ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাবির পরিবেশ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান গবেষণাগার আর্সেনিক গবেষণায় এক দশক -সালমান শাকিল

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭

রাবির পরিবেশ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান গবেষণাগার আর্সেনিক গবেষণায় এক দশক  -সালমান শাকিল

২০০৭ সালের শেষ সময়। জাপানে পিএইচডি শেষে কর্মস্থল রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে ফিরেছেন গবেষক অধ্যাপক ড. খালেদ হোসেন। বিদেশের মাটিতেই পরিকল্পনা দেশে ফিরে সাধারণ মানুষের সাথে কাজ করবেন। আর যেটি হবে জাতীয় সমস্যার একটি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে কাজ করার মতো আর্সেনিককেই বেছে নিলেন অধ্যাপক। কাজ শুরু করলেন দেশে আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে। প্রয়োজন একটি গবেষণাগারের। গবেষণা কাজে গতি আনতে বিভাগে একটি গবেষণাগার স্থাপনের জন্য সুপারিশও করেন তিনি। বিশ^বিদ্যালয় ও প্রাণ রসায়ন-অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘পরিবেশ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান গবেষণাগার’। বিভাগের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদকে নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেন তিনি। শিক্ষার্থীদেরকেও সম্পৃক্ত করেন গবেষণায়। সবমিলিয়ে একটি তরুণ গবেষক দল। এবার আর্সেনিক কবলিত এলাকাগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে হবে। ছুটে যান বিভিন্ন জেলায়। গিয়েছিলেন যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়ার আর্সেনিক আক্রান্তদের কাছে। মাঠপর্যায়ের গবেষণায় একের পর এক উঠে আসতে থাকে অজানা সব তথ্য। গবেষণায় উঠে আসা তথ্যগুলো প্রকাশিত হয় বিদেশী জার্নালগুলোতে। গবেষণা বলছে, আর্সেনিক বিষক্রিয়ার ফলে শরীরে বিরূপ জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটছে। এদিকে এই বিক্রিয়ার কারণে শরীরের প্রাণ রাসায়নিক পদার্থের হচ্ছে পরিবর্তন। কোনটির পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। আবার কোনটির কমিয়েও দিচ্ছে। ২০০৭ সালে শুরু হওয়া সেই গবেষণার এক দশক পেরিয়েছে। আর্সেনিক নিয়ে এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। মাত্র এক দশকের গবেষণার স্বীকৃতি পেয়েছেন বৈশি^কভাবেও। গবেষণা স্বীকৃতি পেয়েছেন ‘ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্স’ থেকে। পেয়েছেন ইউজিসি পদক। ডিনস পদক। বিদেশ থেকে গবেষণার জন্য শিক্ষার্থীরা আসছেন এখানে। মাত্র তিন মাসের গবেষণায় একজন বিদেশী গবেষক নিজ দেশে সুনাম অর্জন করেছেন বলে জানা যায়। গবেষণাগারের প্রধান গবেষক হিসাবে আছেন অধ্যাপক ড. খালেদ হোসেন। গবেষণার পাশাপাশি আর্সেনিক আক্রান্তদের বিভিন্ন সেবা প্রদান করছেন তারা। গবেষণা সমন্বয়কারী চিকিৎসকরা সাধ্যমতো তাদের সচেতনতা তৈরি ও প্রয়োজনে বিনামূল্যে চিকিৎসা-ওষুধ সেবা প্রদানের চেষ্টা করছেন। এই পর্যায়ে গবেষণাগারের প্রধান ইনভেস্টিগেটর অধ্যাপক ড. খালেদ হোসেন ও গবেষক অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, দু’জন চিকিৎসক, ৪ জন পিএইচডি গবেষক ও গবেষণাকার্যে সাহায্যকারী শিক্ষার্থীরাসহ প্রতিনিয়ত ১৪-১৫ জন শিক্ষার্থী স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে রোগীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক সেবা প্রদানসহ বিভিন্ন কারিগরি সহায়তা করে চলছেন। অধ্যাপক ড. খালেদ বলেন, প্রথম থেকেই আত্মবিশ^াস ছিল। গবেষণার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিটা অনেক বড় পাওয়া। আমার শিক্ষার্থীরা এই গবেষণায় বেশ পরিশ্রম করেন। নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের প্রচেষ্টার সার্বিক মূল্যায়ন হলেই ভাল লাগবে।
×