ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আরএএস প্রযুক্তিতে মাছ চাষ

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭

আরএএস প্রযুক্তিতে মাছ চাষ

বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিক্রমায় ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের সৃজনশীল তৎপরতা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এক্ষেত্রে তৈরি পোশাক শিল্প অনন্য নজির হয়ে দেদীপ্যমান। কৃষিক্ষেত্রে নিজস্ব উদ্ভাবনা ও স্থানীয় প্রযুক্তির পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ের ফলে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এভাবে দেশের প্রতিটি উৎপাদন খাত এগিয়ে চলছে। আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ঘরের ভেতর মাছ চাষ করে পুকুরের চেয়ে প্রায় ৩০ গুণ বেশি উৎপাদন সম্ভব। অর্থাৎ এক ঘনমিটার পুকুরে দুই কেজি মাছ হলে আরএএস (রিসাকুলেটিং এ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম) পদ্ধতিতে ৫০ থেকে ৬০ কেজি মাছ উৎপাদন করা যায়। বাংলাদেশে এ প্রযুক্তিতে প্রথম মাছ চাষ শুরু করেন ‘ফিশ হ্যাচারি ও কালচার ফার্ম এ্যাগ্রো থ্রির স্বত্বাধিকারী এবিএম শামসুল আলম বাদল। এ প্রযুক্তিতে চাষ করা যাবে শিং, মাগুর, গুলশাসহ নানা জাতের মাছ। প্রতি ঘনমিটার পানিতে পুকুরে যেখানে উৎপাদন হয় ১ থেকে ২ কেজি মাছ, আরএএস প্রযুক্তিতে তা বেড়ে দাঁড়াবে ২০ থেকে ৬০ কেজি পর্যন্ত। ব্যবহার করতে হবে না ক্ষতিকারক কোন রাসায়নিক। ঘরের ভেতর বসানো যায় বলে, মাছ থাকে সুরক্ষিত। অপচয়ের সুযোগ কম তাই খাবারও লাগে কম। মেকানিক্যাল ফিল্টার ও বায়ো ফিল্টার ব্যবহার করায় পানির পরিমাণ যেমন কম লাগে, তেমনি ঘাটতি পড়ে না অক্সিজেনেও। মিঠা পানির মাছ উৎপানকারী দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে বাংলাদেশ। আর এ প্রযুক্তি সফলভাবে ব্যবহার হলে শহরে চাষ করা যাবে দেশীয় প্রজাতির নানা মাছ। এ প্রযুক্তিতে প্রথমে একটি ট্যাঙ্কের এ পরিষ্কার পানি পাম্প দিয়ে বায়োফিল্টারে তোলা হয়। মাছের বৃদ্ধি যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য পানি পরিশোধন করা হয়। ‘সার্বক্ষণিক ফিল্টারিংয়ের ফলে পানি পরিশোধন হয় আর পরিশোধিত পানির ১০ শতাংশ বর্জ্য হিসেবে বের হয়ে যায়। এটি আবার জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। মাছের খাবার নষ্ট হয় না। সাধারণত পুকুরে অক্সিজেনের স্বল্পতা থাকে, এখানে সে অসুবিধা নেই। ’ ৮০ শতাংশ পানি সম্পূর্ণ শোধন করে পুনর্ব্যবহার করা যায়। মেকানিক্যাল ও বায়োপরিশোধন প্রক্রিয়ায় মাছের বর্জ্য, খাদ্যাবিশেষ, দ্রবীভূত এমোনিয়া, কার্বন ডাই-অক্সাইড এসব ক্ষতিকারক গ্যাস ৯০ শতাংশ পর্যন্ত অপসারণ সম্ভব। এসব উপাদান মাছের বৃদ্ধিতে ক্ষতিকারক। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যতœআত্তি হয় বলে মাছের দ্রুত বৃদ্ধি হয় এবং মাছের গুণগত মান হয় উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত। নোংরা খাবার নেই বলে মাছের গন্ধ প্রাকৃতিক থাকে এবং দুর্গন্ধ থাকে না। শিং, গুলশা ও পাবদা চার মাসের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। তখন প্রতিটি ট্যাঙ্কে প্রায় ছয় শ’ কেজি মাছ পাওয়া যায় । মাত্র পাঁচ সপ্তাহে মাছ ওজনে বাড়ছে ১০ গ্রামের বেশি। এই প্রযুক্তিতে মাছের মৃত্যুহার নেই বললেই চলে। লাখে দুয়েকটা মারা যেতে পারে। আর দেখাশোনার জন্য দুজন লোকই যথেষ্ট। বাংলাদেশে মৎস্য উৎপাদনে আমূল সাফল্য অর্জিত হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে এক যুগ ধরেই বাংলাদেশ শীর্ষ পাঁচে অবস্থান করেছে। সংস্থাটির সর্বশেষ প্রতিবেদন ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ এ্যান্ড এ্যাকুয়াকালচার’ অনুযায়ী মাছ উৎপাদনে চতুর্থ বাংলাদেশ। বর্তমানে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে চীন, ভারত ও মিয়ানমার। সরকার মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলে অদূর ভবিষ্যতে এ খাতে প্রথম হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিশেষ করে আরএএস পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ শুরু হলে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে রফতানির সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হবে। এক্ষেত্রে মৎস্য খাতে সহজ শর্তে ঋণের পাশাপাশি পর্যাপ্ত হিমাগার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এ খাতে উন্নয়নের বাধাবিপত্তিগুলো দূর করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা জরুরী। অর্থনীতি ডেস্ক
×