ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৪৪ বছর আগে শেখ রেহানার চিঠিটি আজও তার স্মৃতি

বরিশালে বিজয় দিবসে ভিনদেশী লুসিকে মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

বরিশালে বিজয় দিবসে ভিনদেশী লুসিকে মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্ট। ভিনদেশী হয়েও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়েছেন। ১৯৭১ সালে চিঠি লিখে বাংলাদেশের যুদ্ধের ভয়াবহতার চিত্র বিদেশে জানানোর কাজ করেছেন তিনি। তার এ কাজের স্বীকৃতি কাগজে কলমে কোথাও লিপিবদ্ধ না হলেও এবারের বিজয় দিবসের দিনে তাকে সম্মাননা জানিয়েছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর চাঁদমারীতে পুলিশ অফিসার্স মেসে খেতাবপ্রাপ্ত, যুদ্ধাহত ও পুলিশ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে লুসি হল্টের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমিন। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রবাসী সরকারকে প্রথম গার্ড অব অনার প্রদানের নেতৃত্বদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুব উদ্দিন বীর বিক্রম। অনুষ্ঠানে লুসি হল্টকে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা দেয়ার পাশাপাশি আরও ৩৯ খেতাবপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত ও পুলিশ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেয়া হয়। সম্মাননা পেয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে লুসি হল্ট বলেন, আমি কোনদিন এমন সম্মাননা পাব ভাবিনি। এ দেশকে ভালবাসি বলেই এ দেশে থেকেছি। সূত্র জানায়, ইংল্যান্ডের নাগরিক লুসি হল্ট ঊনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে কাজ করতে এ দেশে আসেন। স্বল্প সময়ের জন্য থাকার কথা থাকলেও তিনি বাংলাদেশকে ভালবেসে এ দেশেই থেকে যান। এ দেশের আবদ্ধ হয়ে অদ্যাবধি তিনি রয়ে গেছেন এদেশে। ৮৮ বছর বয়সের লুসি হল্টের জীবনের শেষ ইচ্ছা বাংলার মাটিতেই তাকে যেন সমাহিত করা হয়। তিনি ১৯৭১ সালে যশোরের ফাতেমা হাসপাতালে বেসামরিক যুদ্ধাহত মানুষের চিকিৎসা সেবায় অংশ নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখেন। আবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় নীরবে কাজ করেছেন মানবকল্যাণে। একাত্তরে এ দেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিদেশীদের সমর্থন চেয়েছিলেন লুসি। ’৭১ সালের ২ মে লুসি তার মায়ের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। যে চিঠিটি মায়ের মৃত্যুর পরে লুসির বোন ফেরত দিলে সেটি আজও তার সংরক্ষণে রয়েছে। সেই চিঠিতে লুসি হল্ট উল্লেখ করেছিলেন, বাঙালীরা পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ চায় না। পাকিস্তানী নয় বাঙালী হয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায়। যোগ্য নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে পেয়েছে বাঙালীরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে একমত প্রকাশ করে লুসি আরও লিখেছিলেন, পাকবাহিনীর হাতে নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর হামলার ভয়াবহতার তথ্যও। এ চিঠি পেয়ে সে সময় লুসির পরিবার তাকে ইংল্যান্ডে ফিরতে বললেও লুসি এদেশের মায়া ছেড়ে যাননি। বরং অন্য দেশে থাকা বন্ধুদের চিঠিতে জানান, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার যৌক্তিকতা। লুসি তার বিদেশী বন্ধুদের জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর প্রেরণা ছিলেন তার স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা। কিন্তু সেই অর্থে সবার সামনে ফজিলাতুন্নেসার ‘ত্যাগের’ কথা তুলে ধরা হয়নি। যুদ্ধ শেষে তাই লুসি হল্ট ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে উপহার পাঠিয়েছিলেন। জবাবে ’৭৩ সালের ২০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ রেহানার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পেয়েছিলেন লুসি। সেই চিঠিতে লুসিকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন শেখ রেহানা। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ভাগ্যক্রমে দুই কন্যাবাদে বঙ্গবন্ধু সপরিবারকে নিহত হওয়ার পর আর যোগাযোগ রক্ষা হয়নি। কিন্তু স্মৃতি হিসেবে লুসি আজও ধরে রেখেছেন শেখ রেহানার সেই চিঠি। চলনে বলনে বাঙালী নারীর মতো লুসি হল্টের প্রত্যাশা বাংলাদেশ তাকে দ্বৈত নাগরিকত্ব দেবে। ভিসা নবায়নের জন্য বছরে তার (লুসি হল্ট) ৩৮ হাজার টাকা গুনতে হয়। ওই টাকাটাও মওকুফ করাতে চান লুসি। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
×