ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৯৯.৪৭ শতাংশ শিশু স্কুলে যাচ্ছে;###;এক শ্রেণীর শিক্ষক ক্লাসে না;###;পড়িয়ে বাড়িতে কোচিং করান

প্রশ্নপত্র ফাঁস বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ॥ কিছু শিক্ষক দায়ী

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রশ্নপত্র ফাঁস বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ॥ কিছু শিক্ষক দায়ী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ শিক্ষা খাতের দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের দেয়া ৩৯ দফা সুপারিশ নিয়েও একসঙ্গে কাজ করবে সরকারের এ দুই প্রতিষ্ঠান। রবিবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সভায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুদকের সঙ্গে মিলে লড়াই করবে। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের জন্য কিছুসংখ্যক শিক্ষক দায়ী। তবে প্রশ্ন ফাঁসে সরকারী লোকজনই দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ সময় দুদক কমিশনার ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে গঠিত ‘শিক্ষা সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিম’-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পেশ করেন। এ সময় আরও ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মহিউদ্দিন খান, চৌধুরী মুফাদ আহমেদ, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস, এ কে এম জাকির হোসন ভূঞা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) পরিচালক অধ্যাপক আহমেদ সাজ্জাদ রশীদ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা, দুদক পরিচালক মীর মোঃ জয়নুল আবেদিন শিবলি প্রমুখ। কমিশনের মহাপরিচালক মোঃ আসাদুজ্জামান পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। প্রশ্ন ফাঁস, নোট-গাইড, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ, এমপিওভুক্তি, নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে দুর্নীতি রুখতেই এ ৩৯ দফা সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিয়েছে কমিশন। যে সব শিক্ষক অবৈধভাবে কোচিং করিয়ে সম্পদ অর্জন করেছেন এবং কোচিং সেন্টারের মালিকদের অবৈধ সম্পদ খতিয়ে দেখারও ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষকদের বদলি নিশ্চিত করা এবং ডিসেম্বরে নোট-গাইড প্রকাশনা সংস্থাগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানোর কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রশ্ন ফাঁস রোধসহ শিক্ষার মানোন্নয়নে পরীক্ষায় বহু নির্বাচনী প্রশ্ন সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে বর্ণনামূলক, সৃজনশীল ও বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন করার সুপারিশও করা হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাবলিক পরীক্ষার মাধ্যমেই রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে কিশোরদের প্রথম পরিচয় হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে সেখানেই তারা দুর্নীতির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসকে ‘দুর্নীতির নতুন সংযোজন’ হিসেবে বর্ণনা করে এতে বলা হয়, অবৈধ অর্থের বিনিময়ে কতিপয় দুর্নীতিপরায়ণ সরকারী কর্মকর্তা এ জাতীয় অপরাধের সঙ্গে জড়িত। প্রশ্ন ফাঁসের সম্ভাব্য উৎস সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ সরকারী প্রেস (বিজি প্রেস), ট্রেজারি ও পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোচিং সেন্টার, প্রতারক শিক্ষক ও বিভিন্ন অপরাধী চক্রও যুক্ত থাকতে পারে। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটিতে বাছাই করে মেধাবীদের নিয়োগ দেয়ার পাশাপাশি প্রশ্ন প্রণয়ন ও বিতরণে দায়িতপ্রাপ্তদের অঙ্গীকার নেয়া, মডারেটরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোর নজরদারিতে রাখা, প্রতিটি উপজেলায় সর্বোচ্চ দুটির বেশি পরীক্ষা কেন্দ্র না রাখা, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা আইন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা বা তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করার কথা বলা হয়েছে দুদকের সুপারিশে। কোচিং মালিক ও কিছু শিক্ষকের অবৈধভাবে স্বল্প সময়ে সম্পদ অর্জনের তীব্র আকাক্সক্ষা, শিক্ষা কার্যক্রমের মনিটরিংয়ের অভাব এবং অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে কোচিং ও নোট-গাইড বাণিজ্যের মাধ্যমে দুর্নীতি হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে দুদক। এই সমস্যার সমাধানে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান নিশ্চিত করতে নগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা মনিটরিং কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কোচিং বাণিজ্যের জন্য ঢাকার আট স্কুলের ৯৭ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলির নীতিমালা অনুসারে বদলি নিশ্চিত করা, শিক্ষকদের প্রশাসনিক কোন পদে পদায়ন না করা, ঢাকার কোন প্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষক তিন বছর চাকরি করলে তাকে শহরের বাইরের প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেয়া, বিষয়ের বাইরে ক্লাস না নেয়া নিশ্চিত করা এবং গ্রামের স্কুলগুলোতে শিক্ষকের স্বল্পতা দূর করতে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে বহু নির্বাচনী প্রশ্নপত্র সম্পূর্ণ বাদ দেয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে দুদক বলেছে, প্রশ্ন বর্ণনামূলক, সৃজনশীল ও বিশ্লেষণধর্মী করতে বলা হয়েছে। কোচিং নীতিমালার বাইরে যে সব শিক্ষক কোচিং করাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী অভিভাবকদের সম্মতিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কোচিং করানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে কিছু শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। কোচিং ও কোচিং সেন্টার বন্ধ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সকল কোচিং সেন্টারের মালিক বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, যারা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন তাদের বিষয়গুলো দুদক খতিয়ে দেখবে। প্রতিবছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সব নোট-গাইড প্রকাশনা সংস্থায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনার কথাও বলা হয়েছে সুপারিশে। জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগে পিএসসির আদলে কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে দুদক। এছাড়া বর্তমানে এমপিওভুক্তি বিকেন্দ্রীকরণের কারণে দুর্নীতি কিছুটা কমলেও এক্ষেত্রে নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করছে দুদক। বলা হয়, শুধু বিকেন্দ্রীকরণ নয়, নিয়মিত মনিটরিং করা প্রয়োজন। যে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর এ সব কাজে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন নীতিমালা অনুসরণ, তিন বছরের বেশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দফতর, অধিদফতর ও সংস্থা থেকে বদলি এবং শিক্ষকদের পেনশন আবেদনের সঙ্গে সঙ্গেই পেনশন প্রাপ্তির দিনক্ষণ জানিয়ে দিতে সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কাজ নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে দুদকের প্রতিবেদনে। বলা হয়, নিয়ম অনুসারে নথি নিষ্পত্তি না করে তা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে বিষয় নিষ্পত্তিতে বিলম্ব ঘটিয়ে দুর্নীতির পথ সৃষ্টি করা হয়। এ সব কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের গাড়ির অবৈধ ব্যবহার বন্ধ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন কিছু ক্রয়, গাড়ি ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ, প্রশিক্ষণের নামে অর্থ ব্যয়ে অনিয়মের যে সব অভিযোগ রয়েছে তা দূর করতে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিতে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুসারে শর্তপূরণে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। দুদকের প্রতিবেদন গ্রহণ করে সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের এই প্রতিবেদন সময়োপযোগী, এর অধিকাংশ সুপারিশই আমাদের নজরে রয়েছে। এই সমস্যাগুলো আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনকে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে দূর করব। আমাদের শিক্ষার মূল লক্ষ্য হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা যারা সততা, নিষ্ঠা, ন্যায় এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত থাকবে। মন্ত্রী বলেন, আমাদের সমাজে রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনৈতিকতা রয়েছে, পিতা যখন সন্তানের জন্য ফাঁস হওয়া প্রশ্ন সন্ধানে উদ্যোগী হন তা আমাদের অবশ্যই বিচলিত করে। শিক্ষার মান নিয়ে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষিত জাতি গঠন করতে হলে প্রথমত সকল শিশুকে বিদ্যালয়ে আনাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, আমরা সেই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি। এখন দেশের প্রায় ৯৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ শিশু বিদ্যালয়ে নাম লেখাচ্ছে। তাছাড়া প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগসহ শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রী বলেন, কিছুসংখ্যক শিক্ষকই প্রশ্ন ফাঁস করেন। প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে আমাদের কাছে বহু পরামর্শ আসছে। এর মধ্যে পরীক্ষার আধাঘণ্টা আগে শিক্ষার্থীরা রুমে প্রবেশ করার পর প্রশ্নপত্র পাঠানোর বিষয়টিও আলোচনা হচ্ছে। তবে শিক্ষকই যখন প্রশ্ন ফাঁসকারী তখন আধাঘণ্টা আগে প্রশ্ন পাঠিয়ে কী লাভ? আমরা বিজি প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁসরোধের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, শিক্ষকের হাতে প্রশ্ন তুলে দিয়ে রাতে নিরাপদে আমাদের ঘুমাতে যাওয়া উচিত। কিন্তু সেটা হচ্ছে না, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। কিছু শিক্ষক প্রশ্ন ফাঁস করে দিচ্ছেন। কোচিং সেন্টারগুলো শিক্ষকদের লোভ দেখায় যে কোনভাবে প্রশ্ন ফাঁস করে তাদের শিক্ষার্থীদের ভাল ফল করাতে পাড়লে কোচিং ব্যবসা ভাল হবে। টাকা আয়ের পরিমাণটাও বাড়বে। এসব লোভের কারণে শিক্ষকরাই কোচিংয়ের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। শিক্ষকরা প্রশ্ন ফাঁস করে দেয়ায় পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাকক্ষে প্রবেশ করিয়ে তারপর হলে প্রশ্ন সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, কিছু শিক্ষক ক্লাসে না পড়িয়ে বাড়িতে বা কোচিংয়ে পড়ান। যত বড় ভাল শিক্ষক, তত ক্লাসে কম পড়ান। কারণ ক্লাসে ভাল পড়ালে তার ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাবে। শিক্ষা আইন চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়ে বলেন, আইনটি পাস হলে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করতে পারব। কারণ কোন আইন না থাকায় কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় না, তারা আদালতে গিয়ে ছাড় পেয়ে যায়। দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন এর আইন অনুসারে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে কাজ করছে। দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে তা রাষ্ট্রপতি কিংবা মন্ত্রণালয়ে পাঠনো কমিশনের আইনী ম্যান্ডেট। দুর্নীতিমুক্ত ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের জন্যই কমিশন শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে ‘শিক্ষা সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিম’ গঠন করে। এই টিমের সদস্যরা নিরলস অনুসন্ধান করে এই প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছে। প্রশ্ন ফাঁস সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য শিক্ষাবোর্ড, সরকারী বিজি প্রেস, ট্রেজারি এবং পরীক্ষা কেন্দ্রের অসাধু কর্মকর্তারাই দায়ী। সারাদেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পরীক্ষায় যত জায়গায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জড়িত। আমরা কিছু শনাক্তও করেছি। আমাদের শক্ত অস্ত্র আছে। কিন্তু আমরা তো সেই কাজে আসিনি। আমরা চাই, এ দেশের বিশেষ করে ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষা যেন হয়। ড. নাসির আরও বলেন, শিক্ষামন্ত্রীকে আমি অনুরোধ করি ‘আমি এবং আমার বিদ্যালয় দুর্নীতিমুক্ত’ কথাটা প্রতিটি বিদ্যালয় ও কলেজে প্রতিষ্ঠান প্রধান সই করে টাঙ্গিয়ে রাখতে ব্যবস্থা করুন। আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখেছি শিক্ষকদের সঙ্গে সরকারী লোকদের মিটিং হচ্ছে না। এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া দরকার। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ সময় মাউশি মহাপরিচালকের কাছে জানতে চান, বছরের পর বছর যেসব শিক্ষক ঢাকায় আছেন, তাদের বদলি করা হয় না কেন? একই সঙ্গে পাঠ্যপুস্তক ছাপানোয় দরপত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে এনসিটিভি চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চান। দুদক পরিচালক মীর মোঃ জয়নুল আবেদিন শিবলি বলেন, দেশের ২৪টি স্কুলে ৫৫২ জন শিক্ষক ১০ থেকে ৩৩ বছর পর্যন্ত একই স্কুলে আছেন। এ তথ্য মাউশির তথ্য থেকেও পাওয়া যায়। এমনকি যারা বদলি হন তারা অধিকাংশই একই এলাকায় বা মহানগরীতেই থাকেন। এ ধরনের সমস্যার কারণে শিক্ষকরা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।
×