ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুবিধাজনক সময়ে চুক্তি সই হবে

ভুটানের জলবিদ্যুত উৎপাদনে ত্রিদেশীয় বিনিয়োগে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

ভুটানের জলবিদ্যুত উৎপাদনে ত্রিদেশীয় বিনিয়োগে বাংলাদেশ

রশিদ মামুন ॥ ভুটানের জলবিদ্যুত উৎপাদনে ত্রিদেশীয় বিনিয়োগে সমান অংশীদার হতে চলেছে বাংলাদেশ। বিদ্যুত উৎপাদনে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় নতুন উদ্যোগ নেয়া হয়। ভারতের সঙ্গে ভুটানের এক হাজার ২২৫ মেগাওয়াটের একটি জলবিদ্যুত কেন্দ্র্রে সমান অংশীদারিত্বের প্রস্তাব চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে তিন দেশের সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে অথবা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চুক্তি সই করা হবে বলে জানা গেছে। আন্তঃদেশীয় বিদ্যুত বিনিয়োগে ভারত সরকার গত বছর যে নীতি চূড়ান্ত করেছে তাতে বলা হয়েছে, দেশটির ভূখ- ব্যবহার করে বিদ্যুত সঞ্চালন করতে হলে অবশ্যই প্রকল্পে তাদের দেশের সরকারী বা বেসরকারী কোম্পানির অংশীদারিত্ব থাকতে হবে। গতবছর ৫ ডিসেম্বর ভারত ক্রস বর্ডার ইলেক্ট্রিসিটি ট্রেড গাইড লাইনে এই শর্ত জুড়ে দেয়। এতে দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগে নেপাল এবং ভুটানে বাংলাদেশী বিনিয়োগ সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন বিদ্যুত সঞ্চালনের জন্য ভারতের ভূখ- ব্যবহার করার কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশের তরফ থেকে ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত সহযোগিতার বৈঠকে বাংলাদেশ একাধিকবার এই নীতি পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হলেও তাতে ভারত সাড়া দেয়নি। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সার্কে ফ্রেম ওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট বলা হয়, আন্তঃদেশীয় বিদ্যুত বিনিময়ের ক্ষেত্রে এক দেশ অন্যদেশের ওপর দিয়ে বিদ্যুত সঞ্চালন করলে ওই দেশকে শুধু হুইলিং চার্জ পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু ২০১৪ সালের ২৭ নবেম্বর সার্ক ফ্রেমওয়ার্ক স্বাক্ষরের পর নিজেদের জন্য ভারত নতুন এই নীতিমালা তৈরি করে। এতে প্রতিবেশী দেশে ভারতের ভূখ- ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। নেপাল এবং ভুটান বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে জলবিদ্যুত প্রকল্প করতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তা আর সম্ভব হয়নি। নেপাল এবং ভুটানে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনও নিয়েছিল বিদ্যুত বিভাগ। জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, ত্রিদেশীয় বিনিয়োগ প্রস্তাবনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। প্রথমত তিন দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। এরপর তিন দেশ নির্ধারণ করবে তাদের কোন কোন কোম্পানি এখানে কাজ করবে। সেই তিনটি কোম্পানি মিলে যৗথমূলধনী কোম্পানি গঠন করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আমরা ভারতকে তাদের গাইড লাইন পরিবর্তনের জন্য আহ্বান জানিয়েছি। আশা করছি তারা সেটা পরিবর্তন করবে। যাতে এই অঞ্চলের বিদ্যুত বিনিয়োগে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। সরকারের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় অন্তত ২৫ ভাগ বিদ্যুত প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি করার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে এখনই প্রস্তুতি না নেয়া দরকার বলে মনে করা হচ্ছে। এখন ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আমদানির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করা হবে। কিন্তু এসব প্রকল্পে বাংলাদেশের কোন বিনিয়োগ নেই। নিজেদের বিনিয়োগ থাকলে তুলনামূলক কম দামে বিদ্যুত পাওয়া সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। ভুটানে ২৫ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের ঋতুতে পার্থক্য রয়েছে। গ্রীষ্মে বাংলাদেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ভুটানে শীতকালে চাহিদা কমে যায়। শীতকালে বাংলাদেশের যখন চাহিদা কমে যায়, ভুটানে থাকবে তখন সর্বোচ্চ চাহিদা। তখন উৎপাদিত বিদ্যুত ভুটান নেবে। আর গ্রীষ্মে যখন বাংলাদেশের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকবে তখন সবটাই বাংলাদেশে আনা সম্ভব হবে। এর আগে ভুটানে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে জাপানী দাতা সংস্থা জাইকা। জাইকা একই সঙ্গে কেন্দ্র্র এবং সঞ্চালন লাইন নির্মাণে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। ভুটান বর্তমানে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করছে। যার সবটাই জলবিদ্যুত। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় ২৮৮ মেগাওয়াট উৎপাদন কমে যায়। বেশিরভাগ বিদ্যুতকেন্দ্রই ভারতীয় অনুদান এবং ঋণে নির্মাণ করা হয়েছে। সেখান থেকে স্বল্পমূল্যে বিদ্যুত আমদানিও করছে ভারত। ২০২০ সালের মধ্যে আরও ১০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে ভুটান। যার সবটাই ভারত আমদানি করবে। এ জন্য ভারতের সহযোগিতায় ১০টি জলবিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ছয় হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। ২০১৯ সালের মধ্যে নতুন তিনটি বিদ্যুতকেন্দ্র উৎপাদনে যাবে। এর বাইরে আরও ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের মতো জলশক্তি রয়েছে দেশটির।
×