ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অস্ট্রেলিয়ার এ্যাশেজ পুনরুদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

অস্ট্রেলিয়ার এ্যাশেজ পুনরুদ্ধার

পার্থের তৃতীয় টেস্টেও উড়ে গেল ইংলিশরা, ইনিংস ও ৪১ রানের জয় স্টিভেন স্মিথদের শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ‘অস্ট্রেলিয়া উইনস দ্য এ্যাশেজ’ শেষবারের মতো জ্বলে ওঠা ওয়াকার ইলেক্ট্রিক ক্রিনের চেয়ে ভাল বাক্য আর হতে পারত না। দুই ম্যাচ হাতে রেখেই ট্রফি পুনরুদ্ধারের মধ্য দিয়ে পার্থের ঐতিহাসিক ক্রিকেট গ্রাউন্ডকে বিদায় জানাল দুরন্ত দুর্বার স্মিথ বাহিনী। এবার তাদের জয়টা ইনিংস ও ৪১ রানে। ব্রিসবেনে ১০ উইকেটে, এ্যাডিলেডে ১২০ রানের পর টানা তৃতীয় সাফল্যের পথে সফরকারীদের কার্যত উড়িয়ে দিল অসিরা। প্রথম ইনিংসে ৪০৩ রান করা ইংল্যান্ড সোমবার শেষদিনে দ্বিতীয় ইনিংসে ২১৮ এর বেশি করতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়া ৬৬২/৯ ডিক্লেয়ার। ২৩৯ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংসটির জন্য ম্যাচসেরা হয়েছেন অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। গৌরবময় এ্যাশেজ পুনরুদ্ধারের অনুভূতিকে ‘বিশেষ কিছু’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। অন্যদিকে পরাজিত ইংরেজ সেনাপতি জো রুটের সরল স্বীকারোক্তি, ‘আমরা আসলে পাত্তাই পাইনি!’ প্যাট কামিন্সের বাউন্সার ক্রিস ওকসের ব্যাট ছুঁয়ে টিম পেইনের গ্লাভসে। গুটিয়ে গেল ইংল্যান্ড। ধারাভাষ্য কক্ষে মাইকেল স্ল্যাটারের উচ্ছ্বসিত কণ্ঠ, ‘দেয়ার ইট ইজ, দেয়ার ইট ইজ, লুক এ্যাট দ্য অজিস।’ স্মিথদের উদযাপন আসলেই ছিল দেখার মতো। হওয়ারই কথা। প্রথম তিন টেস্টেই এ্যাশেজ পুনরুদ্ধারের উচ্ছ্বাস তো বাঁধনহারা হবেই! জয়ের স্বপ্নে বিভোর অস্ট্রেলিয়ার শেষ দিনটা শুরু হয়েছিল আবহাওয়ার হতাশায়। আগের রাতের প্রবল বৃষ্টিতে কাভারের ফাঁক দিয়ে পানি ঢুকে যায় উইকেটের কিছু অংশে। সেটি শুকানোর আগেই আবার নামে বৃষ্টি। প্রথম সেশনে তাই খেলা হয়নি। মাঠ কর্মীদের নিরলস চেষ্টার পর যখন শুরু হয় খেলা, সারাদিনে সম্ভাব্য ৯৮ ওভারের মধ্যে তখন সর্বোচ্চ ৭০ হতে পারত। তার অর্ধেকেই কাজ সেরে ফেলেছেন বোলাররা! শুরুতেই জনি বেয়ারস্টোকে ফিরিয়ে বড় বাধা দূর করে জশ হ্যাজইলড। আগের দিনের ১৪ রানের সঙ্গে আর কোন রানই যোগ করতে পারেননি প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান। সিরিজের ষষ্ঠ ইনিংসে পঞ্চম স্পিনার নাথান লেয়নের শিকারে পরিণত হন মঈন আলী। এরপর হ্যাজলউড-কামিন্স হয়ে ওঠেন অপ্রতিরোধ্য। হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়ে ইংল্যান্ড। লড়াই করেছেন কেবল ডেভিড মালান। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান এবার করেছেন ৫৪। তাকেও ফিরিয়ে দেন হ্যাজেলউড। পরে ক্রেইগ ওভারটনকে ফিরিয়ে পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারের ষষ্ঠবারের মতো ৫ উইকেট। ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার দাবিদার ছিলেন তিনিও। তবে ২৩৯ রানের ইনিংস খেলে সেটি পেয়েছেন স্মিথ। ‘অধিনায়ক হিসেবে এ্যাশেজ জেতার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এই মুহূর্তের জন্য বহুদিন অপেক্ষা করেছি। পার্থে যেভাবে জয় পেয়েছি, তাতে আমার দলকে নিয়ে গর্বিত। সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষের সব কয়টি উইকেট তুলে নিয়েছে তারা। একটা টসে না জিতেও আমরা সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছি দুটি ম্যাচ হাতে রেখেই।’ বলেন অসি অধিনায়ক। এবারও কি ইংল্যান্ডকে ২০১৩-১৪ মৌসুমের মতো ‘হোয়াইটওয়াশ’ করতে পারবে অস্ট্রেলিয়া? স্মিথ অবশ্য এখনই এসব নিয়ে ভাবছেন না, ‘আজ শুধু সিরিজ জয়ের উদযাপন হবে। মেলবোর্নের কথা এখনই ভাবছি না। তবে আশা করি সেখানে ৪-০ হবে, আর সিডনিতে ৫-০!’ আরও যোগ করেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। আর হতাশায় মুহ্যমান ইংল্যান্ড ক্যাপ্টেন রুটের স্বীকারোক্তি, ‘এটা মেনে নেয়া আসলে কঠিন। তবে সত্যি বলতে, তিন ম্যাচের একটিতেও অস্ট্রেলিয়া আমাদের পাত্তা দেয়নি। আমাদের আরও ভাল করতে হবে। মেলবোর্নে গিয়ে ভাল প্রস্তুতি নিতে হবে, পারফর্ম করতে হবে।’ ২৬ ডিসেম্বর ‘বক্সিং ডেতে’ মেলবোর্নে শুরু পাঁচ ম্যাচ সিরিজের চতুর্থ টেস্ট। স্কোর কার্ড ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ৪০৩/১০ (১১৫.১ ওভার; কুক ৭, স্টোনম্যান ৫৬, ভিন্স ২৫, রুট ২০, মালান ১৪০, বেয়ারস্টো ১১৯, মঈন ০, ওকস ৮, ওভারটন ২, ব্রড ১২; স্টার্ক ৪/৯১, হ্যাজলউড ৩/৯২, কামিন্স ২/৮৪, লেয়ন ১/৭৩) ও দ্বিতীয় ইনিংস ২১৮/১০ (৭২.৫ ওভার; কুক ১৪, স্টোনম্যান ৩, ভিঞ্চ ৫৫, রুট ১৪, মালান ৫৪, বেয়ারস্টো ১৪, মঈন ১১, ওকস ২২, ওভারটন ১২, ব্রড ০, এ্যান্ডারসন ১*; স্টার্ক ১/৪৪, হ্যাজলউড ৫/৪৮, মিচেল মার্শ ০/১৪, কামিন্স ২/৫৩, লেয়ন ২/৪২)। অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ৬৬২/৯ ডিক্লে. (১৭৯.৩ ওভার; ব্যানক্রফট ২৫, ওয়ার্নার ২২, খাওয়াজা ৫০, স্মিথ ২৩৯, শন মার্শ ২৮, মিচেল মার্শ ১৮১. পেইন ৪৯*, স্টার্ক ১, কামিন্স ৪১, লেয়ন ৪; এ্যান্ডারমস ৪/১১৬, ব্রড ০/১৪২, ওকস ১/১২৮, ওভারটন ২/১১০, মঈন ১/১২০)। ফল ॥ অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ও ৪১ রানে জয়ী ম্যান অব দ্য ম্যাচ ॥ স্টিভেন স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া) সিরিজ ॥ ৫ টেস্টের এ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়া ৩-০তে এগিয়ে।
×