ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজপথে লাখো মানুষ ;###;সাভার স্মৃতিসৌধে ভোর না হতেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শুরু ;###;বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল

দিনটি ছিল নতুন প্রজন্মের

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭

দিনটি ছিল নতুন প্রজন্মের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশে এদিন সব ফুল ফুটেছিল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধায়। চারদিকে বিজয়োৎসব। লাল-সবুজের বিজয় নিশান আর ফুল হাতে জনস্রোত সর্বত্র। মুখে বিজয়ের গান আর যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার ও মৌলবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শপথ। চারদিকে নতুন প্রজন্মের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস। বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের জন্মদিনে শনিবার অন্যরকম এক স্বস্তি ও চেতনায় বিজয়ের উল্লাসে মেতেছিল পুরো জাতি। এক নতুন রূপে ও চেতনায় এবার বিজয় দিবস পালন করল দেশবাসী। নতুন প্রজন্মের এমন বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস অনেকদিনই দেখা যায়নি। রাজাকার-আলবদর ও স্বাধীনতাবিরোধী মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের শপথে একাত্তরের মতোই যেন গর্জে উঠেছিল তারা। বিজয়ের ছেঁচল্লিশ পেরিয়ে সাতচল্লিশ বছরে পদার্পণের দিনে দেশবাসী যেন দ্বিতীয় যুদ্ধজয়ের আনন্দেই ছিল মাতোয়ারা। আর সেই দ্বিতীয় যুদ্ধজয় হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও কয়েক রাজাকার শিরোমণির ফাঁসির রায় কার্যকর। এ কারণে এবারের বিজয় দিবসে কোটি মানুষের মনে ছিল প্রশান্তি আর স্বস্তির হাসি। আর এবারের বিজয় দিবসের প্রতিটি অনুষ্ঠানে মানুষের কণ্ঠে নতুন সেøাগান। তা হলো জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ, পরাজিত পাকিস্তানীদের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন এবং সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবেলা করে রাজাকারমুক্ত অসাম্প্রদায়িক নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সূচনার। মহান বিজয় দিবসে অহঙ্কার আর অর্জনের বিজয়োল্লাসে মেতেছিল পুরো দেশ। রক্তের ঋণ শোধ করার গর্ব, নিষ্ঠুরতার বিচার করতে পারার তৃপ্তি। রাজাকার-আলবদর ও স্বাধীনতাবিরোধী মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের শপথে একাত্তরের মতোই যেন গর্জে উঠেছিল তারা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির গণজাগরণ আর স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের তীব্র ঘৃণা ও গণধিক্কার ভিন্নমাত্রা যোগ করেছিল এবারের মহান বিজয় দিবসে। বিজয়োৎসবে মাঠে নামা কোটি মানুষের একাত্তরের বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত শির আর চোখে ছিল একাত্তরের ঘাতক রাজাকার-আলবদর-যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দোসরদের প্রতি তীব্র ঘৃণার আগুন। এসব প্রমাণ করে দেয়, সেই রক্তক্ষয়ী ৯ মাসের প্রতিটি ক্ষণ কৃতজ্ঞ জাতি এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারে না, ভোলেনি। আর ভুলবেও না। কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি গভীর শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিয়েছে ত্রিশ লাখ শহীদের স্মৃতির মিনার। বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসে সরকারের কাছে মানবতাবিরোধী সব অপরাধীর বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁরা বলেছেন, বিজয় দিবসের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে প্রয়োজনে আবারও তাঁরা যুদ্ধে যেতে রাজি আছেন। পাশাপাশি তরুণদেরও এই চেতনা লালন করে দেশকে এগিয়ে নেবার আহ্বান জানান তাঁরা। বিজয় দিবসে গোটা দেশই মেতে উঠেছিল বাঁধভাঙ্গা বিজয় উৎসবে। নেচে-গেয়ে উঠেছিল বিজয়ের আনন্দে। বিজয়ের আনন্দ আর নতুন প্রজন্মের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। বিজয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হতে রাজপথে নেমে আসা লাখ লাখ শিশু-কিশোর থেকে আবালবৃদ্ধ-বনিতার চোখে মুখে যেমন ছিল বিজয়ের আনন্দ, ঠিক তেমনি ছিল একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে ঘৃণা-ধিক্কার আর জামায়াত নিষিদ্ধের প্রচ- দাবি। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের পর রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের শপথ নিয়ে শনিবার বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্তি উদ্যাপন করেছে বাংলাদেশ। তবে আনন্দমুখর এ উৎসবে বরাবরের মতো এবারও অন্তঃস্রোত বয়ে গেছে স্বজন হারানোর বেদনা। বিজয় দিবসের নানা আয়োজন তরুণ প্রজন্মকে দোলা দিয়েছে, স্মৃতির ঝাঁপিতে নাড়া দিয়েছে ইতিহাসের সেদিনের সাক্ষীদের। বাংলাদেশের সোঁদাগন্ধময়ী মাটির যে হৃদস্পন্দন সেখানে এই বাংলার প্রতিটি সন্তানের ভিন্ন মাত্রিক সম্পর্ক দেশপ্রেমের দর্শনকে ক্রমাগত শাণিত করেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে ওঠা রাজাকার-আলবদরমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের এই দাবি বিজয়ের দিনে ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ে গোটা দেশে। এভাবেই স্বস্তির পরিবেশে মুক্ত আকাশে মুক্ত বিহঙ্গের মতো লাখো জনতার বাঁধভাঙ্গা আনন্দ উচ্ছ্বাস, মহান শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে বুধবার জাতি পালন করল মহান বিজয় দিবস। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অলিগণ্ডি পাড়া-মহল্লা, রাজপথে বিনা বাধায় দিনভর বেজেছে জাতির জনকের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের বজ্রকঠিন ভাষণের রেকর্ড আর কালজয়ী দেশাত্মবোধক গান। বাঙালী জাতি আনন্দ, বেদনা আর বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লাখো শহীদকে, স্বাধীন রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। দিবসটির মূল অঙ্গীকারই ছিল পরাজিত অপশক্তি ও তাদের দোসরদের সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত রুখে দিয়ে জঙ্গীবাদমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ-স্বনির্ভর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার। রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর দৃষ্টিনন্দন-মনোলোভা কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানমালা ছিল উল্লেখ করার মতো। বিকেলে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে এক সংবর্ধনার আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিজয় দিবসের কেক কাটেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যা সাতটায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সকালে রাজধানীর হাতিরঝিলে বিভিন্ন বেসরকারী সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় সাইকেল র‌্যালি। এছাড়া শিখা চিরন্তনে শহীদদের আত্মদানের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন ও তরুণ প্রজšে§র হাতে পতাকা হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম। বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে হয়েছে ছায়ানটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিবসটি ঘিরে আলোচনা, সেমিনার, বক্তৃতা ও যুক্তিতর্কসহ সবকিছুতেই ঘুরেফিরে প্রাধান্য পায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়ার স্বস্তি। জঙ্গীবাদ-মৌলবাদ, ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও দুর্নীতিমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন এক জন্মভূমির স্বপ্নের কথাও ধ্বনিত হয়েছে সর্বত্র। রাজধানীসহ সারাদেশের রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, দোকানপাট, যানবাহন এবং বাসাবাড়িতে পত পত করে উড়েছে লাখো শহীদের রক্তস্নাত লাল-সবুজ পতাকা। ছোট ছোট কাগজ বা কাপড়ের তৈরি পতাকা হাতে নিয়ে বা বুকে-পিঠে লাগিয়ে শিশু-কিশোররা বেরিয়েছিল ঘরের বাইরে। কেউ কেউ মুখে এঁকেছিল লাল-সবুজ পতাকা। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় তিন বছর আগেও দেশজুড়ে পরিকল্পিত সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও তা-ব চালালেও শনিবার বিজয় দিবসে কোথাও সেই জামায়াত-শিবিরের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত নতুন প্রজন্মের সাহসী পথচলায় এবারের বিজয় দিবসে রাজনৈতিক বিতর্ক বা স্বাধীনতা বিরোধীদের কোন আস্ফালন ছিল না। তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় সূর্যোদয়ের সময় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে শনিবার ভোরে বিজয় দিবসের কর্মসূচী শুরু হয়। ভোর থেকেই সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং ধানম-ির বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে নামে জনতার ঢল, সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। অন্যদিকে রাজধানীজুড়ে বিজয় দিবস ঘিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা। পথে পথে সংগীত, নাটকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকথা এবং সব কর্মসূচীতে স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতি ঘৃণা ও ধিক্কার প্রকাশ পায়। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শনিবার ছিল সরকারী ছুটি। শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালা ঘুরে ঘুরে উপভোগ করে। রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় এবং জেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক মোহনা জাতীয় ও উৎসব পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। বেতার-টেলিভিশনে বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান এবং সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে দিবসটির মাহাত্ম তুলে ধরা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে হাসপাতাল, শিশুসদন, কারাগার ও এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। এছাড়া জাতির সুখ, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মোনাজাত। মন্দির, গির্জা, প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল ॥ সৌমিত্র মানব সাভার থেকে জানান, ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেক বার’, ‘জামায়াত-শিবির-রাজাকার, এ মুহূর্ত্বে বাংলা ছাড়’, ‘স্বাধীন এ বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁই নাই’, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদ রুখে দাঁড়াও’, ‘বিজয় দিবসের অঙ্গীকার, রুখতে হবে জামায়াত-শিবির-রাজাকার’. ‘সফল হোক সফল হোক, বিজয় দিবস সফল হোক’ শনিবার ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্তিতে আগত অগণিত মানুষের বলিষ্ঠকণ্ঠে উচ্চারিত এ সকল ধ্বনিতে মুখরিত ও তাদের পদভারে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। আগতদের বিন¤্র শ্রদ্ধায় এদিন ’৭১-র মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের গভীরভাবে স্মরণ করা হয়। হাতে লাল-সবুজের পতাকা আর রং-বেরঙের ফুল, হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসা নিয়ে আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে এদিন সকাল থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে। দেশের শ্রেষ্ঠ সূর্য সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসার ফুলে ফুলে ঢেকে যায় জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি। স্মৃতিসৌধে লাখো মানুষের জমায়েতে ছিল বুড়ো থেকে শিশু পর্যন্ত সব বয়সী মানুষ। ছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা। সকলের চোখে মুখে ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে দৃপ্ত শপথ। বিজয়ের আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ঘিরে গোটা সাভার যেন পরিণত হয় উৎসবের নগরীতে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এদিন ভোরে শীতের মধ্যে কুয়াশায় ঘেরা স্মৃতিসৌধের সামনে জড়ো হয় হাজার হাজার জনতা। সকালের প্রথম প্রহরে ভোর ছয়টা ৩৫ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে লাখো শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল তাঁদের গার্ড অব অনার প্রদান করেন। বিউগলে বেঁজে ওঠে করুণ সুর। এর আগে ভোরে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচী সূচীত হয়। পরে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। প্রায় একই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে লাখো শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা। এরপর আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে দলের পক্ষে ফুল দেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন। এরপর তাঁরা স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করেন। এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, কূটনৈতিক নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান, মুক্তিযোদ্ধা এবং পদস্থ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনীতিকরা শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে স্মরণ করেন একাত্তরের বীর শহীদদের। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এ সময় মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের শ্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে ঢল নামে লাখো মানুষের। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী নারী-পুরুষের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো স্মৃতিসৌধ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। লাল-সবুজের রঙে নিজেদের রাঙিয়ে নিয়ে আসা জনতার ¯্রােত বিজয়ের উৎসব-মিছিলে রূপ নেয়। হাতে লাল-সবুজের পতাকা, মুখে ‘জয়বাংলা’ সেøাগানে মুখরিত হয়ে ওঠে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকা। ‘মহান বিজয় দিবস অমর হোক, মহান এ দিবসে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা’- ইত্যাদি লেখা ব্যানার নিয়ে হাজারো জনতার দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে শ্রদ্ধা জানান জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। বেলা সোয়া এগারোটার দিকে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এ সময় তাঁর সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, আমান উল্লাহ আমানসহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল, গণফোরাম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা লীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, দুর্নীতি দমন কমিশন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ও এর হলসমূহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় ও এর হলসমূহ, সাভার গণবিশ^বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়, এডাব, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, একাত্তরের ঘাতক-দালার-নির্মূল কমিটি, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক কমান্ড, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন, সাব-এটিটরস কাউন্সিল, সাভার প্রেসক্লাব, আশুলিয়া প্রেসক্লাব, সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি), বঙ্গবন্ধু কৃষি পরিষদ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), বাংলাদেশ খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশন, জাতীয় পার্টি, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতি, ঢাকা জেলা প্রশাসক, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার, সড়ক বিভাগ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ অজ¯্র সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অপরদিকে, বিজয় দিবস উপলক্ষে সর্বস্তরের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দেখার সুযোগ করে দেয় ঢাকা জেলা পুলিশ। স্মৃতিসৌধে আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দেয়ার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে এলইডি জায়ান্ট স্ক্রীন। সেখানে প্রদর্শিত হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য চিত্রসহ বঙ্গবুন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ, বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি, কুচকাওয়াজের দৃশ্য ও উন্নয়নের চিত্র। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল ॥ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার সকালে জনতার ঢল নেমেছিল রাজধানীর ধানম-ির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই জনতার ঢল নামে সেখানে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাজধানীর বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মিছিল করে ৩২ নম্বর সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের মোড়ে জমায়েত হতে থাকে। সকাল ৭টার মধ্যেই সর্বস্তরের মানুষের ভিড়ে গোটা এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় তিনি সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ভবন এলাকা ত্যাগ করার পর সাধারণ মানুষের জন্য স্থানটি উš§ুক্ত করে দেয়া হয়। এরপর দিনভর অজস্র সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ অজস্র সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানায়। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালবাসার ফুলে ফুলে ভরে যায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। রাষ্ট্রের জন্মদিনে মিলন মেলা বঙ্গভবনে ॥ বাঙালীর জাতিরাষ্ট্র গঠনের জন্মযুদ্ধে বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্তিতে সুরের মূর্ছনা আর নানা শ্রেণী পেশার মানুষের পদচারণায় শনিবার মুখর ছিল বঙ্গভবন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিক, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বিদেশী কূটনীতিক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সমাজের নানা পেশার মানুষের পদচারণা ছিল রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবনে। বিজয় দিবসে বরাবরের মতো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, যা মূলত পরিণত হয় মিলন মেলায়। বরেণ্য শিল্পীদের দেশাত্মবোধক ও লোকগান, শিশুশিল্পী আর সশস্ত্র বাহিনীর বাদক দলের সঙ্গীতের মূর্ছনা এই আয়োজনের স্বাতন্ত্র্য এনে দিয়েছিল। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। বিকেল সাড়ে তিনটায় স্ত্রী রাশিদা খানমকে সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থল বঙ্গভবনের মাঠে আসেন রাষ্ট্রপতি। এর কিছুক্ষণ আগে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি ও তার স্ত্রী মঞ্চে আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের সদস্যসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন এবং তাদের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন। তারা ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালদ্বীপের ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্যদের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে মাঠের ভিভিআইপি এনক্লোজারে বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কেক কাটেন। কেক কাটার পর তারা মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিদেশী অতিথি, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানসহ সমারিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বঙ্গভবনের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাবেক বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, সরকারী কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ, জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান বিএফইউজের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়, আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান, বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, কলামিস্ট আবুল মকসুদ প্রমুখ। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাটসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য শিল্পী রফিকুল আলম, আবিদা সুলতানা, দিনাত জাহান মুন্নী, নিশিতা বড়ুয়া, তপন চৌধুরী ও হায়দার হোসেন গান গেয়ে শোনান। এছাড়া শিশু একাডেমির শিশু শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে লাল-সবুজ রং মিশিয়ে পোশাকের ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া নারীদের মধ্যে একটা বড় অংশই জাতীয় পতাকার আদলে লাল-সবুজ রঙের শাড়ি পরে অনুষ্ঠানে অংশ নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানমন্ত্রীর বিজয়ের উপহার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৭তম বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানাতে প্রধানমন্ত্রী পূর্ববর্তী অনুষ্ঠানের মতো এবারও নগরীর মোহাম্মদপুরের গজনবী রোডে অবস্থিত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফুল, ফল এবং মিষ্টি পাঠিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী ব্যক্তিগত সচিব (এপিএস) এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর এবং সহকারী প্রেস সচিব ইমরুল কায়েস শনিবার বিকেলে এসব উপহার সামগ্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে হস্তান্তর করেন। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ ও পহেলা বৈশাখের মতো প্রতিটি জাতীয় দিবসে তাদের স্মরণ রাখার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তারা মোহাম্মদপুরে ১৩তলা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১ আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণসহ তাদের পুনর্বাসনে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর স্মারক ডাকটিকেটের অবমুক্ত ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৪৭তম বিজয় দিবস উপলক্ষে ১০ টাকার স্মারক ডাকটিকেট ও উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে পাঁচ টাকা মূল্যমানের একটি ডাটা কার্ড এবং ডাক বিভাগের ইস্যুকৃত একটি স্মারকগ্রন্থ অবমুক্ত করেন। শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে এ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে এই ডাকটিকেট, খাম ও স্মারকগ্রন্থের অবমুক্ত করা হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মোঃ আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার ও ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার ম-ল। বিজিবি ॥ যথাযোগ্য মর্যাদা ও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহান বিজয় দিবস উদযাপন করেছে। ঢাকার পিলখানা বিজিবি সদর দফতরে সীমান্ত গৌরব স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তক অর্পণ করেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেনসহ বাহিনীর সকল কর্মকর্তা ও সৈনিকবৃন্দ। সারাদেশে বিজিবির সকল ইউনিটে প্রীতিভোজ, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, বিজিবির মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। পুলিশ ॥ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক। শনিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে শহীদ পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান তারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানোর সময় পুলিশের পক্ষ থেকে শহীদদের উদ্দেশে সশস্ত্র সালাম প্রদর্শন করা হয়। এ সময় বিওগলের করুণ সুর বেজে ওঠে। পরে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার ও পুলিশ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আছাদুজ্জামান মিয়া এবং র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×