ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এসি মিলানের কোচ হওয়ার ইচ্ছা ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ী তারকার

বর্ণিল ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন কাকা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

বর্ণিল ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন কাকা

জাহিদুল আলম জয় ॥ ব্রাজিলের ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম সেরা তারকা কাকা। তারকা এই এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার দেশ ও ক্লাবের হয়ে অসংখ্য সাফল্য পেয়েছেন। তবে আপসোসও কম নয়, ঘাতক ইনজুরির কারণে ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে তাকে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়। এ কারণে শেষদিকে খেলা হয়নি বড় ক্লাবে। বাদ পড়েছেন জাতীয় দল থেকেও। এই অবস্থার মধ্যেই গত অক্টোবরে ফুটবলকে বিদায় জানান ৩৫ বছর বয়সী সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ, এসি মিলান তারকা। মাস দুই পর আরেকবার একই ঘোষণা দিয়েছেন। এবার কাকা সব ধরনের ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রিয় বুটজোড়া তুলে রাখার পর এসি মিলানের কোচ হওয়ার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন। ‘রিকার্ডো আইজ্যাকসন দস সান্টোস লেইটে’ তার পুরো নাম। সবার কাছে যিনি কাকা নামে পরিচিত। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল দলের মাঝমাঠের এই ফুটবলারের ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ। জাতীয় দলের হয়ে দেশকে বহু সাফল্য এনে দেয়ার পাশাপাশি ইউরোপের ঘরোয়া ফুটবলে খেলেছেন দীর্ঘ সময়। একুশ শতকের অন্যতম সেরা ফুটবলার অবশেষে বর্ণিল ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন। ২০০৭ সালের ব্যালন ডি’অর জয়ী কাকা স্থানীয় রিও ডি জেনেরিও টেলিভিশনে অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে সোমবার বলেন, আমি ফুটবলেই থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তবে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। তবে এটা নিশ্চিত যে পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আর আমি থাকছি না। এখন আমি ক্লাবের সঙ্গে হয় ম্যানেজার, নতুবা স্পোর্টিং ডাইরেক্টর মোট কথা মাঠ ও মাঠের বাইরে সমন্বয় করতে চাই। সম্প্রতি কাকাকে এসি মিলানের পক্ষ থেকে ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। টুইটার বার্তায় ২০০২ সালে ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ জয়ী দলের অনতম গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য লিখেছেন, বাবা হওয়ার অনুভূতি সত্যিই আমি যা মনে করেছিলাম তার থেকেও অনেক কিছু। ধন্যবাদ, আমি এখন পরবর্তী যাত্রার জন্য তৈরি। সাওপাওলোতে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করার পর বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় ইউরোপিয়ান ক্লাবের নজরে আসেন কাকা। ২০০৩ সালে প্রথম কোন ইউরোপিয়ান ক্লাব হিসেবে মিলানে যোগ দেন এই তারকা প্লেমেকার। এই ক্লাবে থেকেই বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের খেতাব ব্যালন ডি’অর জয় করেন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ও লিওনেল মেসির বাইরে সর্বশেষ খেলোয়াড় হিসেবে তিনি এই পুরস্কার জয় করেন। ২০০৩-০৪ মৌসুমে ইতালিয়ান সিরি এ শিরোপা জয়ে মিলানের হয়ে তার ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও ২০০৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপাও জয় করে মিলান। ওই আসরে তিনি প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ ১০ গোল করেছিলেন। অসাধারণ প্রতিভাবান এই এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ২০০৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন। ওই সময় ৬৮ মিলিয়ন ইউরোতে (৮৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ৫৬ মিলিয়ন পাউন্ড) তার দল বদল ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিল। তবে স্প্যানিশ লীগে নিজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। ২০১১ সালে রিয়ালের হয়ে জোশে মরিনহোর অধীনে কোপা ডেল রে জেতার পরের বছর লীগ শিরোপাজয় করেন। কিন্তু মাদ্রিদে ব্যর্থ হয়ে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রি ট্রান্সফার উইন্ডোতে আবারও মিলানে ফিরে আসেন। ২০১৪ সালে মেজর লীগ সকারের ক্লাব অরল্যান্ডো সিটিতে যোগ দেন। অক্টোবরে অরল্যান্ডো ছাড়ার আগে উত্তর আমেরিকার হয়ে তিন বছরে সর্বোচ্চ মূল্যের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন। ব্রাজিলের হয়ে ৯২ আন্তর্জাতিক ম্যাচে করেছেন ২৯ গোল। যদিও ২০১৪ সালের ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে উপেক্ষিত ছিলেন। গত বছর কোপা আমেরিকা শতবর্ষী আসরেও ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি। স্প্যানিশ লা লিগা কাকার প্রতি কতৃজ্ঞতা জানিয়ে টুইটারে লিখেছে, বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার শেষে ফুটবলের অন্যতম অসাধারণ এক প্রতিভা তার বুট তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কাকা ব্রাজিলের গামার একটি ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ২২ এপ্রিল ১৯৮২ সালে। তার বাবা ইঞ্জিনিয়ার এবং মা শিক্ষিকা ছিলেন। গত অক্টোবরে মেজর লীগ সকারের ক্লাব অরল্যান্ডো সিটির হয়ে শেষবারের মতো মাঠে নামেন কাকা। অরল্যান্ডোর হাজার পঞ্চাশেক দর্শক অশ্রসিক্ত নয়নে বিদায় দেন ক্লাবের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকাকে। তবে শেষ ম্যাচে দলকে জেতাতে পারেননি তিনি। কলম্বাসের বিপক্ষে ১-০ গোলে হারে অরল্যান্ডো সিটি। হয়তো রোনাল্ডিনহো বা রোনাল্ডোর মতো নন, এমনকি নেইমারের মতো অতটা প্রতিভাবানও নন কাকা। তারপরও ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল বিস্ময় মনে করা হয় তাকে। যখন শুরুটা করেছিলেন, অনেকে তার মধ্যে পেলের ছবি দেখতে পাচ্ছিলেন। এমনকি গ্যারিঞ্চা, সক্রেটিস বা রোমারিওর সঙ্গে তার তুলনা চলছিল। বিশ্বের সেরা ক্লাবগুলোতে খেলেছেন, তবে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো হারিয়ে ফেলেছেন সর্বনাশা ইনজুরির কারণে। এরপর আর সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি কাকা। শেষ পর্যন্ত আমেরিকার মেজর লীগে নিজের নাম লেখান। সেখান থেকেই অবসরে গেলেন ব্রাজিলের অন্যতম সেরা এই তারকা ফুটবলার।
×