ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখছে সব প্রতিপক্ষ

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখছে সব প্রতিপক্ষ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এএফসি অ-১৪ (আঞ্চলিক জোন) আসরে যথাক্রমে তাজিকিস্তান ও নেপালে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন কখনই বলে যাননি যে তার দলই চ্যাম্পিয়ন হবে। কোনরকম অতি আত্মবিশ্বাসী হইনি, করেননি দম্ভ। বারবার বলেছিলেন, ভাল খেললে তাদের শিরোপা জেতার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কেননা তখন যে খেলোয়াড়দের তিনি পেয়েছিলেন তারা ছিল অনেক সম্ভাবনাময়। তাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। এরপর এএফসি অ-১৬ আসরের (বাছাইপর্ব) বেলাতেও একই চিত্র। তবে এখন দৃশ্যপট ভিন্ন। এই প্রথম ছোটন ঘোষণাই দিয়েছেন এবারের সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে তার দল চ্যাম্পিয়ন হবে। এটা কি দম্ভ, নাকি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস? না, কোনটিই নয়। ছোটনের এমনটা বলার কারণ হচ্ছে বিগত সময়ে তার দলের ওই তিনটি আসরের নৈপুণ্য। প্রতিটিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ দল। আর সে জন্যই তিনি সাহস পেয়েছেন এবার এমনটি বলার। মজার ব্যাপারÑ অংশ নেয়া অতিথি দলগুলোর প্রতিটি দলও বলছে একই কথা, ‘এবারের আসরে বাংলাদেশই ফেভারিট।’ আজ রবিবার থেকে কমলাপুর স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই আসর। এ উপলক্ষে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সম্মেলন কক্ষে। এতে উপস্থিত হন অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত ও ভুটান দলের কোচ ও অধিনায়করা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাফুফের হেড অব মিডিয়া আহসান আহমেদ অমিত। ২৫ দিনের অনুশীলন করে ঢাকায় এসেছে ভারত দল। স্কিল বাড়াতে বয়েস টিমের সঙ্গে তিনটি অনুশীলন ম্যাচও খেলেছে। এএফসি অ-১৪ আসরের ৫-৬ ফুটবলার আছে এই দলেও। দলের কোচ মায়মল রকি বলেন, ‘আমরা এই আসরে এগুতে চাই ম্যাচ বাই ম্যাচ। তাই প্রথম ম্যাচটি (বিপক্ষ ভুটান) খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘বাংলাদেশ খুবই ভাল দল। শেষবাবের মোকাবেলায় তাদের কাছে আমরা হেরেছি। তবে এখানে আসা সবদলই সাফল্য পাওয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশ ভাল করছে। আশাকরি, এবারের ফাইনালেও আমরা তাদের মুখোমুখি হব।’ ভুটানের কোচ সুন জি লিও বলেন, ‘এই প্রথম বাংলাদেশে এলাম। এই টুর্নামেন্টের জন্য আমরা খুব বেশি প্রস্তুতি নিতে পারিনি। প্রতিপক্ষ সম্পর্কে যতটুকু জানি তারা আমাদের চেয়ে শক্তিশালী এবং ভাল। যেহেতু ভুটানের মেয়েদের ফুটবল এগিয়ে চলছে, সেহেতু এই টুর্নামেন্ট আমাদের মেয়েদের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জনের ভাল সুযোগ, যেটা তাদের সামনের দিকে এগিয়ে নেবে।’ নেপালের কোচ গঙ্গা গুরং বলেন, ‘কোন সন্দেহ নেই, এই আসরে বাংলাদেশই সবচেয়ে শক্তিশালী। তারাই ট্যাকটিক্যালি সবচেয়ে এগিয়ে। এই টুর্নামেন্ট সামনে রেখে আমরা মাস দেড়েক প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের দলের সবাই নতুন। কিন্তু আমরাও প্রথম ম্যাচে তাদের বিপক্ষে সেরা ফল পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’ যদিও সাফের মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে নামার আগে বিদেশী কোন শক্তিশালী দলের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে ফুটবলপ্রেমীরা মনে করছেন এই আসরে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে আরও অন্তত তিনটি কারণ আছে। সেগুলো হলো : ১. স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা। নিজেদের পরিচিত মাঠ, আবহাওয়া, দর্শক ... সবকিছুরই পূর্ণ সুবিধা নিয়ে মাঠে নামবে ছোটনের শিষ্যারা। ২. টিম কম্বিনেশন। কোচ ছোটনের অধীনে এই দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই দীর্ঘ চার বছর ধরে জাতীয় দলসহ বিভিন্ন জাতীয় বয়সভিত্তিক দলে খেলেছে। এক সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে খেলার সুবাদে ছোটন যেমন তার খেলোয়াড়দের খেলা সম্পর্কে ভালভাবে অবগত, তেমনি ফুটবলাররাও পরস্পরের সঙ্গে খেলার সুবাদে পারস্পরিক জানাশোনা ও বোঝাপড়া খুবই ভাল। মাঠে এর সুপ্রভাব পড়েছে তিনবার (দু’বার অ-১৪ এবং একবার অ-১৬ আসরের শিরোপা জয়)। এবারও পড়ার সম্ভাবনা খুবই প্রবল। ৩. ফিটনেস, কৌশল ও আত্মবিশ্বাসের অভাবনীয় উন্নতি। একটা সময় ছিল যখন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগেই মানসিকভাবে হেরে যেত বাংলাদেশের মেয়েরা। আর ম্যাচে খেলতো ডিফেন্সিভ স্টাইলে। কিন্তু এখন সময়ের পরিক্রমায় এর উল্টোটাই ঘটছে অহরহ। কৌশল ও ফিটনেসের জায়গাটিতে ছোটনের দলের উন্নতি চোখে পড়ার মতো। এখন দেখার বিষয়, মেয়েদের বয়সভিত্তিক ফুটবলে চতুর্থ সাফল্য অর্জন করে দ্রোণাচার্য ছোটন আরেকবার মেতে উঠতে পারেন কি না বিজয়ের উল্লাসে। বাংলাদেশ দল ॥ গোলরক্ষক : মাহমুদা আক্তার, রূপনা চাকমা, সাগরিকা; ডিফেন্ডার : আঁখি খাতুন (সহ-অধিনায়ক), নাজমা, আনাই মগিনি, নিলুফার ইয়াসমিন নীলা, দীপা খাতুন, রুনা আক্তার, রুমি আক্তার; মিডফিল্ডার : মারিয়া মান্ডা, মনিকা চাকমা, তহুরা খাতুন, লাবণী আক্তার, শামসুন্নাহার, মুন্নী আক্তার, সোহাগী কিসকু; ফরোয়ার্ড : আনুচিং মগিনি, শামসুন্নাহার, মারজিয়া, সাজেদা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা, সুলতানা পারভীন; কোচ : গোলাম রব্বানী ছোটন, সহকারী কোচ : মাহাবুবুর রহমান লিটু।
×