্ট। দুই দেশের মধ্যে গঠিত এই ওয়ার্কিং গ্রুপের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে ২৩ নবেম্বর নেপিডোয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি সম্মতিপত্র সই হয়। সেই অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়েছে। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফেরত পাঠাতে সব ধরনের কাজ শুরু করবে। এই গ্রুপ রোহিঙ্গাদের ভেরিফিকেশন (যাচাই-বাছাই), সময় নির্ধারণ, পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নেয়া, যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করবে। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, সেই চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করবে এই গ্রুপ। ওই সম্মতিপত্র স্বাক্ষরের তিন সপ্তাহের মধ্যে ‘যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব একটি সুনির্দিষ্ট চুক্তিতে সই করবে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। সম্মতিপত্র স্বাক্ষরের ২৫ দিনের মাথায় মঙ্গলবার ঢাকায় এই যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হলো। ওয়ার্কিং গ্রুপের অগ্রগতি ও কার্যক্রম নিয়ে উভয় পক্ষই প্রতি তিন মাস পর পর নিজ নিজ সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ করবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় এই যৌথ গ্রুপ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাসহ (ইউএনএইচসিআর) অন্যান্য আগ্রহী উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা নেবে। প্রয়োজনে জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে যুক্ত করবে। রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে নিপীড়নের মুখে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। বর্মী সেনা অভিযান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে শরণার্থীদের ফেরত নিতে সম্মত হয় মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরার পথ তৈরি করতে গত ২৩ নবেম্বর নেপিডোয় দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেখানে বলা হয়, প্রথম দফায় শুধু এবার আসা শরণার্থীদেরই ফেরত নেবে মিয়ানমার। ওই চুক্তি স্বাক্ষরের তিন সপ্তাহের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা হবে। চুক্তি অনুযায়ী ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন প্রক্রিয়া ১৪ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও প্রক্রিয়াটি পাঁচদিন পরে শুরু করল উভয় দেশ। নেপিডোয় চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ দিনের মাথায় মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব ইউ মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সোমবার ঢাকায় পৌঁছে। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই দেশের বৈঠকে তিনিই নয় সদস্যের মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। আর বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। প্রায় চার ঘণ্টা এই বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর উপস্থিতিতে দুই দেশের সচিব যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের দলিলে (টার্মস অব রেফারেন্স) সই করেন। ২৩ নবেম্বর দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই হলেও অনেক আগে থেকেই যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রক্রিয়া চলছিল। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচির দফতরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ের গত ৩ অক্টোবর ঢাকা সফরকালে ‘যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনে সম্মত হয় উভয় দেশ। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ২ নবেম্বর যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্যদের তালিকা হস্তান্তর করে এবং মিয়ানমার ১ ডিসেম্বর তালিকা হস্তান্তর করে। কমিটির কার্যপদ্ধতি নিয়ে বাংলাদেশ ১৪ নবেম্বর প্রস্তাব করে এবং এর বিপরীতে মিয়ানমার ৪ ডিসেম্বর তাদের পাল্টা প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১০ ডিসেম্বর এর ফিরতি প্রস্তাব করা হয়। মিয়ানমারের প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার সভা হয়। সেখানে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন, বিজিবি, কক্সবাজার প্রশাসক, মিয়ানমারে বাংলাদেশ মিশনের প্রতিনিধিরা সদস্য হিসেবে রয়েছেন। উল্লেখ্য, গত বছরের ৯ অক্টোবর সেনা অভিযানের মুখে ৮৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর চলতি বছর ২৫ আগস্টের পর নতুন করে বাংলাদেশে আসে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে জাতিগত দমন-পীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে শরণার্থী জীবন কাটাচ্ছে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বাংলাদেশের আহ্বানে ১৯৯২ সালে দ্বিপক্ষীয় একটি চুক্তির আওতায় মিয়ানমার কিছু রোহিঙ্গাকে ফেরত নিলেও পরে সেই প্রক্রিয়া আর এগোয়নি। এখন গত ২৩ নবেম্বর রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে নতুন করে চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এই যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। এদিকে স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস ও কক্সবাজার থেকে জানান, মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে দুই দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠিত হওয়ায় কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফের অধিবাসীদের মধ্যে স্বস্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন যে, তারা তাদের নিজ দেশে ফিরে যাবে। তবে এর মধ্যে অনুপ্রবেশও অব্যাহত আছে। ফলে উৎকণ্ঠা পুরোপুরি কাটছে না। টেকনাফ এবং উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে এখন আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। ক্যাম্পগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ওই এলাকার জনজীবনেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। প্রতিদিন আসা রোহিঙ্গারা গড়ে তুলছে নতুন নতুন বসতি। কৃষি জমিও হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম। অনেকেই শীত মৌসুমে তাদের জমিতে এবার শাকসবজির চাষাবাদ করতে পারেনি। এখন রাখাইন থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের চেয়েও কক্সবাজারের ওই দুই উপজেলার বাসিন্দাদের অবস্থা নাজুক। স্থানীয়দের মধ্যে খুশির বন্যা ॥ মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক ও রোহিঙ্গা ফেরতের বিষয়ে ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের খবরে উখিয়া ও টেকনাফের সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে চলছে। স্থানীয় অধিবাসীরা এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে দাবি জানিয়েছেন। রোহিঙ্গা সংগ্রাম ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, মানবিক কারণে এখানে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিলেও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ায় তারা স্থানীয়দের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে। যতদ্রুত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো যায়, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাবে। ছোট্ট দুই উপজেলায় লাখ লাখ রোহিঙ্গার অবাধ বিচরণে স্থানীয়দের ঘর থেকে বের হওয়াও মুস্কিল হয়ে পড়েছে। হাটে বাজারে এমনকি উখিয়ার কুতুপালং থেকে টেকনাফের নয়াপাড়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের কারণে গাড়িতেও ওঠা দায়। রাখাইনে আরও একটি গণকবরের সন্ধান লাভ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরও একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ওই গণকবরের সন্ধান পেয়েছে বলে দাবি করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে এ তথ্য জানিয়েছে। মিন অং হা¬ইংয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলা হয়, রাখাইন প্রদেশের রাজধানী সিটওয়ে থেকে ৩০ মাইল উত্তরের গ্রাম ইনদিনে একটি গণকবরে অজ্ঞাত বহু ব্যক্তির মরদেহ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে বলেও সোমবার স্ট্যাটাসে জানানো হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী বলছে, ওই গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা প্রাথমিকভাবে তদন্ত করেছে। মিন অং হা¬ইং বলেছেন, ইনদিন গ্রামের গণকবরে মরদেহ পাওয়ার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত শেষ হয়েছে। এর আগে মংডুতে ‘হিন্দু গণকবর’ সন্ধান পেয়েছিল সেনাবাহিনী। এবার সিটওয়েতেও একটি গণকবর খুঁজে পেয়েছে বলে জানিয়েছে। আবাসিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম ॥ বনানী ও নিকেতনে ৮ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিলগালা স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানোর দায়ে বনানী ও নিকেতনে আটটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিলগালা করেছে রাজউক। এছাড়াও ২৫ বাড়ির সামনে অবৈধভাবে গড়ে তোলা গাড়ি ওঠানামার ঢালু সিঁড়ি ও গার্ডেনিং ওয়াল ভেঙ্গে দিয়েছে। রাজউকের অঞ্চল-৪-এর (গুলশান, মহাখালী, পূর্বাচল) পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার অলিউর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযানটি চলে। আবাসিক ভবনের ফ্ল্যাটে বিউটি পার্লারসহ বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানোর অপরাধে চারটি ফ্ল্যাট সিলগালা করে দেয়া হয়। ওসব ফ্ল্যাটের গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। অন্যদিকে নিকেতন এলাকায় অভিযান চালায় রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার ও অথরাইজড অফিসার আদিলুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স। অভিযানে পঞ্চমুখী সুপারশপ এ্যান্ড মিডিয়া ক্যাফে নামে একটি রেস্টুরেন্ট উচ্ছেদ করা হয়। অভিযানে রাজউকের সহকারী অথরাইজড অফিসার মাকিদ এহসান ও কায়সার পারভেজসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×