ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ বছর ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হবে

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

এ বছর ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এখন নিরাপদ অভিবাসন ও কর্মীদের নিরাপত্তা বিধান করাই হবে বড় কাজ। বিদেশে দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ কাজ করছেন। তাদের সুবিধা-অসুবিধায় পাশে থাকার জন্য আমরা ইতোমধ্যে কিছু কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছি। দেশ থেকে অদক্ষ কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে দক্ষ কর্মী পাঠানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিদেশে অদক্ষ কর্মীই বেশি বিপদগ্রস্ত হন। দক্ষ কর্মী বেশি বেতনে চাকরি পেয়ে যান। গোটা অভিবাসন প্রক্রিয়ায় আমরা এবার অনেকটা পরিবর্তন এনেছি। পরিবর্তিত সিদ্ধান্তের আলোকে বিদেশে কর্মী পাঠানো হবে। এ বছর আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবসের মূল প্রতিপাদ্যও হচ্ছে ‘নিরাপদ অভিবাসন যেখানে, টেকসই উন্নয়ন সেখানে’। প্রতিবছরের মতো প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ বছরও ১৮ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ যথাযথ মর্যাদায় পালন করবে। আমাদের সব আয়োজন মূল প্রতিপাদ্যকে ঘিরেই। রাজধানীর ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনে আয়োজিত আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালন উপলক্ষে প্রেসব্রিফিংয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি এ কথা বলেন। প্রেসব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার, অতিরিক্ত সচিব আমিনুল ইসলাম, বিএমইটির মহাপরিচালক সেলিম রেজা, বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মরণ কুমার চক্রবর্তীসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বৃন্দ। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, এ বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট ৯ লাখ ৭৩ হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এবারই প্রথম বিপুলসংখ্যক কর্মীর বিদেশে চাকরি হয়েছে। তাছাড়া সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী কর্মী বিভিন্ন দেশে চাকরি পেয়েছেন। নারী কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ১৮ হাজার। আশা করছি, এ বছর ১০ লাখের বেশি কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হবে। প্রধানমন্ত্রীর দিক নিদের্শনায় আমরা আমাদের নারী অভিবাসী কর্মীদের অধিকার ও সুরক্ষার পাশাপাশি অভিবাসনকে নারীর ক্ষমতায়নে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। এ জন্য নারী কর্মীর প্রশিক্ষণ ও ব্রিফিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করছি। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স জাতীয় উন্নয়নের অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিবেচনায় নি¤œ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের এ সাফল্যে প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিটেন্স গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ক্রমান্বয়ে রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকে সঞ্চিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আমাদের অর্থনীতিকে দাঁড় করেছে শক্ত ভিত্তির ওপর। নূরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন মাইগ্রেশন’ প্রস্ততির বিভিন্ন পর্যায়ে এ মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। কম্প্যাক্ট চূড়ান্ত হলে তা অভিবাসী কর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া আবুধাবী সংলাপ, কলম্বো প্রসেস, বুদাপেস্ট প্রসেস প্রভৃতিতে এদেশের প্রবাসী কর্মীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদিতে মন্ত্রণালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া বিদেশে কর্মসংস্থানের বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখার জন্য বিদ্যমান শ্রমবাজার ধরে রাখাসহ আমরা নতুন নতুন সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার অনুসন্ধান করছি। নতুন শ্রমবাজারের সন্ধানে ৫২ দেশের শ্রম বাজার নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম সমাপ্তির পথে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী বিদেশগামী বাংলাদেশী কর্মীকে শতভাগ বীমার আওতায় আনার জন্য নীতিমাল চূড়ান্ত করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ‘নিরাপদ অভিবাসন যেখানে, টেকসই উন্নয়ন সেখানে’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০১৭ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপনের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। দিবসটি কেন্দ্র করে প্রতি জেলায় র‌্যালি, আলোচনা সভার পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টিমূলক প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহ এসব অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে যাবতীয় কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে দিনটিতে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে যা ইতোমধ্যে œ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার হচ্ছে। এছাড়াও টিভি স্ক্রলে এবং এসএমএসের মাধ্যমে দেশবাসীকে দিবসটি সম্পর্কে জানানো হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণীসহ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, টিভিতে টকশো এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান অতিথি এবং আমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হবে মূল উদযাপন। এতে বিশেষ অতিথি থাকবেন নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, এমপি, সভাপতি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং মোঃ শাহরিয়ার আলম, এমপি, প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১৮ ডিসেম্বর সকাল আটটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে মূল র‌্যালিটি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) যাবে। সকাল সাড়ে নয়টায় আলোচনা সভা। এরপর প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়, অভিবাসী মেলা-২০১৭, অভিবাসন বিষয়ক গম্ভীরা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। বিকেলে ‘সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব’ বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতা। চিত্রাঙ্কন, রচনা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও অভিবাসী মেলায় নির্বাচিত সেরা স্টলের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন মোঃ ইসরাফিল আলম, এমপি, সদস্য, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ব্রিফিংয়ে বলেন, দিবসটিকে কেন্দ্র করে মন্ত্রণালয় কিছু সুর্নিদিষ্ট ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি পূরণে এ মন্ত্রণালয়ের ১০ম তলায় আজ সকাল দশটায় স্থায়ীভাবে একটি ডে-কেয়ার সেন্টার উদ্বোধন করা হবে। প্রবাসীদের সুবিধা-অসুবিধা জানার জন্য রবিবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে মন্ত্রণালয়ের সচিব দিনটি হটলাইন নম্বর উদ্বোধন করেছেন। নম্বরগুলো হলো ০১৭৮৪-৩৩৩৩৩৩, ০১৭৯৪-৩৩৩৩৩৩ এবং ০২-৯৩৩৪৮৮৮। বাংলাদেশীদের জন্য জাপানীজ শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার প্রাক্কালে মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ভবনে মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে একটি স্থায়ী জাপানীজ ভাষা প্রশিক্ষণ সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়েছে। অভিবাসনে পিছিয়েপড়া ২২ জেলার প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়ে আপাতত প্রশিক্ষণটি শুরু হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যে অভিবাসনে পিছিয়েপড়া বাকি ২০ জেলার প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য প্রশিক্ষণ শুরু হবে।
×