ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাংস্কৃতিক উৎসব

‘বিজয় পতাকা হাতে চলি অবিরাম’

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭

‘বিজয় পতাকা হাতে চলি অবিরাম’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌষের রোদমাখা বিকেলে আবার জেগে উঠলো তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান ও বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ঐতিহাসিক প্রান্তরে বয়ে গেল প্রাণের প্রবাহ। বাঙালীর বিজয় ও পাকবাহিনীর পরাজয়ের সাক্ষ্যবহ আঙ্গিনাটি বর্ণিল হলো বিজয় দিবসের আয়োজনে। কণ্ঠশিল্পীর গানের সুরে আর নৃত্যশিল্পীর নাচের মুদ্রায় প্রকাশিত হলো স্বদেশপ্রেম। কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করা হলো এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার স্বাধীনতা এনে দেয়া শহীদদের। অহংকারের সঙ্গে উচ্চারিত হলো একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিসেনাদের কথা। শিল্পের আলোয় উঠে এলো বাঙালী জাতিসত্তার গৌরব গাথা। ব্যক্ত হলো স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ভালোবাসা। আর বিকেল গড়ানো সন্ধ্যায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকের মাঝে উদ্দীপনা ছড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এভাবেই বর্ণিল রূপ পায় ‘বিজয় পতাকা হাতে চলি অবিরাম’ শিরোনামের অনুষ্ঠানটি। ৪৬তম বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। উদ্যানের স্বাধীনতাস্তম্ভের গ্লাস টাওয়ারের পাশে অনুষ্ঠিত হয় বিজয় দিবসের এ আয়োজন। পরিবেশনা শুরু হয় আমার সোনার বাংলা নামের প্রাণের স্পন্দন তোলা গানের সুরে। জাতীয় সঙ্গীতে কণ্ঠ মেলায় শিল্পকলা একাডেমির একঝাঁক শিল্পী। এরপর সুরের আশ্রয়ে মঙ্গলের বার্তা ছড়িয়ে দেয় একাডেমির শিশু শিল্পীরা। রবীন্দ্রনাথকে আলিঙ্গন করে কচি কণ্ঠগুলো গেয়ে শোনায় ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’। পঞ্চকবির আরেক কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বাণী কণ্ঠে খুদে শিল্পীরা শোনায় ‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’। গানের পরে নৃত্য পরিবেশনাতেও প্রকাশিত হয় স্বদেশেরই বন্দনা। ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’ ও ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল’ গানের সুরে নাচ করে একাডেমির একঝাঁক শিল্পী। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন দীপা খন্দকার। সুচারুরূপে অনুষ্ঠান সঞ্চালনার মাঝে উপস্থাপক রোকেয়া প্রাচী তুলে ধরেন সম্প্রতি বিশ^ প্রামাণ্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণটি সম্পর্কে বিশ^ নেতৃবৃন্দের মূল্যায়ন। সেখানে রাজনীতির কবিতা হয়ে ওঠা ওই ভাষণটি সম্পর্কে উঠে আসে কিংবদন্তি ফিদেল ক্যাস্ট্রো ও নেলসন ম্যান্ডেলার চমৎকার মূল্যায়ন। অনুষ্ঠানে গান শুনিয়েছেন স্বাধীন বাংলা বেতারের কণ্ঠযোদ্ধা শাহীন সামাদ। বিশিষ্ট এই কণ্ঠশিল্পীর কণ্ঠে গীত হয় ‘সকল গানের উৎস এ দেশ বাংলাদেশ’। দ্বিতীয় গানে শিল্পী শৃঙ্খল ভেঙ্গে মুক্তির পথে এগিয়ে চলার বার্তা দেন। গেয়ে শোনান ‘এই শিকল পরা ছল, মোদের এই শিকল পরা ছল/এই শিকল পরেই তোদের করবো রে বিকল’। তাঁর পরিবেশিত তৃতীয় গানের শিরোনাম ছিল ‘মানবো না বন্ধন মানবো না, মানবো না শৃঙ্খল মানবো না’। রাত পর্যন্ত চলা আয়োজনটিতে দর্শক-শ্রোতার মন রাঙিয়েছেন লোকগানে বাংলার অহংকার নন্দিত কণ্ঠশিল্পী মমতাজ। শ্রোতাদের উচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে গান শুনিয়েছে ব্যান্ডদল দলছুট ও সোলস। বিজয় দিবস উদযাপনের এ আয়োজনে ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের পরিবেশনা পর্ব। এ পর্বে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাদায়ী গান শুনিয়েছেন ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, রফিকুল আলম ও তিমির নন্দী। বঙ্গবন্ধুকে নিবেদন করে তিমির নন্দী গেয়েছেনÑ‘শোনো, একটি মুজিবুরের থেকে/লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি’। ত্রিপুরা ভাষায় দেশাত্মবোধক গান শুনিয়েছেন পায়েল ত্রিপুরা। এই শিল্পী আরও শুনিয়েছেন ‘আমার মন পাখিটা যায়রে উড়ে যায়, ধান শালিকের গায়...’। ঢাকা সাংস্কৃতিক দলের শিল্পীদের গাওয়া গানের শিরোনাম ছিল ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলো যারা’ ও ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পারি দিবো রে...’। পরিবেশিত হয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিল্পীদের পরিবেশিত ময়ূর ও ওয়াংগালা নাচ। জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিল্পীদের গাওয়া গানের শিরোনাম ছিল ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে...’। সামিনা হোসেন প্রেমার পরিচালনায় পরিবেশিত হয়েছে রায়বেশে নৃত্য। এছাড়া অনিক বোসের পরিচালনায় ‘জ¦লে ওঠো বাংলাদেশ’ গানের সুরে পরিবেশিত হয়েছে সমবেত নৃত্য। ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’ শিরোনামের গান শুনিয়েছেন হৈমন্তী রক্ষিত। শত কণ্ঠে দেশের গান শুনিয়েছেন শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। সন্ধ্যার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সঙ্গী হন এ আয়োজেনের। বক্তব্য রাখার পাশাপাশি টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন ৫ জন দর্শকের সঙ্গে। এছাড়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি সচিব মো. ইব্রাহিম হোসেন খান।
×