ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমত ॥ মতলব বাজদের মুখোশ......-মোঃ ফজলুল হক মাস্টার

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

অভিমত ॥ মতলব বাজদের মুখোশ......-মোঃ ফজলুল হক মাস্টার

বেঁচে থাকা কঠিন আর বাঁচার তাগিদ তীব্র। সমাজ, রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক রাজনীতিকরা। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ যদি মন্দ মানুষের হাতে থাকে তবে বাঁচার পথ খুবই কঠিন হয়ে উঠে। ধীরে ধীরে সমাজ-রাষ্ট্র মন্দ লোকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। এখন দাপট হলো পুঁজি। ন্যায়নীতি সততা যদি পুঁজি হয় তবেই সমাজ-রাষ্ট্র বাঁচার উত্তম ক্ষেত্র হয়ে উঠবে। আমরা দেখলাম ধর্মীয় বিভাজনের জন্যে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানরা নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা দেখেছি কাবুলিয়াদের দাপট। দাপটের দৌরাত্ম্য বেশিদিন চলে না। ভালর বিকল্প কিছুই নেই। ফরমালিনযুক্ত ফল ভাল না, লোকে তা ক্রয় করতে নারাজ। কিন্তু মন্দ লোকদের যদি দলীয়ভাবে প্রার্থিতা দেয়া হয় তখন সমর্থকদের মন্দ লোককেই ভোট দিতে হয়। যেহেতু রাষ্ট্র এবং সমাজ সবকিছুই রাজনীতিকদের নিয়ন্ত্রণে তখন রাজনৈতিক দলগুলোকে ভাল লোকদেরই নেতৃত্বে নিয়ে আসা দরকার। প্রধানমন্ত্রীর মানবিকতার প্রত্যয়টি দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে- মানবেতর, নির্যাতিত, বিতাড়িত রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে। গণতান্ত্রিক ও মানবিকতার প্রত্যক্ষ রূপ এটি। অনেকে বলছেন দেশে এখন না-কি গণতন্ত্র নেই। যারা এটা বলছে বরং তারাই গণতন্ত্র পছন্দ করেন না। তাদের অভ্যাসও নেই গণতন্ত্র চর্চা করার। তাদের আচরণ গণতান্ত্রিকভাবে রপ্ত করা নয়। অনিবার্য সত্য এটাই যে, গণতন্ত্রের স্পর্শে এখন দেশ এগিয়ে চলছে। সমকালে গণতন্ত্র অনেকটাই শক্তিশালী-এটা যারা দেখে না তারা যেনতেনভাবে ক্ষমতা পেতে চায় এবং ক্ষমতার মোহে গণতন্ত্রের আওয়াজটুকু শুধু মুখে উচ্চারণ করে থাকে। জামায়াতও গণতন্ত্রের কথা মুখে বলে থাকে কিন্তু বাস্তবে জামায়াত গণতন্ত্রের ঘোর বিরোধী। ড. কামাল হোসেন বর্তমান শাসনামলে গণতন্ত্র দেখে না কিন্তু তার সৃষ্ট রাজনৈতিক দল কি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিচালিত? গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণে তার দল গণফোরাম কি জনমনে নন্দিত? বিএনপি দুর্নীতির নিন্দিত পথে যতটা পা দিয়েছে তাতে গণতন্ত্র বিএনপি চর্চা করে- এটা কেউ বলবে না। বিএনপির উত্থান এবং বর্তমানকাল গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে খুবই নেতিবাচক এটা পর্যবেক্ষণ যোগ্য অনিবার্য সত্য। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিগত সময়ে বিএনপির নেত্রী কখনোই সহজভাবে মেনে নেয়নি। সোজাকথা গণতান্ত্রিক পথ বিএনপি অনুসরণ ও অনুকরণে অভ্যস্ত নয়, তা বারবার প্রমাণিত। নিকট অতীতে আগুন সন্ত্রাস বিষয়টির তরতাজা নজির। আজ গণতন্ত্র যতটা সঙ্কটে তার সবটাই বিএনপির দ্বারা এবং সামরিক শাসক দ্বারা সৃষ্ট। যখনই শেখ হাসিনা শাসন ক্ষমতায় এসেছে তখনই গণতন্ত্রের সূর্যটা আলোকময় হয়েছে। সুশাসন যতটা পর্যবেক্ষণ যোগ্য হয়েছে, সবটাই শেখ হাসিনার শাসন আমলেই দৃশ্যমান হয়েছে। তাদের আকুতি গণতন্ত্রের জন্য এবং সুশাসনের জন্য। গণতন্ত্রের দৈন্য সৃষ্টির অপপ্রয়াসে বিএনপি-জামায়াত জোট ইচ্ছা করেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যায়নি। এটা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীগণ আলোচনায় আনতে নারাজ। রাজনীতি থাকবে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করে যারা রাজনীতি করছে তাদের বিষয়টি হালকা করে দেখতে দেখতে আজ রাজনীতির অগ্রগতি হুমকির মুখে। সমষ্টিগত কর্ম-উদ্যোগ আর ভালর জন্য আমাদের মাথাব্যথা কম। এ বিষয়ে অনুভূতি প্রবল হয়ে উঠবার কথা যখন বিএনপি বলে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হচ্ছে না, সরকার মুসলিম বিদ্বেষী তাই। আবার যখন রোহিঙ্গাদের সরকার আশ্রয় দিল তখন বিএনপি বলল সরকার রোহিঙ্গা প্রশ্নে সুবিধাবাদী অবস্থানে। এসব কি অপরাজনীতি নয়? আরও বলা যায় এসব হলো নষ্ট মানসিকতা এবং এটাই আমাদের রাজনীতির অগ্রসরতার পথে প্রধান বাধা। একটি জাতির অগ্রগতির জন্য চাই সকলের আত্মশক্তির জাগরণ এবং তা হতে হবে জনগণের বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে। স্পষ্ট এটাই যে শেখ হাসিনা সরকার জনগণের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে বলেই বিএনপি আন্দোলনে-অবরোধে জনগণ না পেয়ে নানা সময়ে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। রাজনীতির ধারণা কিংবা দর্শন শুধু ক্ষমতা নয় তা হলো আদর্শিকভাবে জনকল্যাণ। কিন্তু আমাদের রাজনীতিতে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ব্যতীত কিছুই নেই। যেমন আমারদের দৃষ্টির অগোচরে নয় জোট সরকার জঙ্গীদের মদদ দিয়েছে। তাহলে এসব রাজনৈতিক দল কিভাবে গণতন্ত্র চর্চা করবে? সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে? জনগণের কল্যাণ করবে। মিথ্যা, বিভ্রান্ত কখনোই টেকসই হয় না। মুক্তিযুদ্ধের বছরকে গ-গোলের বছর বলে চালিয়ে দেয়ার সুযোগ আর নেই। শহীদ মিনারে এখন লোকের ঢল নামে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকালীন সময়ে জামায়াত নেতা নিজামীও শহীদ মিনারে গিয়েছে, ফুল দিয়েছে। মতলববাজদের মুখোশ এভাবে আপনা থেকেই খুলে যায়। আজকের তরুণরা শাহবাগে জয়বাংলা স্লোগান ধরলে লাখ লাখ মানুষ সেখানে জড়ো হয়ে প্রমাণ করেছে মুক্তিযুদ্ধের এ স্লোগানে হিন্দুয়ানীর স্পর্শ নেই। এক সময়ে জামায়াত, নেজামে ইসলামী, মুসলিম লীগদের নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীলরা অনেক নাটকের অবতারণা করলেও সমকালে হেফাজতীদের নিয়ে তেমনটা সুবিধা করতে পারেনি। অর্থাৎ ধীরে ধীরে সাম্প্রদায়িকদের, প্রতিক্রিয়াশীল চক্রদের পতন হচ্ছে। জামায়াত জনমন থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। বিএনপি- এ প্রতিক্রিয়াশীল দলটি বর্তমানে দিশেহারা। মতলববাজরা আরও দূরে যাবে যদি গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া সম্ভব হয়। রাষ্ট্র বৃহত্তর প্রতিষ্ঠান। সকল ধর্মের এবং সকল চরিত্রের মানুষের সমাহারে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র প্রধান এবং পরিচালকদের দায়িত্ব হলো সকলের মাঝে সুন্দর সমন্বয় সাধন করা। চির অম্লান মানবিক চেতনাকে সমৃদ্ধ করার মহতী উদ্যোগ আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়েছেন- আশ্রয়হীন, খাদ্যাহীন, রাষ্ট্রহীন, বঞ্চিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে। আমরা অনুরূপ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হলেই রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে মানব কল্যাণের জাগরণ সৃষ্টি হবে। লেখক : শিক্ষাবিদ
×