ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন

গত দশ মাসে ৮৯৮ শিশু নির্যাতনের শিকার

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

গত দশ মাসে ৮৯৮ শিশু নির্যাতনের শিকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলতি বছরের দশ মাসে ৮৯৮ শিশু নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ শিশুর বয়স সাত থেকে বারো বছরের মধ্যে। ২১৯ শিশুর বয়স আঠারো বছরের নিচে এবং বয়সের উল্লেখ নেই এমন ৪২৮ শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে। ৮৯৮ শিশুর মধ্যে মাত্র ৩৮৮ কেস ফাইল হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত শিশু নির্যাতনের এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুসারে, দশ মাসে ৩৮৪ শিশু ধর্ষণের শিকার, শারীরিক নির্যাতনে ১২১, শিক্ষক দ্বারা নির্যাতনের শিকার ১০৩, এছাড়া অন্যন্যভাবেও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে প্রতিবেদনের চিত্র বলছে, শিশু পাচার ও শিশু গৃহকর্মীর ওপর নির্যাতনের হার কমছে। বিজ্ঞজনেরা বলছেন, প্রতিবছরই উদ্বেগজনকহারে নানা মাত্রায় বাড়ছে শিশু বিপর্যয়ের ঘটনা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইডের প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ বছরের নবেম্বরে মোট ৪২৭ নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে মোট ১০৭-এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৩, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২ জনকে। অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ২৩। বিভিন্ন কারণে ৪২ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ৪ জনকে। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২১। এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ৯ জনকে। উত্ত্যক্তের শিকার ১৭, এর মধ্যে উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে ৪। অন্যান্য কারণে ৪৯ জন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে এবং ২৯ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ৬০ বাল্যবিবাহের চেষ্টা প্রতিরোধ করা হয়েছে এবং বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে ৪। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৫। এছাড়া অন্যরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বেসরকারী সংস্থা শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যমতে, ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫ শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ২০১২ সালে ২০৯, ২০১৩ সালে ২১৮, ২০১৪ সালে ৩৬৬ এবং ২০১৫ সালে ২৯২। ২০১৫ সালে সহিংসতা ও নির্যাতনের মোট ঘটনা ছিল ৫ হাজার ২১২। ২০১৬ সালে ৩ হাজার ৫৮৯। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে শিশু নির্যাতনের ঘটনা কমলেও চলতি বছর তা বাড়বে বলে মনে করছে সংস্থাটি। যারা সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে তাদের মধ্যে ১ হাজার ৪৪১ শিশু অপমৃত্যুর শিকার। এ ছাড়া যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে আরও ৬৮৬ শিশু। চাইল্ড রাইট এ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ মনে করে, দেশে দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচারের সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে বলে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়। এটা সভ্য সমাজে চলতে পারে না। সেভ দ্য চিলড্রেনের শিশু প্রতিনিধি শামসুল আলম বকুল বলেন, শিশুদের ওপর নৃশংস ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অপরাধীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পার পেয়ে যাচ্ছে বলে, এই ঘটনাগুলো বেড়ে চলেছে। রাজনের ক্ষেত্রে পুলিশের উদাসীনতা কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা সভ্য সমাজে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না। সংবিধানে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ আছে। তাই রাষ্ট্রকে চুপ থাকলে চলবে না। রাষ্ট্রকে দোষীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেয়ার দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে তিনি সামাজিক আন্দোলন ও গণমাধ্যমের ব্যাপক সচেতনতার কথা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, আমাদের আত্মসমালোচনা করতে হবে, নতুন কর্ম পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে হবে। তরুণ প্রজন্ম, রাজনৈতিক দলের নেতাদের নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদের মতামত জানতে হবে তারা আসলে কি ভাবছে নারী নির্যাতন নিয়ে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। এত ঘটনা ঘটে যায় কিন্তু কেন মাত্র ২ শতাংশ বিচার পায় সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি বলেন, ধর্ষণের শিকার নয় যে ধর্ষণ করেছে তাকে প্রমাণ করতে হবে যে সে অপরাধী নয়। পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তৈরি এই আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। পুলিশ প্রশাসন যদি জেন্ডার সংবেদনশীল না হয় তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে এই ২ শতাংশ বিচারও আমরা পাব না। নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বিষয়ে অমাদের সকলের যৌথ কর্মসূচী নিতে হবে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নারী ও শিশু মন্ত্রলয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে এবং সেই মন্ত্রণালয়কে কাজ করতে হবে। ঘরে ঘরে গিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সম্মানের বিষয়টি যুক্ত করতে হবে। মানুষকে জানাতে হবে, সকলকে নিয়ে প্রতিরোধের কাজ করতে হবে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা রুখতে জনসচেতনতা তৈরির প্রতি জোর দিয়ে বলেছেন, সরকার শিশু নির্যাতন বন্ধে আন্তরিক।
×