ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক ফুটবলে তহুরার দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

আন্তর্জাতিক ফুটবলে তহুরার দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ময়মনসিংহের কলসুন্দর গ্রামের সাধারণ কৃষক ফিরোজ আলী। সরল প্রকৃতির এবং রক্ষণশীল। তার ধারণা মেয়েদের ফুটবল খেলা হচ্ছে ইসলামের দৃষ্টিতে গোনাহ্র কাজ। তাই তিনি মেয়ে তহুরা খাতুনকে ফুটবল খেলতে মানা করে দেন। পরে তহুরার স্কুল শিক্ষকরা তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করান। সেই তহুরা অতি অল্প সময়ে অনেক সুনাম কামিয়ে ফেললো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে। তার এই কৃতিত্বের জন্য বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী ওই গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেন। লিকলিকে ও ছোটখাট গড়নের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তহুরা আজ শুধু ময়মনসিংহই নয়, সারা বাংলাদেশের গর্ব। রবিবার সে আরেকবার সবাইকে গর্বিত করলো। সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম খেলায় ৬-০ গোলে কচুকাটা করে নেপালকে। ম্যাচে চোখ ধাঁধানো হ্যাটট্রিক করে তহুরা। এছাড়া একটি গোলের জোগানও দেয়। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে দুটি হ্যাটট্রিকের মালকিন হলো তহুরা। প্রথমটি করেছিল তাজিকিস্তানের বিরুদ্ধে। ওই ম্যাচে ৯-১ গোলে জিতেছিল বাংলাদেশ। তহুরা করেছিল হ্যাটট্রিক। আসরটি ছিল এএফসি অ-১৪ আঞ্চলিক (সাউথ এ্যান্ড সেন্ট্রাল)। আর আন্তর্জাতিক ফুটবলে এ নিয়ে তহুরার গোল দাঁড়ালো ১৬তে। তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফসি অ-১৪ আঞ্চলিক আসরে ১০টি, নেপালে অনুষ্ঠিত একই আসরে ১ গোল, ঢাকায় অনুষ্ঠিত এএফসি অ-১৬ আঞ্চলিক আসরের বাছাইপর্বে ২ গোল এবং সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে ৩ গোল। এর আগে বয়সভিত্তিক ফুটবলে নেপালকে দু’বার হারিয়েছিল বাংলাদেশ যথাক্রমে ১-০ এবং ৯-০ গোলে। সেটা এএফসি অ-১৪ আঞ্চলিক আসরেই। রবিবার তাদের আরও একবার হারের তেতো স্বাদ উপহার দিল বঙ্গকন্যারা। আর সেই হারের জন্য হিমালয়কন্যারা দায়ী করতেই পারে অপ্রতিরোধ্য তহুরাকে। নিজের এলাকায় তহুরাকে সবাই ‘মেসি’ বলে ডাকে। এ প্রসঙ্গে তহুরার ভাষ্য, ‘এলাকার মুরুব্বীরা দেখলেই মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করেন। বলেন, মেসির মতো যেন সব ম্যাচেই গোল করি।’ একটু দম নিয়ে আরও যোগ করে সে, ‘এ ম্যাচের মতো পরের ম্যাচেও গোল করে দলকে জেতাতে চাই। এজন্য দেশবাসীর দোয়া চাই।’ বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘জেতার জন্য দলকে অভিনন্দন। নেপালকেও ধন্যবাদ। তারা দ্বিতীয়ার্ধে ভাল খেলেছে। লক্ষ্য ছিল প্রথম ম্যাচে জেতার এবং উপভোগ্য ফুটবল খেলা। দুটোতেই লক্ষ্য অর্জিত হওয়ায় খুশি। এ আসর শুরুর আগে অনুশীলন ম্যাচের ঘাটতি থাকায় খানিকটা শঙ্কা ছিল। আজকের ম্যাচে জিতলেও আমাদের খেলায় কিছু ভুল ছিল। সেগুলো যেন পরের ম্যাচে না হয় সেজন্য সতর্ক থাকব।’ দল বড় ব্যবধানে জিতেছে ঠিকই। কিন্তু আরও বেশি গোল করতে পারতো তহুরারা। ছোটনের ভাষ্য, ‘গোলের অনেক সুযোগ নষ্ট করলেও অখুশি নই। পরের ম্যাচ ভুটানের বিরুদ্ধে। ম্যাচটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ওই ম্যাচে জিতলেই ফাইনালে যাওয়া আশিভাগ নিশ্চিত হয়ে যাবে।’ নেপালের কোচ গঙ্গা গুরুং বলেন, ‘জানতাম বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী। পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করব। খেলায় আমাদের বল নিয়ন্ত্রণ ছিল খুবই কম। ফিজিক্যালি ও টেকনিক্যালি প্রতিপক্ষ আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। যোগ্য দল হিসেবেই বাংলাদেশ জিতেছে। ওদের তহুরা তো খুবই প্রতিভাবান।’ তহুরা কি পারবে পরের ম্যাচে ভুটানের বিরুদ্ধেও ঝলসে উঠতে?
×