ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘দ্য কুইন্স ইয়াং লিডারস এ্যাওয়ার্ড’ শিরোনামের এই পুরস্কার দেয়া হয় কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করা ৬০ জন তরুণকে। এবার বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন আয়মান সাদিক এবং জায়বা তাহিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর তারা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের হাত থেকে এ

দ্য কুইন্স ইয়াং লিডার জায়বা-আইমান ॥ -সুমন্ত গুপ্ত

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

দ্য কুইন্স ইয়াং লিডার জায়বা-আইমান ॥ -সুমন্ত গুপ্ত

আগামীর ভোর হবে অনাবিল এক অনুপম ভোর। যার আলো ছড়িয়ে যাবে অনেকদূর। শিশির কানে মাদল বাজাবে আগামীর সূর্য। যার আলোয় আলোকিত বিশ্ব। আগামীর ডাকে সাড়া দিয়ে হেসে খেলে গড়ে উঠবে ভবিষ্যত প্রজন্ম। যার সুপ্ত চিন্তার লালন হবে স্বপ্নের বীজ। আমাদের তরুণ প্রজন্ম স্বপ্ন দেখে আগামীর। তারা সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে বিশ্বের বুকে উজ্জ্বল করে দেশের মুখ। ঠিক তেমনি উজ্জ্বল তারুণ্য আমাদের টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক এবং ফেমের প্রতিষ্ঠাতা জায়বা তাহিয়া। মানুষের জীবন মান উন্নয়নে দীর্ঘস্থায়ী ভূমিকা রাখছেন যেসব তরুণ, ২০১৪ সাল থেকে ব্রিটেনের রানীর পক্ষ থেকে তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। ‘দ্য কুইন্স ইয়াং লিডারস এ্যাওয়ার্ড’ শিরোনামের এই পুরস্কার দেয়া হয় কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করা ৬০ জন তরুণকে। এবার বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন আয়মান সাদিক এবং জায়বা তাহিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর তারা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের হাত থেকে এ সম্মাননা গ্রহণ করতে যাবেন। যার ছোটবেলায় ‘পোকেমন’ কার্টুন সিনেমাটি তার খুব প্রিয় ছিল। কার্টুন দেখতেন আর ভাবতেন বাড়ির পাশের ফুটবল মাঠটি হবে তার পোকেমন ব্যাটেলের জন্য। আর তিনি হবেন সেই ব্যাটেলের পোকেমন মাস্টার। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। পোকেমন মাস্টার হতে চেয়ে হয়ে গেলেন স্কুল মাস্টার তাও আবার অনলাইনে। আয়মান যে সব সময় একজন শিক্ষকই হতে চেয়েছিলেন, তা নয়। বাবা সেনাবাহিনীতে আছেন, তাই আর্মি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তিনি বড় হয়েছেন। যদিও শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরির মাধ্যমে একটা অনলাইন স্কুল চালু করার সঙ্গে তার ছোটবেলার স্বপ্নের কোন যোগসূত্র নেই, তবে আয়মান মনে করেন, শৃঙ্খলা আর বিনয় তিনি তার পরিবার থেকেই পেয়েছেন। তিনি নাকি একটা সময় প্রকৌশলীও হতে চেয়েছিলেন। অবশ্য এখন তিনি যা করছেন, সেই কাজটা ‘প্রকৌশল’ থেকে খুব বেশি দূরে নয়। একজন প্রকৌশলীর মতোই তিনি কঠিন সব সমস্যার সমাধান বলে দেন তার সহজাত সাবলীল ভঙ্গিতে। নিজের মেধা কাজে লাগিয়ে তিনি সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। ২০১৫ সালে আয়মান তৈরি করেন এই টেন মিনিট স্কুল। বর্তমানে টেন মিনিট স্কুল দেশের একমাত্র সাইট যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য নানা রকম টিউটোরিয়ালসের ১ হাজার ৪১১টি ভিডিও রযেছে। যেগুলো ৭০ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে। ২৮ হাজার ৪৫৫টি কুইজ ও মডেল টেস্টের মাধ্যমে অনুশীলন, নিজের অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা অর্জন, সহপাঠি ও অন্যদের সঙ্গে নিজের অবস্থান যাচাইসহ ইন্টারনেটে নেই এমন খুঁটিনাটি তথ্যগুলোও সহজে পেয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের লাইভ ফিচার ব্যবহার করে প্রতিদিন লাইভ ক্লাসেরও ব্যবস্থা থাকছে এই স্কুলটিতে। অন্যদিকে জায়বা, যার জন্ম বাংলাদেশে হলেও লেখাপড়ার জন্য তাকে অনেকটা সময় জন্মভূমির বাইরে কাটাতে হয়েছে। লেখাপড়া শেষে নিজ দেশে ফেরার পর এ দেশের অনেক নারীর করুণ জীবনযাত্রা ও তাদের প্রতি সহিংসতার চিত্র তার ওপর একটা অন্য রকম প্রভাব ফেলে। এই প্রভাব থেকেই নিজের ক্যারিয়ারের কথা খুব একটা না ভেবে তিনি একটা বিচিত্র কাজ করে বসলেন। বিভিন্ন বস্তি ঘুরে মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো শুরু করলেন। যেন তারা নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা দিতে পারেন, চার দেয়ালের গি তে আবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে আত্মনির্ভরশীল হতে পারেন। শুরুতে শুধু আত্মরক্ষা দিয়ে শুরু হলেও এখন মেয়েদের আরও নানা রকম দক্ষতা যেমন সাইকেল চালানো, কম্পিউটারের কাজ, বিভিন্ন পণ্য তৈরি ও বাজারজাতকরণ শেখানোর ওপরও জোর দেয়া হচ্ছে। বস্তিতে যেহেতু আগুন লাগার ভয় থাকে, তাই ইলেক্ট্রনিকসের কাজ শিখে মেয়েরা নিজেরাই স্বল্পমূল্যে ‘ফায়ার সেফটি এ্যালার্ম’ তৈরি করেছেন। তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছে। ‘প্রজেক্ট আত্মরক্ষা’ শিরোনামে এভাবেই শুরু হয় জায়বা তাহিয়ার কার্যক্রম। ধীরে ধীরে তিনি গড়ে তোলেন ফিমেল এমপাওয়ারমেন্ট মুভমেন্ট বা ফেম নামের একটা সংস্থা। বর্তমানে সমাজে নারীদের সমতা প্রতিষ্ঠা ও সহিংসতা নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছেন। অপরাধবিজ্ঞান থেকে ডিগ্রী নিয়ে পুলিশ বাহিনীতে গবেষণা করেন জায়বা, যেটি তাকে নারীদের সমস্যা গভীরভাবে বুঝতে সহায়তা করেছে। এরপর থেকে নিম্নবিত্ত নারীদের সমস্যা নিয়ে কাজ করতে থাকে সে। ২০১৭-১৮ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে তাকে ‘গ্লোবাল সেইপার’ হিসেবে নির্বাচিত করে। তরুণদের নিয়ে নানা ধরনের প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন জায়বা। বিশেষ করে আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ ও সাইক্লিং ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে নারীদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
×