ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

২৪ ডিসেম্বর রাজধানীতে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ করে দল চাঙ্গা করবে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

২৪ ডিসেম্বর রাজধানীতে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ করে দল চাঙ্গা করবে বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ শীঘ্রই মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চায় বিএনপি। এজন্য প্রথমেই রাজধানীতে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচী পালনের পর দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ঢাকার বাইরে ক’টি জেলা সফরে গিয়ে বড় ধরনের সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের দলীয় কর্মসূচীতে সক্রিয় করার কৌশল নিয়েছে বিএনপি হাইকমান্ড। জানা যায়, বিজয় দিবসের কর্মসূচী শেষে ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। এ সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এ কর্মসূচী শেষে ইস্যুভিত্তিক আরও ক’টি কর্মসূচী পালনের পর ঢাকার বাইরে ক’টি জেলা সফরে যাবেন খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি জনসংযোগের পাশাপাশি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে করার পক্ষে জনমত তৈরি করবেন। সেই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাবেন। সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সারাদেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে শীঘ্রই জেলায় জেলায় সফরে গিয়ে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জনসংযোগ কর্মসূচী শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইতিমধ্যেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয় থেকে বিভিন্ন জেলা নেতাদের এ কথা জানানো হয়। জেলা নেতারাও নিজ নিজ এলাকায় খালেদা জিয়াকে বরণ করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। কোন জেলায় কখন খালেদা জিয়া সফরে যাবেন তাও বিজয় দিবসের কর্মসূচী শেষ হওয়ার পর জানিয়ে দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি কার্যত মাঠের রাজনীতিতে নেই। বিশেষ করে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে টানা ৯২ দিনব্যাপী নেতিবাচক আন্দোলন করতে গিয়ে রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় পড়ার পর এক প্রকার নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় দলটি। গত বছর ১৯ মার্চ জাঁকজমকভাবে জাতীয় কাউন্সিল করে ৫৯২ সদস্যের ঢাউস কমিটি দিয়েও দলকে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় করতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বরং দলের ভেতর এখন নানামুখী সমস্যা দেখা দিয়েছে। মাঝেমধ্যে ইস্যুভিত্তিক কিছু ঘরোয়া কর্মসূচী পালন করলেও এসব কর্মসূচীতে দলের নেতাকর্মীদের তেমন উপস্থিতি ঘটে না। এর ফলে এসব কর্মসূচী সফল হয় না। তবে সম্প্রতি কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভাকে কেন্দ্র করে দলকে কিছুটা চাঙ্গা করতে পেরেছেন খালেদা জিয়া। ২৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করতে চায় বিএনপি। এতে সারাদেশ থেকে বিএনপি সমর্থক মুক্তিযোদ্ধাদের আগমন ঘটনানোর পাশাপাশি ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে দলের হাইকমান্ড থেকে ইতিমধ্যেই দায়িত্বশীল নেতাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি সর্বস্তরে দলের কমিটি পুনর্গঠনের কাজও চালিয়ে যাবে বিএনপি। এজন্য ইতিমধ্যেই কিছু কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। তৃণমূলে দল পুনর্গঠনের জন্য ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের নেতৃত্বে দলের কিছু কেন্দ্রীয় নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এক এক করে বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকেও পুনর্গঠন করা হচ্ছে। আর এ কাজ তদারকি করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও মাঝেমধ্যে তৃণমূলে কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমনসহ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নামে থাকা মামলাগুলো থেকে কিভাবে রেহাই পাওয়া যায় সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করতে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে বিএনপি হাইকমান্ড নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে। এসব মামলাগুলোর ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছতে প্রয়োজনে সরকারকে রাজনৈতিকভাবে কোন কোন বিষয়ে ছাড় দিতেও বিএনপি রাজি। তবে সমঝোতা হতে হলে সরকারী দলের সঙ্গে যে বিএনপির আলোচনা প্রয়োজন সে বিষয়টিকে মাথায় রেখেই তারা বার বার সংলাপের কথা বলছেন। সরকারী দলের পক্ষ থেকে সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করার পরও বিএনপি সংলাপের দাবি থেকে সরে আসছে না। বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আগে বেশ ক’বার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার পর এখন টানা ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি আর বেশিদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে চায় না। তাই দলটির আপাতত লক্ষ্য যে ধরনের সরকারের অধীনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হোক না কেন পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করা। আর তার জন্য সরকারকে এখন থেকেই ঘরে বাইরে চাপে ফেলে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা আদায় করা। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ক্ষমতা হারানোর পর টানা দুই বছর রাজনৈতিকভাবে চরম বৈরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বিএনপি। এ সময় দলের অনেক সিনিয়র নেতাকে বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে জেলও খাটতে হয়। তবে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নিবাচনে অংশ নিয়ে বিরোধী দল হিসেবে সংসদে যাওয়ার সুযোগ পায় তারা। কিন্তু ২০১৩ সালে ২০ দলীয় জোটের ব্যানারে নেতিবাচক আন্দোলন কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে আবারও কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে বিএনপি। বিএনপির এ নাজুক পরিস্থিতিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এ নির্বাচন বয়কট করে ফের সংসদের বাইরে এবং ক্ষমতা থেকে অনেক দূরে চলে যায় বিএনপি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় ৪ বছর কেটে গেলেও সরকারকে চাপে ফেলে মধ্যবর্তী নির্বাচন আদায় করার মতো কিছু করতে পারেনি দলটি। বাকি এক বছরে কিছু করতে পারবে এমন পরিস্থিতিও এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। তবে এ পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় নিয়েই দলটি সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় করার কৌশল নিয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সারাদেশের ক’টি জেলায় জনসভা করে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার জন্য জনমত তৈরি করেন। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচী ঘোষণা করে সারাদেশ থেকে বিএনপি জোটের নেতাকর্মীদের রাজধানীতে এসে জড়ো হওয়ার ডাক দেন খালেদা জিয়া। তার ডাকে সাড়া দিয়ে ক’দিন আগে থেকেই সারাদেশ থেকে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার কারণে ঢাকা আসতে না পেরে তারা নিজ নিজ জেলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু রাজধানীতে অবস্থান করা বিএনপির সিনিয়র নেতারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় দলের কোনস্তরের নেতাকর্মীরা ২৯ ডিসেম্বর রাজপথে নামার সাহস দেখাননি। তবে ওইদিন বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসা থেকে বের হতে চাইলেও পুলিশী বাধায় তিনি বাসা থেকে বের হতে পারেননি। এ কারণে মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচী ব্যর্থ হয়। মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচী ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সারাদেশে ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক সংগ্রাম কমিটি গঠন করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। তার ঘোষণার সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার ব্যাপক চেষ্টা করলেও রাজধানীতে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন ঠেকানোর কোন চেষ্টাই পরিলক্ষিত হয়নি। এ কারণে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। আর এজন্যই তাদের সক্রিয় করতে বিএনপি হাইকমান্ড নতুন করে কর্মকৌশল হাতে নিয়েছে। সূত্র মতে, বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মী মনে করেন, সর্বস্তরে দল গোছিয়ে ভোটের রাজনীতিতে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান টিকিয়ে রাখার জন্য পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলকে অংশ নিতে হবে। আর নির্বাচনের আগে যদি দেখা যায় ২০১৪ সালের মতোই নির্বাচন হবে সে ক্ষেত্রে কঠোর আন্দোলনের পথে গিয়ে দলের রাজনৈতিক অবস্থান ঠিক রাখা। বিএনপি হাইকমান্ড সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই পরবর্তী কর্মকৌশল নির্ধারণের চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, শীঘ্রই কিছু কর্মসূচী নিয়ে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হবে বিএনপি। রাজধানীতে বিভিন্ন ইস্যুতে কর্মসূচী পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে সমাবেশ করা হবে। এভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় করা হবে।
×