ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জানুয়ারির পর আর সময় বাড়াবে না বিটিআরসি

মোবাইল নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের নিলাম ফের পেছাল

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

মোবাইল নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের নিলাম ফের পেছাল

ফিরোজ মান্না ॥ মোবাইল নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল বা এমএনপির (মোবাইল নম্বর পোর্ট্যাবিলিটি) নিলাম আবারও এক মাস পিছিয়ে গেছে। এখন সম্ভাব্য তারিখ ধরা হয়েছে আগামী বছর জানুয়ারি মাসের যে কোন দিন নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের চূড়ান্তভাবে জানিয়ে দিয়েছিল নিলাম অনুষ্ঠান হবে এ বছরের ডিসেম্বরে। অনিবার্য কারণ দেখিয়ে এমএনপি নিলাম পেছানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সময় পেছানোর পরও মোবাইল অপারেটররা আপত্তি তুলেছে। কিন্ত বিটিআরসি অপারেটরদের আর কোন সুযোগ দেবে না। জানুয়ারি মাসেই এমএনপি সেবা চালু করার সব চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, আমরা জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতেই এমএনপি সেবা গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দেয়া জরুরী। জানুয়ারিতে এই প্রযুক্তি মানুষের হাতে পৌঁছে দেয়ার জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ ও অপারেটর উভয়পক্ষই লাভবান হবে। সূত্র জানিয়েছে, নিলাম প্রক্রিয়ার সব প্রস্তুতি শেষ হওয়ার পর মোবাইল অপারেটররা আবার বিষয়টি নিয়ে টালবাহানা শুরু করেছেন। তারা বলছে, এখন পর্যন্ত তাদের প্রস্তুতি শেষ হয়নি। তাই এটি চালু করা হলে গ্রাহক সেবা দেয়া কঠিন হবে। তাছাড়া এমএনপির নীতিমালার মধ্যেই কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। যদি জানুয়ারিতে এই সেবা চালু করা হয় তাহলে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখে এমএনপি চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা। বিটিআরসি বলছে, অপারেটরদের সঙ্গে নিয়েই এমএনপির গাইডলাইন ঠিক করা হয়েছে। এখন তারা কোন আপত্তি তুলতে পারেন না। এমএনপি চালু হলে গ্রাহক তার ইচ্ছেমতো অপারেটর বদল করতে পারবেন। এতে গ্রাহক সুবিধা বাড়বে। বিশ্বের অনেক দেশেই এমএনপি সুবিধা থাকলেও দেশে কয়েক বছর ধরে এমএনপি চালুর চেষ্টা করেও বার বার ব্যর্থ হতে হয়েছে। এবারও এমএনপি সেবা চালু নিয়ে মোবাইল অপারেটররা অসহযোগিতা করছে। যতই আপত্তি তোলা হোক এ বছর গ্রাহকরা এমএনপি সুবিধার আওতায় চলে আসবে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি। বিটিআরসি জানিয়েছে, দীর্ঘ চার বছর অপারেটরদের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এখন আর কোন সময় দেয়া হবে না। গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর এমএনপি চালু করার জন্য নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তখন ৫ কোম্পানি লাইসেন্স নেয়ার জন্য আবেদন করেছিল। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিলাম প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়। ঠিক করা হয় মোবাইল অপারেটরদের বিউটি কনটেস্টের মাধ্যমে লাইসেন্স দেয়া হবে। এজন্য বিটিআরসি একটি কমিটি গঠন করেছিল। কমিটি নির্দিষ্ট যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত করবে। এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কারিগরি ও আর্থিক মানদ- যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থাও নিতে পারবে। তখন নিলামে অংশ নেয়ার যোগ্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিতও করেছিল বিটিআরসি। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে রিভ নাম্বার লিমিটেড (এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রয়েছে পোল্যান্ডের টিফোরবি এসপি জেড ও ও), গ্রীনটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (এই প্রতিষ্ঠানের সহযোগী হিসাবে ছিল লিথুনিয়ার মিডিয়া ফোন), ইনফোজিলিয়ন বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড (এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রয়েছে সেøাভেনিয়ার টেলিটেক ডি ও ও), ব্রাজিল বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম (এই কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ব্রাজিলের ক্লিয়ার টেক) এবং রুটস ইনফোটেক লিমিটেড (এই কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নরওয়ের সাইসটর গ্রুপ)। এমএনপি নিলামের সঙ্গে দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান জড়িত। জাতীয় নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে প্রতিটি কোম্পানির গোয়েন্দা প্রতিবেদন চাওয়া হয়। পরবর্তীতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজখবর নেয়। কোম্পানিগুলোর খোঁজখবর নেয়ার পর গোয়েন্দা সংস্থা একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৫ কোম্পানির আবেদন বাতিল করা হয়েছে। প্রতিটি কোম্পানি ১০ লাখ টাকা জমা দিয়ে আবেদন করেছিল। বিটিআরসি তাদের আবেদনের টাকা ফেরত দিয়ে দেবে। পরবর্তীতে দেশে যে সব মোবাইল অপারেটর রয়েছে, তারাই এমএনপি চালু করবেন।
×