ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারতীয় ও রুশ যোদ্ধাদের গণভবনে সংবর্ধনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

ভারতীয় ও রুশ যোদ্ধাদের গণভবনে সংবর্ধনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে সহায়তাকারী দুই অকৃত্রিম বন্ধু ভারত ও রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে গণভবনে। সোমবার বিকেলে গণভবনের সবুজ লনে বীর যোদ্ধাদের এই সংবর্ধনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪৭তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত এ সংবর্ধনায় ভারতের ২৮ বীর যোদ্ধা, তাঁদের স্ত্রী ও সন্তান, ভারতের চারজন সামরিক কর্মকর্তা এবং ৬ জন দূতাবাস কর্মকর্তা অংশ নেন। একই সঙ্গে রাশিয়ার ৪ বীর যোদ্ধা, তাঁদের স্ত্রী ও তিন দূতাবাস কর্মকর্তাও যোগ দেন এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। আমন্ত্রিত এই বীর যোদ্ধারা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার পাশাপাশি যুদ্ধপরবর্তী সময়ে মাইন অপসারণ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে অবদান রাখেন। বীর যোদ্ধাদের এ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন লে. জেনারেল (অব.) জয় ভগবান সিং যাদব। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সকল অতিথিদের কাছে যান এবং দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রের অতিথি এই বীর যোদ্ধা ও তাদের স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হয় গণভবনের আঙ্গিনা। পরে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আমন্ত্রিত এই বীর যোদ্ধাদের উদ্দেশে বলেন, আমরা আপনাদের ত্যাগ ও অবদানের কথা ভুলিনি। আপনারা আমাদের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত ও রাশিয়ার অবদানের কথা বাংলাদেশ কখনো ভুলবে না। আপনারা আমাদের দেশে এসে আমাদের সম্মানিত করেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আপনারা যখন মন চায় আমাদের দেশে আসবেন, আমাদের আতিথেয়তা গ্রহণ করবেন। আমরা সব সময়ই আপনাদের অবদানের কথা স্মরণ করি। আমরা মহান নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা পেয়েছি। আপনারা যুদ্ধে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। এ সময় শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা উল্লেখ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকার কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। জেনারেল জয় ভবন সিং যাদব মুক্তিযুদ্ধের সময়ের স্মৃতিচারণ করেন এবং বাংলাদেশের অগ্রগতিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই ঐতিহাসিক উপলক্ষকে ঘিরে বাংলাদেশ সফর; আমাদের জন্য মহান সুযোগ। নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষায় বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ১৯৭১ সালের স্মৃতিচারণ করে জেনারেল ভগবান সিং আরও বলেন, দীর্ঘ নয় মাস অনেক আঘাত ও নৃশংসতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর ভাইদের সাহস একটা পরিবেশ ও প্লাটফর্ম তৈরি করেছে। যার ফলে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সহযোগিতায় পাশে এসে দাঁড়াতে পেরেছি। বাংলাদেশ ও ভারত সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক রক্ত আর ঘামে সংযুক্ত। আমি নিশ্চিত অতি মজবুত এই সম্পর্ক দুই দেশের বন্ধুত্বকে চিরস্থায়ী করবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি লাভ করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে তাঁর (শেখ হাসিনা) চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সাহসের কারণে। রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতা রুশ নৌবাহিনী প্যাসিফিক ফ্লিটের কমোডর জিএস সলকার মুক্তিযুদ্ধে মহান বিজয় অর্জনের জন্য বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে রাশিয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে উদীয়মান বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন করেছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ও বঙ্গোপসাগরের আশপাশের এলাকায় মাইন মুক্ত করতে ১২ নম্বর স্পেশাল টাস্কফোর্স যোগদানের জন্য আমরা সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নির্দেশ গ্রহণ করি। মহান দিবস উদযাপন উপলক্ষে রাশিয়ার বীর যোদ্ধা এবং সামরিক কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণের জন্য তিনি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জানান, সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনে বাংলাদেশের সফলতা ও অর্জন দেশে ফিরে তিনি তাঁর দেশের জনগণ ও গণমাধ্যমকে জানাবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর কিছু বিরল ছবি, ক্রেস্ট, বই ও স্মৃতিচিহ্ন উপহার হিসেবে দেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×