ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁ ও চাঁপাই থেকে ৪২ জঙ্গী সদস্য সংগ্রহ ॥ ;###;রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তামিমের সেকেন্ড-ইন কমান্ড সামাদের তথ্য

প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে শীর্ষ নেতাদের মুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে শীর্ষ নেতাদের মুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল

শংকর কুমার দে ॥ জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা শীর্ষ জঙ্গী নেতা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম আহম্মেদ চৌধুরীর সেকেন্ড-ইন কমান্ড আব্দুস সামাদ ওরফে আরিফ মামু ওরফে আশিক দেশের উত্তরাঞ্চলের নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-এই দুই জেলা থেকে ৪২ জঙ্গী সদস্য সংগ্রহ করেছে। এসব জঙ্গী সদস্যকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কারাগারে আটক জঙ্গী নেতাদের আদালতে আনা-নেয়ার সময়ে প্রিজন ভ্যানে হামলা করে মুক্ত করার পরিকল্পনা করেছিল গ্রেফতারকৃত জঙ্গী নেতা আব্দুস সামাদ ওরফে আরিফ মামু ওরফে আশিক। আব্দুস সামাদ যেসব জঙ্গী সদস্যের নামের তালিকা দিয়েছে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। গ্রেফতারের পর রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের তথ্য দিয়েছে আব্দুস সামাদ ওরফে আরিফ মামু ওরফে আশিক। তার সঙ্গে রিমান্ডে আনা হয়েছে তার শ্বশুর জিয়াদুল ইসলাম এবং মোঃ আজিজুল ইসলাম ওরফে মেহেদী হাসান ওরফে শিশিরকেও। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্র জানান, আব্দুস সামাদ ওরফে আরিফ মামু ওরফে আশিক ও তার দুই সহযোগীকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, নব্য জেএমবির জন্য সংগ্রহ করা ৪২ জঙ্গী সদস্যের নামের তালিকায় আছে- মাস্টার বাবুল, মিলু, দেলোয়ার মিস্ত্রি, আবদুল আউয়াল, রাশেদ, বাদশা ওরফে গোলাম মোক্তার, আল-আমিন, আবদুল আলিম, মেহেদী, ইসমাইল কালু, সুলভ, ডেরহা আবদুল্লাহ, অটোচালক আবদুল্লাহ, ভ্যানচালক সাইদুর, ডার্বজিস হুজুর, সালাম, আরিফ, ছোট লিটন, রফিকুল, রতন, হায়দার, দেলোয়ার মিস্ত্রির ভাতিজা মেহেদী হাসান, সুলতান মাস্টার, খালার জামাই, লেমন, আনসার, গোলাম রসুল, আশ্রাফ, জাকারিয়া, আহসান হাজী, তোজা হাজী, গোলাম আযম, রসুল বক্স, বাবুল মওলা, গোলাম মালো, শরিফুল, জিয়াউর রহমান জিয়া, তাজু, আজিজুল দফাদার ও জাকারিয়া ভেরী। সামাদ মামুর মাধ্যমে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়া পলাতক রবিউল এখন সংগঠনের বড় নেতা হিসেবে জঙ্গী সংগঠনটিতে সক্রিয়। তার মাধ্যমে নব্য জেএমবিতে যুক্ত হয়ে দুর্ধর্ষ জঙ্গী হয়ে উঠেছে মাস্টার বাবুল, রাশেদ ওরফে র‌্যাশ, আবদুল্লাহ ও দেলোয়ার মিস্ত্রি। এর মধ্যে রাশেদ ওরফে র‌্যাশ নামের জঙ্গী রাজধানীর গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার সঙ্গে জড়িত। নামের তালিকা অনুযায়ী যেসব জঙ্গী এখনও পলাতক তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্র জানান, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহম্মেদ চৌধুরীর সেকেন্ড-ইন কমান্ড আব্দুস সামাদ ওরফে আরিফ মামু ওরফে আশিক, তার শ্বশুর জিয়াদুল ইসলাম এবং মোঃ আজিজুল ইসলাম ওরফে মেহেদী হাসান ওরফে শিশির-এই তিন দুর্ধর্ষ জঙ্গীকে বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তাদের ৫ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, কারাগারে আটক নব্য জেএমবির যেসব শীর্ষ জঙ্গী রয়েছে তাদের আদালতে আনা-নেয়ার সময়ে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে মুক্ত করার জন্য পরিকল্পনা করেছিল। সূত্র আরও জানায়, নারায়ণগঞ্জে পুলিশের জঙ্গীবিরোধী অভিযানে নিহত হয় তামিম চৌধুরী। নিহত হওয়ার আগে তামিমের সঙ্গে সামাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা থাকার কারনেই তাকে সেকেন্ড ইন কমান্ড করা হয়। সামাদ জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, তামিমের কারণেই নব্য জেএমবি দ্রুত একটি ভয়ঙ্কর সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তামিম বাংলাদেশে অবস্থানরত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর মারাত্মক ক্ষিপ্ত ছিল এবং তাদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল তামিম চৌধুরী। তামিম তাকে নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে কার্যক্রম সক্রিয় রাখার দায়িত্ব দেয়। তার সংগ্রহে থাকা ৪২ জঙ্গীর অধিকাংশের বাড়ি উত্তরাঞ্চলের নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ওই দুই জেলায়। তার দায়িত্ব ছিল, সদস্য সংগ্রহ করে নানা ধরনের উদ্দীপনামূলক বক্তব্য দিয়ে তাদের চাঙ্গা রাখা। বিভিন্ন জঙ্গী আস্তানায় সে বিশেষত মুসলিম ভূমি প্রতিরক্ষা শীর্ষক বয়ান দিত। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সামাদ জানিয়েছে, সে মূলত ফাজিল পাস করার পর দাওরায়ে হাদিসও পাস করেছে। তবে জঙ্গীবাদে যুক্ত হওয়ার পর থেকে সে বেশিরভাগ সময় উত্তরাঞ্চলে ছদ্মবেশে নির্মাণ ও মাটি কাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। ২০১৩ সালে কানাডা থেকে ফেরত এসে ঝিমিয়ে পড়া পুরনো জেএমবির কিছু সংখ্যক সদস্য নিয়ে নব্য জেএমবি গঠন করে তামিম চৌধুরী। ওই সময় থেকে তামিমের সেকেন্ড ইন কমান্ডের দায়িত্ব পালন করে সামাদ। তবে ২০১০ সাল থেকে উগ্রপন্থায় জড়িত রয়েছে সে। পুরনো জেএমবি সদস্য রিপনের দাওয়াত পেয়ে জঙ্গীবাদের দীক্ষা নেয় সে। রিপন ও সামাদ নওগাঁর আলাদিপুর দারুলহুদা সালাফিয়া মাদ্রাসায় একসঙ্গে পড়াশোনা করত। তখন তাদের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তারা দু’জন পুরনো জেএমবি ছেড়ে তামিম চৌধুরীর নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়।
×