ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হত্যাকাণ্ড নিশ্চিত করতে আর্জেস গ্রেনেড ব্যবহার হয়

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

হত্যাকাণ্ড নিশ্চিত করতে আর্জেস গ্রেনেড ব্যবহার হয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্পর্শকাতর ও বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলার ২১ তম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান সমাবেশ বিষয়ে অবহিতকরণ সংক্রান্ত সাক্ষ্য যুক্তিতর্কে তুলে ধরে বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে পরিকল্পিতভাবেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। হত্যাকা- নিশ্চিতে যুদ্ধকালীন সমরাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড ওই হামলায় ব্যবহার করা হয়। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার উদ্দেশে ওই মামলা চালানো হয়। মামলার যুক্তিতর্ক আজ মঙ্গলবার ও কাল বুধবার আবার অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। চীফ প্রসিকিউটরকে যুক্তিতর্কে সহায়তা করেন এ্যাডভোকেট আকরাম উদ্দিন শ্যামল, এ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা। এ ছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষে স্পেশাল পিপি মোঃ আবু আব্দুল্লাহ্ ভূঞা , আবুল কালাম আজাদ, মোঃ আমিনুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদারসহ অন্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তিতর্কে বলেন , এ সমাবেশ ছিল পূর্ব নির্ধারিত যেখানে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বক্তৃতা রাখার কথা। তা প্রশাসন অবহিত ছিল। পরবর্তীতে জাল-জালিয়াতি করে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে সমাবেশ ও নিরাপত্তা বিষয়ে বিভিন্ন ডকুমেন্ট তৈরি করা হয়। জাল-জালিয়াতি বিষয়ে দেয়া সাক্ষ্যও যুক্তিতর্কে উপস্থাপন করা হয়। সমাবেশে পরিকল্পিতভাবেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়নি উল্লেখ করে প্রধান কৌঁসুলি বিভিন্ন সাক্ষ্য তুলে ধরে বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার উদ্দেশে ওই মামলা চালানো হয়। হত্যাকা- নিশ্চিতে যুদ্ধকালীন সমরাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড ওই হামলায় ব্যবহার করা হয়। তারেক রহমানের রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসভবনেও এ হামলার পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করা হয়। সোমাবর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী (পিডব্লিও) ১২১ থেকে ১৬১ নং সাক্ষ্যের আলোকে যুক্তিতর্ক পেশ করা হয়। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫১১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির জ্যেষ্ঠ বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহ্হার আকন্দসহ ২২৫ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন। আসামিপক্ষেও ২০ জন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ এসব সাক্ষ্য জেরা করেছে। ২১ আগস্টের ওই নৃশংস হামলায় পৃথক দুটি মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। মামলার আসামী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছে। এ মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী, লে. কমান্ডার (অব) সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং মামলার সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা- সিআইডি’র সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডি’র সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদসহ মোট ৮ জন জামিনে রয়েছে। তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল (এলপিআর) এটিএম আমিন, লে. কর্নেল (অব) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ ১৮ জন এখনও পলাতক। এছাড়া ৩ জন আসামি জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুফতি হান্নান ও শরীফ সাইদুল আলম বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী রয়েছেন।
×