ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী হানাদার মুক্ত দিবস আজ

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

রাজশাহী হানাদার মুক্ত দিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ আজ ১৮ ডিসেম্বর। একাত্তরের এই দিনে রাজশাহীকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। এবার এই দিনটিকে পালনের ব্যাপক আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে বিকেল ৩টায় সমাবেশের আয়োজন করেছে আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ। রাজশাহীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক ওয়ালিউর রহমান বাবু বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের ৪৬ বছর পর সমাবেশ আকারে প্রথমবারের মতো এবার রাজশাহী মুক্ত দিবস পালন করা হবে। এর আগে এই দিবস পালন করা হয়েছে। তবে খুব ছোট এবং ঘরোয়া পরিবেশে। কিন্তু রাজশাহীতে বড় আকারে মুক্ত দিবস সমাবেশ করে পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজশাহী ছিল ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে। সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হক শহীদ হবার পর এই সেক্টরের দায়িত্ব নেন কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান (বীর উত্তম)। এর আগে পাকিস্তানি সৈন্যরা রাজাকার আলবদর ও তাদের দোসরদের মদদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমিতে নির্যাতন করে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বন্দীকে হত্যা করে। একাত্তরের ১৮ ডিসেম্বর সকালে রাজশাহীর মাদ্রাসা (হাইস্কুল) মাঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর ৭ নম্বর সেক্টারের সাব সেক্টর ৪ এর তৎকালীন কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা তুলে রাজশাহীকে মুক্ত ঘোষণা করেন। তাকেই এই অঞ্চল পরিচালনা জন্য প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হয়। তৎকালীন পৌরসভা ভবনকে কন্ট্রোল রুম করে পরিচালিত হয় প্রশাসন। রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘রাজশাহীর মুক্ত দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এর আগেই রাজশাহী মুক্ত হয়। পাবনা নিজস্ব সংবাদদাতা পাবনা থেকে জানান, আজ ১৮ ডিসেম্বর পাবনা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক-হানাদার মুক্ত হয় পাবনা সদর উপজেলা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষ যখন বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠেছে তখনও পাবনা শহরে চলছে পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ। ১৮ ডিসেম্বর পাবনা হানাদার মুক্ত হওয়ার আগে ১৪ ডিসেম্বর দুপুর থেকে পাক-বাহিনীর সঙ্গে মুক্তি বাহিনীর শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। ১৪ ডিসেম্বর দুপুর ২টা থেকে মিত্র বাহিনী পাবনা শহরে মর্টার সেল ও বিমান হামলা চালাতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী চারদিক থেকে পাবনা শহর ঘিরে ফেলে আক্রমণ চালায় পাক-হানাদার বাহিনীর উপর। উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় যুদ্ধ। ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর চতুর্মুখী আক্রমণে পাকসেনারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে এবং পাবনা ছেড়ে দলে দলে পালিয়ে যায়। এ সংবাদে নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মানুষ ঘর ছেড়ে বাড়ির বাইরে এসে উল্লাসে ফেটে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। মূলত এ দিনই পাবনার মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ উপলব্ধি করে। মুক্তিযোদ্ধারা শহরে এসে সমবেত হতে থাকে। পরে পাবনা কালেক্টরেট ভবনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। জেলা প্রশাসকের হিসাব মতে, পাকবাহিনীর নির্মমতার সাক্ষী হিসেবে পাবনায় এ পর্যন্ত ৪১টি গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছে। জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ১৯৯৮ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুর্জয় পাবনা নামে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। বিভিন্ন সংগঠন এ দিবসটি পালনে নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। নওগাঁ নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, ১৬ ডিসেম্বর পাকি-হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হলেও উত্তরের নওগাঁ জেলা হানাদারমুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর। সারাদেশের বিজয় অর্জনের দু’দিন পর নওগাঁর মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করে। পাকি-হানাদাররা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানালে ১৮ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর চন্দ্র শেখর মিত্রের কাছে আত্মসমর্পণ করে প্রতাপশালী হানাদার বাহিনী সারিবদ্ধ হয়ে হেঁটে মাথা নিচু করে নওগাঁ ত্যাগ করে। হানাদারমুক্ত হয় তৎকালীন নওগাঁ মহকুমা। সৈয়দপুর স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন স্থান পাক হানাদার মুক্ত হলেও অবাঙালী অধ্যুষিত সৈয়দপুর ছিল ব্যতিক্রম। ফলে এই শহরটি পাক হানাদারমুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর। ৭১ সালে রেলওয়ে শহর সৈয়দপুরে ছিল পাকি সেনা ও তাদের দোসরদের শক্ত ঘাঁটি। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে এই সৈয়দপুরে স্বাধীনতাকামী বাঙালীর লাশের স্তূপ ছিল প্রায় সাড়ে তিনহাজার। অবাঙালীদের অবরুদ্ধতা আর পাকিদের শক্ত অবস্থানে সৈয়দপুরে কোন মুক্তিযোদ্ধা প্রবেশ করতে পারেনি। তাই সৈয়দপুর হানাদারমুক্ত করতে ভারতের হিমকুমারী ক্যা¤প থেকে মিত্র বাহিনীসহ কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা যৌথভাবে এ্যাকশন শুরু করে। টিকতে পারেনি আর পাকি সেনা ও তাদের দোসর। শহরের পৌরসভা ভবনে ও অস্থায়ী আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে উড়ানো হয় মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা।
×