ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দিরাইয়ে মুন্নি হত্যা

তিন দিনেও মূল আসামি গ্রেফতার হয়নি ॥ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

তিন দিনেও মূল আসামি গ্রেফতার হয়নি ॥ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি

নিজস্ব সংবাদাতা, সুনামগঞ্জ, ১৮ ডিসেম্বর ॥ আর মাত্র ক’দিন পর ছিল এসএসসি পরীক্ষা। দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে নির্বাচনী পরীক্ষার মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিল মুন্নি আক্তার (১৬)। এসএসসি পরীক্ষা সামনে রেখে প্রতিদিনের মতো শনিবারেও নিজ বাসার পড়ার টেবিলে মনোযোগ সহকারে অধ্যয়নরত ছিল হুমায়রা আক্তার মুন্নি। ভাগ্যেরে পরিক্রমায় এসএসসি পরীক্ষায় আর অংশগ্রহণ হলো না। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বখাটে এহিয়ার হাতে জীবন দিতে হলো। দিরাই পৌরসভার আনোয়ারপুর গ্রামে গত শনিবারে বাসায় ঢুকে নিজ হাতে ছুরিকাঘাতে খুন করে বখাটে এহিয়া সরদার ও তার সহযোগীরা। মুন্নির চিৎকার শুনে পাশের কক্ষ থেকে তার মা রাহেলা খাতুন মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায় ঘাতকরা। বখাটে ঘাতকের বাড়ি উপজেলার সাকিতপুর গ্রামে। তার পিতার নাম জামাল সরদার। ঘটনার সময় ঘাতকের সাথে থাকা ৪ সহযোগী দুই মোটরসাইকেল নিয়ে নিচতলায় অবস্থান করছিল। আশপাশের লোকজন খবর পেয়ে এগিয়ে আসলে ঘাতক ও তার সহযোগীরা পলিয়ে যায়। ঘটনার ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও হত্যাকারীকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্থানীয়রা জানান, ইতালি প্রবাসী হিফজুর রহমানের স্ত্রী রাহেলা বেগম স্কুল পড়ুয়া মেয়ে মুন্নী ও তার ছোট ছেলেকে নিয়ে পৌর শহরের আনোয়ারপুর মাদানী মহল্লায় পিতার বাসার ২য় তলায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। সাকিতপুর গ্রামের বখাটে ছাত্রলীগ কর্মী ইয়াহিয়া অনেক দিন ধরে মেধাবী ছাত্রী মুন্নিকে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার পথে উত্ত্যক্ত করতো । এ নিয়ে মুন্নির মা রাহেলা বেগম সুনামগঞ্জ র‌্যাব-৯ ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ২৬-১০-১৭ তারিখে দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল হক ও পৌর এলাকার সুজানগর গ্রামের তোফাজ্জুল হোসেন চৌধুরীর মাধ্যমে একটি আপোষ মীমাংসায় লিখিত মুচলেকা দেয় বখাটে এহিয়া। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য প্রকাশ্যে খুন করার হুমকি দেয় এহিয়া। নিহত মুন্নির ফুফাতো ভাই সৌরভ মিয়া জানান, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বখাটে এহিয়া মুন্নির ইতালি প্রবাসী পিতাকে ইমু নাম্বারে বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর ছবি পাঠিয়ে বিভ্রান্ত ছড়িয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় তার সহযোগীদের নিয়ে বাসায় গিয়ে মুন্নিকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় মুন্নীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার পিয়াস দেব তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সিলেট যাওয়ার পথেই মুন্নির মৃত্যু হয়। দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক জাফর ইকবাল জানান, গত অক্টোবর মাসে নির্বাচনি পরীক্ষার আগে মুন্নীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ করেন তার মা রাহেলা বেগম, বিষয়টি নিয়ে আমি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ও কমিটির সভাপতিকে নিয়ে সালিশ বৈঠকে তফাজ্জল হোসেনের মধ্যস্থতায় উত্ত্যক্ত করার জন্য মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেই।
×