ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন আমদানি নীতি প্রণয়নে ধীরগতি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

নতুন আমদানি নীতি প্রণয়নে ধীরগতি

এম শাহজাহান ॥ আগামী ‘২০১৮-২১’ তিন বছরের আমদানি নীতি আদেশ প্রণয়নের কাজ চলছে ঠিমেতালে। দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ, বাণিজ্য উদারীকরণ, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও নিরাপত্তায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ, ব্যবসার ব্যয় কমানো এবং রফতানি প্রসারে শিল্পের কাঁচামাল সহজলভ্যকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমদানি নীতির সঙ্গে জড়িত। চূড়ান্তভাবে এই নীতি প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে অন্তত ৬০টির মতো বৈঠক হওয়া প্রয়োজন। আমদানি নীতি আদেশ প্রণয়নে আলোচনার মাধ্যমে স্টেক হোল্ডার বিশেষ করে বাণিজ্য সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বারগুলোর কাছ থেকেও প্রায় তিন শতাধিক প্রস্তাব নেয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যেও এ নিয়ে আলোচনা করতে হয়। পরবর্তীতে এসব প্রস্তাব ও আলোচনার ভিত্তিতে আমদানি নীতি আদেশ চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির কোন বৈঠক করা হয়নি। ফলে আমদানি নীতি আদেশ প্রণয়ন নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার সঙ্কট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, চলতি ২০১৫-১৮ আমদানি নীতি আদেশ অনুমোদন করা হয় ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর। ওই সময় ১২টি পণ্য নিষিদ্ধ করে তিন বছরের জন্য আমদানি নীতি আদেশ অনুমোদন করে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এরপর তা কার্যকরে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নেয়া হয়। তবে এবার আমদানি নীতি সঠিক সময়ে চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের স্বপ্ন পূরণে নতুন আমদানি নীতি যথাসময়ে ঘোষণা করা উচিত বলে মনে করা হচ্ছে। পুরনো আমদানি নীতি আদেশের মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ জুন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে নতুন আমদানি নীতি অনুমোদন না হলে একটি ঘোষণা দিয়ে পুরনোটি বহাল রাখা হবে। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্যে জটিলতা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, আমদানি নীতি আদেশ সঠিক সময়ের মধ্যে ঘোষণা করা উচিত। এটি বিলম্বে হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, আমদানি নীতি আদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি আমদানির বিষয় হলেও রফতানিও এর সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে আমদানি করে তা পুনঃরফতানির ক্ষেত্রে। গার্মেন্টস শিল্পে এ ধরনের বহু পণ্য রয়েছে যা আমদানি করে আবার তা রফতানি করা হচ্ছে। এছাড়া আমদানি নীতি যুগোপযোগী করতে এফবিসিসিআই থেকে প্রস্তাবনা তৈরি করছে। অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠন থেকেও প্রস্তাবনা দেয়া হবে। আশা করছি, ব্যবসাবান্ধব আমদানি নীতি প্রণয়ন করা হবে। তিনি বলেন, আমদানি নীতিটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হওয়া উচিত। সূত্রমতে, বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার অর্থনীতির ক্রমবিকাশের ধারায় আশির দশকের গোড়ার দিকে আমদানি নীতি উদারীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এক বছর মেয়াদে আমদানি নীতি এবং পরবর্তীকালে দুই বছর মেয়াদে আমদানি নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমদানি বাণিজ্যের সহজীকরণ ও উদারীকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। আমদানি নীতিকে অধিকতর উদার ও সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে বর্তমানে তিন বছর মেয়াদে আমদানি নীতি আদেশ প্রণয়ন ও কার্যকর করা হচ্ছে। বিদ্যমান আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-২০১৮ এর মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, আমদানি নীতি আদেশ প্রণয়নে এখন পর্যন্ত পরামর্শক কমিটির একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদেশটি জারি করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে মন্ত্রণালয়েরই সংশয় রয়েছে। তিনি বলেন, আর ছয় মাস পর আমদানি নীতি আদেশের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। অথচ আমদানি আদেশ প্রণয়নে প্রায় দেড় বছর সময় লাগে। এদিকে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার অর্থনীতির ক্রম বিকাশের ধারার আলোকে আমদানি নীতিকে আরও ব্যবসাবান্ধব, সামঞ্জস্যকরণ ও সহজ করাসহ পাঁচটি উদ্দেশ্য সংযোজন করে প্রায় তিন বছর আগে আমদানি নীতি আদেশ জারি করা হয়। এতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের জন্য প্রযুক্তি ও ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানির সুবিধা সহজীকরণ, রফতানি সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য আমদানি ব্যবস্থা সহজতর করার মাধ্যমে দেশীয় রফতানিকে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর উপর বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। এছাড়া পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অধিকতর শিথিল করাসহ শিল্পের কাঁচামাল সহজলভ্য করা এবং পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা, এছাড়া গুণগত মানসম্পন্ন, পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ রয়েছে। কেমন আমদানি নীতি চান ব্যবসায়ীরা ॥ আমদানি নীতি প্রণয়নে মন্ত্রণালয় ঠিমেতালে চললেও ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে সরব রয়েছেন। এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন চেম্বার ও এ্যাসোসিয়েশনগুলো তাদের মতো করে প্রস্তাবনা তৈরি করছে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আশা শুরু করেছে। এতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির সঙ্গে সমন্বয় রাখতে বার্ষিক আমদানি মূল্যসীমার পুনর্বিন্যাস চান ব্যবসায়ীরা। এ জন্য মূল্যসীমা পুনর্বিন্যাস করে আমদানি নিবন্ধন সনদ ও বার্ষিক নবায়ন ফি কমানোর প্রস্তাব রয়েছে বাণিজ্য সংগঠনগুলোর। একই সঙ্গে আমাদানি ও রফতানি সনদ নবায়নের ক্ষেত্রে সারচার্জ কমানো উচিত বলে মনে করছে সংগঠনগুলো। ঢাকা চেম্বারের এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমদানি মূল্যসীমার ৬টি স্তরে পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন। প্রথম ধাপে বার্ষিক ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আমদানির ক্ষেত্রে সনদ নিবন্ধন ফি ৫ হাজার টাকা ও নবায়ন ফি ৩ হাজার টাকা বিদ্যমান আছে। এই মূল্যসীমা বাড়িয়ে ৮ লাখ টাকায় নিবন্ধন ফি ২ হাজার ও নবায়ন ফি ১ হাজার টাকা করা উচিত। দ্বিতীয় ধাপে আমদানি মূল্যসীমা ২৫ লাখ টাকায় নিবন্ধন ফি ১০ হাজার টাকা ও নবায়ন ফি ৬ হাজার টাকা রয়েছে। এ মূল্যসীমা কমিয়ে ২০ লাখ টাকায় নিবন্ধন ফি ৫ হাজার টাকা ও নবায়ন ফি ২ হাজার টাকা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া ৫০ লাখ, ১ কোটি, ৫ কোটি ও ৫ কোটির উর্ধে নিবন্ধন ফি ৮ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং নবায়ন ফি ৬ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা কামানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
×