ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ

ঢাকা-উত্তরবঙ্গ ট্রেন চলছে ৭ থেকে ১৫ ঘণ্টা বিলম্বে

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

ঢাকা-উত্তরবঙ্গ ট্রেন চলছে ৭ থেকে ১৫ ঘণ্টা বিলম্বে

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ ঢাকা-উত্তরবঙ্গ-ঢাকা আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর টাইম টেবল আছে। সেই টেবিলের সময় ঠিক থাকছে না। বেশিরভাগ ট্রেনই ৭ থেকে ১৫ ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করছে। বিশেষ করে বগুড়া-ঢাকা আন্তঃনগর ট্রেন যাত্রীদের ভোগান্তি ও বিড়ম্বনা এতটাই বেশি যে, রেলের পুরনো সেই কথা ‘আজকের ট্রেন কাল’ এই নিয়মে চলছে। প্রায় একই অবস্থা রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুরের যাত্রীদের। যাত্রী সাধারণের কথা, বাংলাদেশ রেলওয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো পূর্বাঞ্চলে যত স্বাচ্ছন্দ্যে চলছে উত্তরাঞ্চলে ঠিক তার উল্টোটি। শিবগঞ্জের রাজনীতিক আবুল কাশেম ফকির বগুড়া-ঢাকা ভ্রমণের জন্য শনিবার রাত ১১টায় আন্তঃনগর ট্রেন রংপুর এক্সপ্রেসের শোভন শ্রেণীর টিকেট কেটেছিলেন। শনিবার রাতে সময়মতো তিনি বগুড়া রেলস্টেশনে পৌঁছেন। রবিবার বেলা দু’টা পর্যন্ত সেই ট্রেন বগুড়া রেলস্টেশনে পৌঁছেনি। রেলের কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, ট্রেনটি ১৫ ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করছে। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রংপুর থেকে বগুড়া পৌঁছে ঢাকা রওনা হবে। উল্লেখ্য, বগুড়ার ওপর দিয়ে প্রতিদিন দুইটি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা চলাচল করে। একটি রংপুর এক্সপ্রেস আরেকটি লালমনি এক্সপ্রেস। ট্রেনগুলো ঢাকা থেকে ছেড়ে গন্তব্য লালমনিরহাট ও রংপুর পৌঁছে ফের ফিরতি পথে রওনা দেয়। উৎসের স্টেশন থেকে সময়মতো ছেড়ে গন্তব্যে ঠিক সময়ে পৌঁছার ওপর নির্ভর করে সঠিক সময়ে ট্রেন চলাচল। এভাবে দুইটি ট্রেন আপ ডাউন করে। বগুড়া রেলস্টেশনের স্টেশন সুপার বেনজুরুল ইসলাম জানান, গেল প্রায় দেড় মাস ধরে আন্তঃনগর রংপুর ও লালমনি এক্সপ্রেস খুবই বিলম্বে চলাচল করছে। যাত্রীদের ভোগান্তি সামলাতে একের পর এক কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে। রংপুর এক্সপ্রেস বগুড়া থেকে ঢাকা রওনা হয় প্রতিদিন রাত ১১-৫ মিনিটে। লালমনি এক্সপ্রেস বগুড়া থেকে ঢাকা রওনা হয় প্রতিদিন বেলা ১১টা ২ মিনিটে। এই ট্রেনগুলোই ঢাকা পৌঁছে ফের লালমনিরহাট ও রংপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। এ ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, দিনাজপুর, চিলহাটি থেকে আরও ৬টি ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। রাজশাহী থেকে ঢাকা চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনগুলো হলো সকাল ৭টায় সিল্ক সিটি, বিকেল ৪টায় পদ্মা, রাত ১১টায় ধূমকেতু। নীলফামারী জেলার আন্তঃনগর ট্রেন নীলসাগর চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে রাত ন’টা ২০ মিনিটে ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। তারপর ফিরতি পথে রওনা দেয়। দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর দুইটি ট্রেন দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেস চলাচল করে। এই ট্রেনগুলো একইভাবে ঢাকা পৌঁছে ফিরতি পথে রওনা দেয়। রবিবার নীলসাগর ট্রেন চলাচল করেছে প্রায় ৭ ঘণ্টা বিলম্বে। সূত্র জানায়, মাসখানেক হলো ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গমুখী সকল ট্রেন বিলম্বে চলাচল করছে। সবচেয়ে বেশি বিলম্ব করছে বগুড়া-ঢাকা তথা লালমনি ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন দু’টি। এই বিষয়ে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে লালমনি এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনগুলো চলাচলে ঢাকা সব সময়ই বৈরী আচরণ করা হয়। ঢাকা থেকে ছাড়ার সময় ইঞ্জিনের স্বল্পতা, ইঞ্জিন ওয়ার্কশপ থেকে দেরিতে বের করা, কোন রকমে চলতে পারে এমন ইঞ্জিন দেয়াসহ নানা অজুহাতে উৎসেই (ঢাকা) বিলম্ব করা হয়। বিকল ইঞ্জিন দিয়ে রওনা দেয়ার পর অনেক সময় ইঞ্জিন পথে বসে পড়ে। আরেকটি ইঞ্জিন না আসা পর্যন্ত ট্রেন চলে না। যাত্রীদের অসহনীয় ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। আবার প্রথম শ্রেণী ও শোভন শ্রেণীর কম্পার্টমেন্টগুলো যেগুলো ভাল মানের নয় সেগুলো আন্তঃনগর রংপুর ও লালমনি এক্সপ্রেসগুলোতে জুড়ে দেয়া হয়। একদিকে অস্বাভাবিক বিলম্বে ট্রেন চলাচল আরেক দিকে নিম্ন মানের কম্পার্টমেন্ট জুড়ে দিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের ট্রেন ভ্রমণে যারপর নেই ভোগান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
×