ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অধিকাংশই ব্যবসায়ী

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অধিকাংশই ব্যবসায়ী

স্টাফ রিপোর্টার \ রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের অধিকাংশই ব্যবসায়ী। ৭ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৪ জনের (৭১.৪২ ভাগ) পেশা ব্যবসা। সাধারণ ওয়ার্ড কান্সিলরদের মধ্যে ৭০ ভাগই ব্যবসায়ী। এছাড়া মেয়র সাধারণ কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী মোট ২৮৪ প্রার্থীর মধ্যে ৫৯.৫০ ভাগ প্রার্থীর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে সুজনের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। এ পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে মেয়র পদে ৭ প্রার্থীর মধ্যে ২ জন কোটিপ্রতি। প্রার্থীদের বার্ষিক আয় ৫ থেকে ২৬ লাখ টাকা পর্যন্ত। সাত মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ফৌজদারি মামলা রয়েছে ৪ জনের বিরুদ্ধে। ২১২ সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৫২ জনের (২৪.৫২) বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তিনটি পদে প্রতিদ্বন্ডীকারী ২৮৪ প্রার্থীর মধ্যে ৫৮ জনের (২০.৪২) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ৪০ জনের বিরুদ্ধে অতীতে এবং ১৮ জনের বিরুদ্ধে উভয় সময়ে মামলা আছে বা ছিল বলে তারা জানান। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে বেসরকারী সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। নির্বাচনী হলফনামায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজেদের সম্পর্কে যেসব তথ্য দিয়েছেন, তা যাচাই করে তুলে ধরতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে সংস্থাটি। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী সমন্বয়কারী সানজিদা হক বিপাশা জানান প্রার্থীদের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। প্রার্থীদের তথ্য উপাত্ত বাছাই করে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয় ৭ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ২ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর, ৩ জনের ¯স্নাতক এবং ২ জনের এইচএসসি। মোট ৩৩ সাধারণ ওয়ার্ডের ২১২ সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৮১ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে, ৪৪ জনের এসএসসি এবং ৪১ জনের এইচএসসি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৩২ ও ১০ জন। মোট ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৬৫ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে এসএসসির কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীর সংখ্যা ২৫ জন। ১৭ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি এবং ৮ জনের এইচএসসি। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৮ ও ৬ জন। বিশ্লেষণে দেখা যায় যে ২৮৪ প্রার্থীর মধ্যে একটি বড় অংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা ১৬৭ জন এসএসসি বা তার নিচে। পক্ষান্তরে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র ৬১ জন। প্রার্থীদের পেশা সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে ৭ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৫ জনই ব্যবসায়ী। সরফুদ্দীন আহম্মেদ পেশার ঘরে উল্লেখ করেছেন ‘রাজনীতি’। ২১২ সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে শতকরা ১৫০ জনের পেশাই ব্যবসা। কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন ২০ জন। ৬৫ সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর অধিকাংশই বা ৪০ জন গৃহিণী। ১৪ জনের পেশা ব্যবসা। তিনটি পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী সর্বমোট ২৮৪ প্রার্থীর মধ্যে শতকরা ৫৯.৫০% ভাগই (১৬৯ জন) ব্যবসায়ী। বিশ্লেষণে অন্য নির্বাচনের মতো রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রার্থীদের মামলা সম্পর্কে এতে বলা হয়েছে ৭ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ফৌজদারি মামলা রয়েছে ৪ জনের বিরুদ্ধে। ২১২ সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৫২ জনের বর্তমানে, ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অতীতে এবং ১৭ জনের বিরুদ্ধে উভয় সময়ে মামলা ছিল বা আছে। ৬৫ সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীর মধ্যে ৪ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ফৌজদারি মামলা আছে এবং ৩ জনের বিরুদ্ধে অতীতে ফৌজদারি মামলা ছিল। তিনটি পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী সর্বমোট ২৮৪ প্রার্থীর মধ্যে ৫৮ জনের (২০.৪২ ভাগ) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ৪০ জনের বিরুদ্ধে অতীতে এবং ১৮ জনের বিরুদ্ধে উভয় সময়ে মামলা আছে বা ছিল। প্রার্থীদের আয় সম্পর্কে বলা হয়েছে ৭ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ২ জনের আয় বছরে ৫ লাখ টাকার নিচে, ৩ জনের আয় বছরে ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকার মধ্যে এবং ১ জনের আয় ২৫ লাখ টাকার অধিক। ২১২ সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১৮৬ জনেরই বছরে ৫ লাখ টাকার কম আয়। বছরে ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা আয় করেন ২১ জন। সংরক্ষিত আসনের ৬৫ প্রার্থীর মধ্যেও সিংহভাগই (৪০ জন ৬১.৫৩) কাউন্সিলর প্রার্থীর বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকার নিচে। তিনটি পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী ২৮৪ প্রার্থীর মধ্যে চার-পঞ্চমাংশের (২২৮ জন বা ৮০.২৮) বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকার কম। ৭ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৩ জনের সম্পদ ৫ লাখ টাকার নিচে, ১ জনের ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকার মধ্যে, ১ জনের ২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে এবং অবশিষ্ট ২ জনের স¤পদ কোটি টাকার অধিক। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স¤পদ সরফুদ্দীন আহম্মেদের। তার সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৫৩ লাখ ৬০ হাজার ১১৮ টাকা) এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছেন মোঃ কাওছার জামান। তার সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২১২ সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশই (১৭৫ জন অথবা ৮২.৫৪) স্বল্প স¤পদের অর্থাৎ ৫ লাখ টাকার কম মূল্যমানের স¤পদের মালিক। ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকার স¤পদ রয়েছে ২৩ (১০.৮৪) কাউন্সিলর প্রার্থীর। ৬৫ সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৫২ জনের (৮০) সম্পদ ৫ লাখ টাকার কম। প্রার্থীদের মধ্যে করের আওতায় পড়েছেন ৪ জন। সর্বশেষ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৪৬ টাকা কর প্রদান করেছেন সরফুদ্দীন আহম্মেদ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৮৭৫ কর প্রদান করেছেন হোসেন মকবুল শাহরিয়ার। ২১২ সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১২৫ জন আয়কর প্রদানকারী। ৬৫ সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৩৬ জনের (৫৫.৩৮) আয়কর প্রদান সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছের পূর্ববর্তী ও বর্তমান নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী প্রার্থীগণ প্রদত্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে ২০১২ এবং ২০১৭ সালে এটিএম গোলাম মোস্তফার আয় একই রয়েছে। মোঃ কাওছার জামানের ১৪৩.৩৬% এবং সরফুদ্দীন আহম্মেদের আয় ৮০৯.৬৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। বার্ষিক এই আয় বৃদ্ধির হার সরফুদ্দীন আহম্মেদের সবচেয়ে বেশি। সংবাদ সম্মেলনে সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ের ফলে বাংলাদেশে ভোটারদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো ভোটাররা যাতে প্রার্থীদের সম্পর্কে জেনে-শুনে-বুঝে ভোট দিতে পারেন। কিন্তু আমরা দেখছি যে, প্রার্থীদের মানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। আমরা চাই সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। যাতে ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন এবং ভাল প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন, যারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকবেন এবং জনকল্যাণে কাজ করবেন। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যে রাষ্ট্রে নাগরিকরা সক্রিয় থাকেন সেখানে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই যে কোন নির্বাচনে প্রার্থীদের সম্পর্কে জেনে-শুনে-বুঝে ভোট দেয়া দরকার, যাতে ভাল প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন। বর্তমানে প্রার্থীরা হলফনামায় যে তথ্যগুলো দেন নির্বাচন কমিশন থেকে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হয় না। প্রার্থীদের দেয়া তথ্যগুলো ভোটারদের জানানো জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন এবং নির্বাহী সদস্য আবুল মকসুদও উপস্থিত ছিলেন।
×