ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সমস্যাকে কাছ থেকে দেখ ম্যাট ড্যামন ॥ -ধ্রুব হাসান

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

সমস্যাকে কাছ থেকে দেখ ম্যাট ড্যামন ॥  -ধ্রুব হাসান

[ম্যাট ড্যামন হলিউডের স্বনামধন্য অভিনেতা। ১৯৯৭ সালে ‘গুড উইল হান্টিং’ নামে ছায়াছবিতে অভিনয়ের জন্য অস্কার পুরস্কার জয় করে। গত বছরের ৩ জুন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে মূল ভাষণ দেন। সেখানে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জীবনকে যেভাবে দেখেছেন, জেনেছেন বিদায়ী ছাত্রছাত্রীদের সামনে তাই তুলে ধরেন। এখানে তার ভাষণের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো দেয়া হলো সিমিউলেশন থিওরির কথা হয়ত শুনেছ। হয়ত এ বিষয়ে ম্যাক্স টেগমার্কের ক্লাসও করেছ। অক্সফোর্ডে নিক বোবট্রম নামে এক দার্শনিক আছেন। তিনি বলেছেন যে মহাবিশ্বে কোথাও যদি সত্যিকারের উন্নত রূপের বুদ্ধিমান প্রাণী থেকে থাকে তাহলে সেই প্রাণী সম্ভবত এতই বুদ্ধিমান যে সম্ভবত গোটা মহাবিশ্ব- হয়ত কয়েক ট্রিলিয়ন মহাবিশ্ব-হয়তবা আমাদের নিজস্ব মহাবিশ্বেরও নকল রূপ পরিচালনায় সক্ষম। এর পেছনে মৌলিক ধারণাটি যা আমি বুঝি তা হলো আমরা হয়ত বাস করছি এক বিশাল সিমিউলেশনের মধ্যে যা পরিচালিত হচ্ছে ঢের-টের বেশি বুদ্ধিমান কোন সভ্যতার দ্বারা। এ হলো বিশাল এক কম্পিউটার গেম এবং আমরা তার কিছুই জানি না। বিপুলসংখ্যক পদার্থবিজ্ঞানী, মহাকাশবিজ্ঞানী এ সম্ভাবনা নাকচ করে দেননি। হেইডেন প্লানেটোরিয়ামের নীল দ্য গ্রেসি টাইসনের মডারেশনে পরিচালিত এক আলোচনা অনুষ্ঠান আমি দেখেছি যেখানে আলোচক প্যানেল এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন জবাব দিতে পারেননি। টাইসন নিজেও সেই সম্ভাবনা অর্ধেক-অর্ধেক বলে উল্লেখ করেছিলেন। ওটা কতখানি বিজ্ঞানসম্মত সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। তবে সম্ভাবনা হিসেবে যে সংখ্যার উল্লেখ করা হয়েছে তাতে আমি অভিভূত। এটা এক পাগলামি ধারণা। কিন্তু ব্যাপারটা তেমনই যদি হয় তাহলে? সে যাই হোক, এমআইটির গ্র্যাজুয়েটরা। তোমাদের এখান থেকে বেরিয়ে সত্যিকারের চিত্তাকর্ষক কাজ করতে হবে, গুরুত্বপূর্ণ কাজ, উদ্ভাবনমূলক কাজ। কারণ এই বিশ্ববাস্তব হোক বা কম্পিতই হোকÑ এর কিছু সমস্যা আছে যেগুলোর সমাধান তোমাদের করতে হবে। যেমন অর্থনৈতিক অসাম্য একটা সমস্যা। তেমনি আছে উদ্বাস্তু সঙ্কট, ব্যাপক বৈশ্বিক নিরাপত্তাহীনতা, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ, উগ্র স্বদেশিকতার ঝোঁক, আমেরিকার মতো দেশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো চরম দক্ষিণপন্থী প্রার্থীর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে যাওয়া। অথবা ব্রেক্সিটের কথাই ধরÑ এ যে পাগলামি ধারণা যে ব্রিটেনের সামনে সর্বোত্তম পথটা হলো ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অকূল সাগরে ভেসে যাওয়া। এই সমস্যাবলীর সঙ্গে যোগ হচ্ছে আমেরিকান রাজনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা, স্ক্যান্ডেলকে পুঁজি করে মিডিয়ার টিকে থাকা, জনগণের অর্থ আত্মসাত করে চলা ব্যাংকিং ব্যবস্থার দেউলিয়াত্ব। আমাদের এই বিশাল সমস্যাকবলিত জগতে পা বাড়ানোর আগে তোমাদের হাতে একটা উপদেশ হস্তান্তর করতে চাই যা এক দশকের কিছু আগে বিল ক্লিনটন আমাকে দিয়েছিলেন। যখন সেই উপদেশটা উনি আমায় দিয়েছিলেন তখন ওটাকে আর উপদেশ মনে হয়নি, তার চেয়ে বেশি সরাসরি একটা আদেশের মতো মনে হয়েছিল। উনি বলেছিলেন, সমস্যার কথা মনে হলে সমস্যার দিকে তাকাও। আজ তোমাদের আমি সেই একই আহ্বান জানাতে চাই : সমস্যার কথা ভাবলে সমস্যার দিকে তাকাও। শুধু তাকাবে না। সমস্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। সমস্যার কাছে হেঁটে গিয়ে হাজির হবে। সমস্যার চোখের দিকে তাকাবে, তারপর তোমার নিজের দিকে তাকাবে, অতঃপর ঠিক করবে সমস্যার ব্যাপারে কি করা যায়। আমার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি যে, সত্যিকার অর্থে নিজে গিয়ে কোন কিছু দেখার বিকল্প স্রেফ আর কিছুই হতে পারে না। অনেকের মতো এই অন্তর্দৃষ্টি আমি আমার মায়ের কাছে লাভ করেছি। কিশোর বয়সে আমাদের মা শিখিয়েছিলেন যে বাইরের জগতটাকে দেখতে পারা কত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আমাদের গুয়াতেমালার মতো জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন যেখানে আমরা চরম দারিদ্র্য দেখেছি। ওটা আমার জীবনের গোটা কাঠামোই বদলে দিয়েছিল। সেই একই তাড়না থেকে আমি ও আমার ভাই ২০০৬ সালে জাম্বিয়ায় গিয়েছিলাম ‘ওয়ান ক্যাম্পেন’ নামক একটি সংগঠনের সদস্য হিসেবে। উন্নয়নশীল দেশের চরম দারিদ্র্য ও প্রতিরোধযোগ্য রোগব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন সংগঠনটি গঠিত হয়েছিল। সেই সফরে একটি ছোট সমাজে এক বালিকার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। আমি জানতে পেরেছিলাম সে স্কুলে যায় এবং স্কুলে যাওয়ার কারণ একটাই এবং সেটা হলো বিশুদ্ধ পানি। বিশুদ্ধ পানি তার স্কুলের কাছাকাছি এক নলকূপে পাওয়া যেত। তাই অন্য মেয়ে ও মহিলাদের মতো তাকে পানি আনার জন্য সারাদিন কয়েক মাইল যাওয়া আসার পেছনে ব্যয় করতে হয়নি। বলেছিল- না, লুসাকায় যেতে চায়, নার্স হতে চায়। তার মানে বিশুদ্ধ পানির মতো একটা মৌলিক জিনিস এই বালিকাটিকে স্বপ্ন দেখার সুযোগ দিয়েছে। সমস্ত সমাজ, অর্থনীতি, দেশের ভবিষ্যত ওই এক গ্লাস পানির মধ্যে আটকে আছে। কত অসংখ্য লোক লাখ লাখ মানুষ নিরাপদ বিশুদ্ধ পানি পায় না কিংবা নিরাপদ, বিশুদ্ধ ও প্রাইভেট জায়গায় বাথরুম করার সুযোগ পায় না। এই বাস্তবতাই এ ব্যাপারে কিছু একটা করতে আমাদের সঙ্কল্প বাড়িয়ে তুলেছে। তোমাদের দৃষ্টির অন্ধত্বের দিকগুলো দূর করে দাও। কারণ এগুলোই তোমাদের বৃহত্তর ছবিগুলোকে অনুধাবন করার ব্যাপারে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। আমি তোমাদের সামনে নিজেকে একজন আমেরিকান, শ্বেতাঙ্গ, পুরুষ ছায়াছবি তারকা হিসেবে দেখতে পাচ্ছি। আমার অন্ধ দিকগুলো কোথায় শুরু কোথায় শেষ তার কোন কূলকিনিারা আমি পাই না। তবে দুনিয়াটার দিকে তাকান এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়াই আমাদের অন্ধ দিকগুলো খুঁজে বের করার পথে প্রথম পদক্ষেপ। আর তখনই আমরা সত্যিকার অর্থে নিজেদের ভালভাবে বুঝতে এবং কিছু কিছু সমস্যার সমাধান দিতে শুরু করতে পারি। সেটাকে লক্ষ্য হিসেবে স্থির করে তোমরা আরও কিছু বিষয়কে মনে রাখবে কাল আশা করি। প্রথমত, কখনও কখনও তোমরা ব্যর্থ হবে এবং সেটা ভাল কারণ তরুণ অভিনেতা হিসেবে বেন ও আমি যেসব অডিশন দিতাম তার মতো খুব জিনিসই আমার ভবিষ্যত নির্ধারণ করে দিতে পেরেছে। কারণ অডিশনের জন্য আমরা বাস ধরে নিউইয়র্কের এক জায়গায় গিয়ে হাজির হতাম, কখন আমাদের পালা আসে তার অপেক্ষায়, একটা দৃশ্যে অভিনয় করতে পারার জন্য আমাদের হৃদয় কেঁদে উঠত এবং তারপর আমাদের বলা হতো ‘ওকে থ্যাঙ্কস’। মানে খেল খতম। মহান দার্শনিক বেঞ্জামিন এফ্লেক একদা বলেছিলেন ‘আমার ভাল ধ্যান-ধারণা কতটা ভাল তা দিয়ে আমাকে বিচার কর, আমার খারাপ ধ্যান-ধারণা কত খারাপ তা দিয়ে নয়। কোন প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া বিব্রতকর নয়। এটা একটা সুযোগ। প্রশ্ন করতে ভয় পেয় না। দ্বিতীয় যে কথাটা তোমাদের বলতে চাই তা হলো তোমাদের শুনে যেতে হবে। বিশ্ববাসী ভাল হোক মন্দ হোক তোমাদের ভাবনা শুনতে চায়। কিন্তু আজ ‘গ্রহণ’ থেকে ‘প্রেরণে’ উত্তীর্ণ হওয়ার দিন নয়। সেটা করলে তোমাদের শিক্ষা শেষ হয়ে যাবে এবং তোমাদের শিক্ষা কখনই শেষ হওয়া উচিত নয়। কর্মক্ষেত্রের বাইরেও নিজেদের চ্যালেঞ্জ করার উপায় রয়ে গেছে। অনলাইন লেকচার শুনবে। হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে প্রেসিডেন্ট ওবামা যা বলেছিলেন আমার বেশ ভাল লেগেছে। তিনি বলেছিলেন গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন সমঝোতা। এমনকি আপনি এক শ’ ভাগ সঠিক হলেও এই সমঝোতা দরকার।
×