ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিবিসিকে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার

রাখাইনে গণহত্যা সুপরিকল্পিত

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

রাখাইনে গণহত্যা সুপরিকল্পিত

জাতিসংঘের শীর্ষ মানবাধিকার কর্মকর্তা বলেছেন, মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে বলে আদালতে রুল দিলে তিনি বিস্মিত হবেন না। সোমবার টেলিভিশনে প্রচারিত এক সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন। ইয়াহু নিউজ। জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জায়েদ রায়াদ আল হুসাইন বিবিসিকে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যা ও নির্যাতন সুপরিকল্পিত। এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর তৎপরতা বন্ধ করতে ভূমিকা রাখার জন্য তিনি দেশটির নেত্রী আউং সান সুচির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ইতোমধ্যেই রাখাইনের নিপীড়ন ও নৃশংসতাকে ‘জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের পাঠ্যবইয়ের উদাহরণ’ অভিহিত করে সহিংসতা বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ছিলেন। এ বিষয়ে সর্বশেষ তার বক্তব্য ছিল কিছুটা মৃদু। তবে চলমান সহিংসতার বিষয়ে তার উদ্বেগ স্পষ্ট। বিবিসিকে দেয়া ওই সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে যে মাত্রায় সহিংসতা ঘটেছে তাকে গণহত্যা বলার সব রকম উপাদানই রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, যা ঘটেছে তার সবটুকু প্রমাণ করা সহজ নয়, কারণ সেখানে অপরাধের আলামতগুলো মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু যা আমরা দেখেছি তার ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে কোন আদালত যদি একে গণহত্যা বলে অভিহিত করে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। জায়েদ বলেন, রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের প্রতি মিয়ানমার কর্ণপাত না করার বিষয়টি তাকে উদ্বিগ্ন করেছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২৫শে আগস্ট রাখাইনে সেনাবাহিনীর নিপীড়ন শুরুর এক মাসের মধ্যে ৭ হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে ৫ বছরের কমবয়সী শিশু ছিল প্রায় ৮শ’, ডক্টর্স স্যঁ ফ্রন্টিয়ার্স নামে একটি সাহায্য সংস্থার করা অতি সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে একথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই শিশুদের মধ্যে অন্তত ৬০ ভাগকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। রাখাইনের রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে, পিটিয়ে, ধর্ষণ-নিপীড়ন করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে সংস্থাটি জানায়। শত শত গ্রাম পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সেখানে ব্যাপক হত্যা আর গণধর্ষণের বর্ণনা দিয়েছেন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। স্যাটেলাইটে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, বার্মার (মিয়ানমার) রাখাইন রাজ্যে গত দুইমাসে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। অক্টোবর ও নবেম্বরে মাসে ৪০টি গ্রামের ভবনসহ বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে বলে সংস্থাটি দেখতে পেয়েছে। ২৫শে আগস্টের পর রাখাইনে এ নিয়ে ৩৫৪টি গ্রাম আংশিক বা পুরোপুরি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে। গণহত্যা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে আনুমানিক ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী। জায়েদ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, আন্তর্জাতিক জিহাদী গ্রুপগুলো এসব শরণার্থীদের ব্যবহার করে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে পারে। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র গণহত্যা ও নির্যাতনকে ইতোমধ্যেই ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে অভিহিত করেছে। মানবাধিকার গ্রুপগুলো একে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেছে। জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী একটি জাতি, জাতিগোষ্ঠী, কোন একটি বর্ণের লোকজন বা কোন ধর্মীয় গ্রুপকে আংশিক অথবা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার কাজটি জেনোসাইড বা গণহত্যা বলা হয়ে থাকে। বাস্তব ক্ষেত্রে এগুলোর উদাহরণ রয়েছে।
×