ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের পক্ষ থেকে আবাসন ঋণের ঘোষণা চায় রিহ্যাব

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

সরকারের পক্ষ থেকে আবাসন ঋণের ঘোষণা চায় রিহ্যাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কয়েক বছর ধরে নীতিনির্ধারণী কিছু সমস্যার কারণে আবাসন খাত সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও সঙ্কট এখনও চলছে। কয়েকটি বেসরকারী ব্যাংক এক অঙ্কের সুদে আবাসন ঋণ দিলেও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন ঘোষণা আসেনি। পাশাপাশি সরকারের কাছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের আবাসনের স্বপ্ন পূরণ করতে ২০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল চেয়েছে দেশের আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের এসব দাবি জানান সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন)। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাবের শীতকালীন আবাসন মেলা। এই মেলাকে কেন্দ্র করে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রিহ্যাব। লিখিত বক্তব্যে নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, সরকারের রাজস্ব আয়, কর্মসংস্থান, রড, সিমেন্ট, টাইলসসহ ২৬৯ প্রকার লিংকেজ শিল্প প্রসারের মাধ্যমে সমগ্র নির্মাণ খাত জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আবাসন খাতের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশের আবাসন শিল্প শুধু আবাসনই সরবরাহ করছে না, একই সঙ্গে ৩৫ লাখ শ্রমিকের উপর নির্ভরশীল ২ কোটি লোকের অন্নের যোগান দিয়েছে। আবাসন খাত নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের সৃষ্টি করছে, যা প্রকারান্তরে দেশের উন্নয়নে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। রিহ্যাব সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই আজ শহরগুলোতে স্কাই লাইনের পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, আবাসন খাতে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় বিশ্বের অন্য সব দেশ থেকে আমাদের বেশি। উন্নত বিশ্বে রেজিস্ট্রেশন ফি তিন থেকে সাত শতাংশ হলেও আমাদের দেশে তা প্রায় ১৪ শতাংশ। এর কারণে অনেক ক্রেতাই রেজিস্ট্রেশন না করেই ফ্ল্যাট বুঝে নিচ্ছেন। এতে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, রেজিস্ট্রেশন ফি কমানো গেলে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে অপরদিকে এ খাতের মন্দাও কেটে যাবে। সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের আবাসনের স্বপ্ন পূরণ করতে ২০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল চেয়েছে রিহ্যাব। যাতে করে এক অঙ্কের সুদে আবাসনের জন্য ঋণ পাওয়া যায়। রিহ্যাবের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে নীতিনির্ধারণী কিছু সমস্যার কারণে আবাসন খাত সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও সঙ্কট এখনো চলছে। কয়েকটি বেসরকারী ব্যাংক এক অঙ্কের সুদে আবাসন ঋণ দিলেও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন ঘোষণা আসেনি। রিহ্যাবের দাবি কেন পূরণ হচ্ছে না, সমস্যা কোথায়? জানতে চাইলে নুরুন্নবী চৌধুরী বলেন, আবাসন খাতকে চাঙ্গা করতে কয়েক বছর ধরেই কিছু দাবি-দাওয়া জানিয়ে আসছে রিহ্যাব। তবে দাবি একেবারেই পূরণ হয়নি তা বলা যাবে না। সরকার থেকে ঘোষণা না এলেও হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন সাড়ে আট শ’ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। তারা এক অঙ্কের সুদে আবাসন ঋণ দিচ্ছে। এ ছাড়া নিবন্ধন ফি কমানোর আশ্বাস মিলেছে। আশা করছি, আসছে বছর ঘোষণা আসবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাবের আবাসন মেলার উদ্বোধন করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদে, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, এমপি। এবারের মেলায় ২০৩টি আবাসন, ভবন নির্মাণসামগ্রী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। ২৪টি প্রতিষ্ঠান মেলায় স্পন্সর হয়েছে। উদ্বোধনের দিন বেলা দুইটায় মেলার প্রবেশদ্বার দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হবে। বাকি দিনগুলোয় সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলায় একবার প্রবেশের জন্য টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা আর পাঁচবার প্রবেশের জন্য ‘মাল্টিপল টিকেট’ ১০০ টাকায় পাওয়া যাবে। টিকিটের অর্থ দুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্যার্থে ব্যয় করা হবে। প্রবেশ টিকিটে র‌্যাফেল ড্র হবে। মেলায় প্রবেশ টিকিটের র‌্যাফেল ড্র তে থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কার। এ বছর মেলার শেষদিন ২৫ ডিসেম্বর রাত ৯টায় র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর র‌্যাফেল ড্র এর ১ম পুরস্কার- ১টি প্রাইভেটকার, ২য় পুরস্কার একটি মোটরসাইকেল, ৩য় পুরস্কার ১টি ফ্রিজ, ৪র্থ পুরস্কার- ১টি ৪২ ইঞ্চি এলইডি টেলিভিশন, ৫ম পুরস্কার-১টি ওয়াশিং মেশিন ও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম পর্যন্ত মোবাইল ফোন। উল্লেখ্য, ২০০১ সাল থেকে ঢাকায় আবাসন মেলা শুরু করে রিহ্যাব। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ১০টি মেলা করেছে তারা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ১২টি, যুক্তরাজ্য, দুবাই, ইতালির রোম, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও কাতারে ১টি করে আবাসন মেলার আয়োজন করেছে রিহ্যাব। সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব পরিচালক ও প্রেস এ্যান্ড মিডিয়া কমিটির কো-চেয়ারম্যান কামাল মাহমুদ, রিহ্যাব পরিচালক ও মেলা কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ শাকিল কামাল চৌধুরী, রিহ্যাব পরিচালক মোঃ আবু বকর সিদ্দিক, মেলা কমিটির সদস্য মির্জা আনোয়ার, এস এম ইমদাদ হোসেন, এম জি আজমসহ অন্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
×